ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

তোয়ালে বনাম গামছা || আহসান হাবীব

আহসান হাবীব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তোয়ালে বনাম গামছা || আহসান হাবীব

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

একটা জিনিস কেউ কি খেয়াল করেছেন কখনো? সব বড় বড় কর্মকর্তা আমলা-মন্ত্রী-মিনিস্টার সবাইকে যখন টিভিতে দেখি কথা বলছেন বা সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন তখন তারা যে রিভলভিং চেয়ারে বসেন সেই চেয়ারের পিছনে তোয়ালে দেয়া থাকে। অবশ্যই দামি তোয়ালে, কিন্তু কেন?

আমার পরিচিত একজন আছেন যিনি চলমান উইকিপিডিয়া! তার কাছে যে কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায়, গুগোল সার্চ করতে হয় না। একদিন তাকে আমি বললাম, ‘ আচ্ছা, আপনার কী ধারণা সব বড় বড় কর্মকর্তাদের চেয়ারে কেন তোয়ালে দেয়া থাকে? তোয়ালের জায়গা হচ্ছে বাথরুম। বাথরুমের জিনিস কেন বড় কর্মকর্তাদের চেয়ারে ঝোলে?’
তিনি বললেন, ‘আরে তাও বুঝলা না। এত সহজ ব্যাপার।’
‘সেই সহজ ব্যাপারটাই জানতে চাচ্ছি আপনার কাছে।’
‘কাজ উদ্ধারের জন্য বা সুবিধা পাওয়ার জন্য বড় বড় কর্মকর্তাদের মাথায় সবাই তেল ঢালে চব্বিশ ঘন্টা। সেই তেল চেয়ারে লেগে দাগ পড়ে গেলে সর্বনাশ! সবাই বুঝে যাবে তাকে তেল মারা হচ্ছে। তাই তোয়ালে দিয়ে রাখে!’

আমি সমাধান শুনে চমৎকৃত হই। আমি বলি, ‘তাহলে কী সব কর্মকর্তাদের চেয়ার থেকে তোয়ালে সরিয়ে ফেললে তেল মারা বন্ধ হবে?’
‘হতেও পারে। বরং কর্মকর্তাদের উচিত চেয়ারের তোয়ালে সরিয়ে গলায় গামছা ঝুলিয়ে বসা।’
তার কথা শুনে আমি অবাক হই। জানতে চাই, ‘কেন?’
‘তাহলে ঠিকমত কাজ না করলে জনগণ গামছা ধরে টান দিয়ে ঐ চেয়ার থেকে উঠিয়ে দেবে।’

তোয়ালে থেকে গামছায় চলে  এসেছি। তবে এটা ঠিক তোয়ালে থেকে গামছা জিনিসটা অনেক বেশি কার্যকরী। গামছা দিয়ে অনেক কিছু করা যায়। মনে পড়ে ছোটবেলায় গামছা দিয়ে পুকুরে মাছও ধরেছি... ডানকিনি মাছ। আবার গামছা দিয়ে প্যারাস্যুট বানিয়ে গাছ থেকে লাফও দিয়েছি কত।  তবে আমাদের গ্রাম বাংলার গামছা আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে বিবি রাসেলের কল্যাণে। সে তুলনায় তোয়ালে কিন্তু তোয়ালের জায়গাতেই রয়ে গেছে। তার সর্বোচ্চ অ্যাচিভমেন্ট বড় বড় কর্মকর্তাদের চেয়ারে ঝুলে থাকা আর তাদের মাথার তেল দিয়ে মাখামাখি হওয়া।

তোয়ালে আর গামছার একটি মর্মান্তিক গল্প দিয়ে শেষ করি। গল্পটা কিন্তু সত্যি। একজন ডাক্তার। ভালো ডাক্তার তিনি। শহরে প্র্যাকটিস করেন, ভালো প্রসার তার। আর  মাঝে মধ্যেই গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করেন।  বিনা পয়সাতেই করেন। কিন্তু গ্রামের তথাকথিত কোয়াক ডাক্তাররা অনেকদিন ধরেই ব্যাপারটা ভালোভাবে নিচ্ছিল না। তারা ঠিক করল এই ডাক্তারকে সরিয়ে ফেলতে হবে। তারা কিছু খুনি ভাড়া করল।

খুনিরা রোগীর আত্মীয় সেজে একদিন ডাক্তারের কাছে গেল। বলল দূরে এক রোগীর অবস্থা খুব খারাপ তাদের সঙ্গে যেতে হবে। রোগীর ব্যাপারে এই ডাক্তার সব সময়ই সিরিয়াস। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার মটর সাইকেলে একজন খুনিকে পেছনে বসিয়ে রওনা দিলেন গন্তব্যে। অন্য খুনিরা আরেক মটরসাইকেলে তার পিছু নিল। খুনিরা আগে থেকেই একটা জায়গায় তাদের আরো কিছু সাঙ্গপাঙ্গদের ফিট করে রেখেছিল। সেখানে পৌঁছানো মাত্র ডাক্তারের মাথাটা একটা ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুড়ে থান ইট দিয়ে থেতলে ফেলল। ডাক্তার এ ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে মারা গেলেন।

পরে ডাক্তারের আত্মীয়-স্বজন খবর পেয়ে তার লাশ উদ্ধার করল এবং তার থেতলানো মাথাটা একটা গামছায় মুড়ে বাসায় নিয়ে গেল।

সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ! আর কি বিচিত্র এই দেশের মানুষ!!




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ জুলাই ২০১৫/তাপস রায়   

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়