ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শুক্লা ছবি আঁকে || রণজিৎ সরকার

রণজিৎ সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৫ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শুক্লা ছবি আঁকে || রণজিৎ সরকার

শুক্লা ছবি আঁকতে পছন্দ করে। তাই মামার কাছে তার দাবি রঙ পেন্সিলের। মামা হিসেবে তার দাবি পূরণ করি আমি। ওদের বাড়িতে যখন যাই। তখন রঙ পেন্সিল সঙ্গে করে নিয়ে যাই।

 

সেদিন ওদের বাসায় গিয়েছি। পেন্সিল নিয়ে। শুক্লা আমাকে দেখা খুশি হলো। আমার কাছে এল। রঙ পেন্সিল হাতে দিলাম। খুশি হলো শুক্লা।

 

দৌড়ে রুমে গেল। রুম থেকে ফিরে এল। হাতে অনেকগুলো আঁকা ছবি নিয়ে। ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মামা, এই কয়েকদিনে ছবিগুলো এঁকেছি। কেমন হয়েছে?’

 

আমি ছবিগুলো দেখলাম। তারপর বললাম, আগেরগুলো চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে মামুনি। এগুলো এবার পত্রিকায় পাঠাব। তোমার ছবিসহ পত্রিকায় ছাপা হবে।

 

শুক্লা নিজের প্রশংসা শুনে হাসি দিল। শুক্লা পত্রিকায় তার আঁকা ছবি ও নিজের ছবি ছাপানো কথা শুনে আনন্দে হাততালি দিল। তারপর নতুন রঙ পেন্সিল নিয়ে ছবি আঁকতে বসল। শুক্লা আঁকছে আমি দেখছি। আঁকা শেষ হলো। রাতের খাবার খেয়ে শুক্লা ঘুমিয়ে পড়ল। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

 

বক্সের ভেতর থেকে একটা পেন্সিল বের হলো। লাফাতে লাফাতে শুক্লার কাছে গেল। ওর কানের কাছে গিয়ে পেন্সিল বলল, ‘শুক্লা, ও শুক্লা।’

 

শুক্লার ঘুম ভাঙল। তাকিয়ে দেখে পেন্সিল। শুক্লা দেখে তার দুষ্ট পেন্সিলটা। যে পেন্সিলটা হাঁটতে পারে, দাঁড়াতে পারে মাঝে মাঝে বিভিন্ন জিনিস কালার করে দেয় শুক্লার অনুমতি নিয়ে। শুক্লা ছাড়া একথা কেউ জানে না।

 

শুক্লা বলল, ‘কি জন্য এসেছ?’

পেন্সিল বলল, ‘মামা, এসেছে। মামাকে একটু কালার করতে চাই।’

‘মামাকে কালার মানে!’

‘মামাকে কালার করতে ইচ্ছে করছে আমার। তুমি কি বল শুক্লা?’

‘মামা রাগ করবেন।’

‘মজা কার জন্য করব। মামাও মজা পাবেন।’

‘মামাতো ঘুমিয়ে আছেন। গেঞ্জি পরে।’

‘তাহলে সাদা গেঞ্জি লাল করে দেব। মামাতো লাল রঙ পছন্দ করেন।’

‘ঠিক আছে করো।’

পেন্সিলটা মামার কাছে গেল। দেখে মামা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন। তারপর ধীরে ধীরে মামার গেঞ্জির চার পাশে ঘুরতে লাগল। গেঞ্জি লাল হয়ে গেল।

পরদিন। আমার ঘুম ভাঙল। অবাক হলাম। সাদা গেঞ্জি লাল হলো কেমন করে। আমি ঘরের দরজা খুলে বের হলাম। সবাইকে বললাম, রাতে আমার ঘরে ভূত এসেছিল। আমার সাদা গেঞ্জি লাল হয়েছে। ভূতের ভয়ে এ বাড়িতে আর আসা যাবে না।’

 

শুক্লার মা বলল, ‘মাঝে মাধ্যে আমাদের বাসার অনেক কিছুর রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়। কিছু বুঝতে পারছি না। এ বাসায় কিসের যে আগমন হলো।’

 

আমি বললাম, দিদি, তোমাদের বাসায় আর আসব না।

 

সবাই অবাক হলো। কিন্তু শুক্লা মুচকি মুচকি হাসছে। আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

 

শুক্লার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তোমাদের বাসায় আর আসব না। পাবে না আর রঙ পেন্সিল। আমি এখনো চলে যাব।’

 

শুক্লা বলল, ‘মামা, একটু বসো।’

 

আমি বসলাম। শুক্লা মুখটা আমার কানের কাছে নিয়ে এল। তারপর ধীরে ধীরে বলল, ‘মামা, তুমি কাউকে বলো না। তুমি যে প্রথম কিছু পেন্সিল দিয়ে ছিল। তার মধ্যে থেকে লাল একটা পেন্সিল হাঁটতে পারে, লাফাতে পারে। সে বিভিন্ন সময় বাসার বিভিন্ন জিনিস রঙ করে ফেলে। ওই যে মা বলল। ওর আঁকা দেখে আমিও মজা পাই। রাতে পেন্সিলটা আমার অনুমতি নিয়ে তোমার গেঞ্জিটা লাল রঙ করে দিয়েছে। এ কথা কাউকে বলো না। তুমি কি রাগ করেছে মামা?’

 

আমি অবাক হলাম। খুশিতে শুক্লাকে কোলে নিয়ে বললাম, রাগ করিনি মামুনি।

 

হেসে ফেলল শুক্লা।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ আগস্ট ২০১৫/রণজিৎ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়