ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সেলিনা হোসেনের ধারাবাহিক উপন্যাস || ১২তম কিস্তি

সেলিনা হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সেলিনা হোসেনের ধারাবাহিক উপন্যাস || ১২তম কিস্তি

মাসখানেকের মাথায় একদিন বিকেলবেলা সুষমা হঠাৎ করে আসে। বলে, হঠাৎ এলাম। আসার কোনো প্ল্যান ছিল না। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম ভাবলাম ভাবিকে দেখে যাই।

তোকে একদম অন্যরকম লাগছে। উৎফুল্ল। আমাকে বলার মতো কোনো খবর আছে? সেদিন একটু বলেছিলি মাত্র।

আগে ভাবিকে দেখে আসি। ভাবির গায়ে পারফিউম ছিটিয়ে আসি।

সুষমা আসার পর থেকে দাঁড়িয়েছিল, বসেনি। দ্রুত পায়ে ডালিয়ার ঘরে যায়। ওর শরীর থেকে পারফিউমের গন্ধ ভেসে আসছে। আমি জানি দীর্ঘদিন এই বাড়িতে ও গায়ে পারফিউম লাগিয়ে আসেনি, অন্তত আমার সামনে তো আসেইনি। হয়তো অফিসে বা কোনো পার্টিতে পারফিউম লাগাতে পারে, যেটা আমি জানি না। আজ ওর পারফিউমের গন্ধে আমি নড়েচড়ে বসি, ভাবি ওর হয়তো নতুন দিনের সূচনা হয়েছে। তাই ওর আছে বুকভরা আনন্দ। পারফিউমের ব্যবহার সে আনন্দের প্রকাশ। আমি খুশি হই। ওর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকি। ভাবছি, ও ডালিয়ার কপালে হাত রাখছে। চুল ঠিক আছে কিনা দেখছে। ওর বালিশের পাশে একটি লাল গোলাপ রেখেছে। ও এলে এমনই করে। এখন ডালিয়াকে সুপ দেয়ার সময় নয়, নইলে ও সুপ দিত ডালিয়ার নলে। আমি যে শূন্যতায় নিজেকে ডুবিয়েছিলাম সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। ভাবি, ওর মতো আমারও সামনে নতুন দিন আসছে, আমিও হয়তো খুঁজে পাব গানের কোনো নতুন কলি, বেজে উঠবে হারমোনিয়াম। আমি বেলফুলকে গান শেখাব। ও অনেক দিন আমাকে বলেছে, খালু আমাকে গান শেখান। গান শিখতে আমার খুব ভালোলাগে। খালু আমাকে গান শেখাবেন? 

 

সেদিন আমি ওকে বলেলিছাম, হ্যাঁ তোকে আমি গান শেখাবো। কিন্তু আর শেখানো হয়নি। ও কাজ শেষ করে দৌড় দিয়ে চলে যায় রাস্তায় ফুল বিক্রি করতে। গান শেখার চেয়ে ফুল বিক্রি ওর কাছে জরুরি কাজ। ফুল বিক্রি করে টাকা নিয়ে যেতে হয় বাড়িতে। এই মুহূর্তে ওর গান শেখার আগ্রহ আমাকে চাঙ্গা করে। আমি ভাবি, ওর বেতনের টাকা কিছু বাড়িয়ে দিয়ে ওকে গান শেখানোর জন্য আমি আটকাবো। ওর সুরেলা কচিকণ্ঠ এই বাড়ির আনাচে-কানাচে আটকে থাকবে, ঠিক মাকড়সার জালের মতো, কিংবা তেলাপোকার দৌড়ে বেড়ানোর মতো, তখন এই বাড়ির কোনোকিছুতে ওর আর ভয় থাকবে না।

সুষমা আমার কাছে এসে বসে। বলে, ভাইয়া কি ভাবছো?

ভাবছি তোর পারফিউমের কথা। গন্ধটা খুব মিষ্টি। আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। বলতে পারিস মগ্ন হয়ে বসে আছি। কোথায় পেয়েছিস এই সুগন্ধী?

তৈমুর দিয়েছে। সুষমার শারীরিক স্নিগ্ধতায় চাঁদনি রাত নেমে এসেছে, মনে হচ্ছে ও এক আশ্চর্য নারী, যার শরীরজুড়ে পৃথিবীর সবটুকু মোহনীয় মুগ্ধতা এই মুহূর্তে আমার ঘরে। আমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক অপরূপ নারীকে দেখি যাকে আমি কখনো দেখিনি।

কি হলো ভাইয়া? তুমি কি অন্যকিছু ভাবছ?

ভাবছি বেলফুলকে গান শেখাব।

বেশ তো, ভালোকথা। পথশিশু মেয়েটি নতুন জগৎ পাবে।

ঠিক তোর মতো কি? তুই যেমন পেয়েছিস? ভালো হবে না?

খুব ভালো হবে ভাইয়া। ও নতুন জগৎ পাবে। তুমিও নতুন কাজ পেলে, সারাদিন একা একা থাকার খানিকটুকু পূরণ হবে।

 

ওর কথায় আমি গভীর নিঃশ্বাস ছাড়ি। সুষমা আমার মুখোমুখি বসে। বলি, তোর কি যাবার তাড়া আছে? নাকি বসবি কিছুক্ষণ? তোর জন্য আমি চা বানাব। ফ্রিজে পেস্ট্রি আছে।

ঠিক আছে আজ তোমার হাতেই চা খাবো।

তৈমুরের গল্প শুনব। ও কি তোর অফিসের কেউ?

না, আমার অফিসের কেউ না। পাস করার পরে বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। পিএইচডি করতে বিদেশে যায়। তারপর আর দেশে ফিরেনি। আমেরিকাতেই থেকে যান। 

তোর সঙ্গে কোথায় দেখা হলো?

তিনি আমার প্রতিবেশি। রোজই দেখা হয়, আমি যখন সকালে হাঁটতে বের হই তখন।

জিজ্ঞেস করি, তৈমুরের আর কে আছে?

স্ত্রী মারা গেছে বছর দুয়েক আগে। দুই ছেলে, ওরা আমেরিকাতেই থাকবে। দুজনেই বিদেশি বিয়ে করেছে। একজনের বৌ পোল্যান্ডের, আর একজনের বৌ মেক্সিকোর। দুজনেরই দুটো মেয়ে আছে। ঢাকায় যে ফ্ল্যাটে তৈমুর থাকে সেটা তার নিজের। আমার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পরে বলেছে আমেরিকায় আর ফিরবে না।

তুই কি ভাবছিস রে? এত দেখছি সরাসরি প্রস্তাব।

আমি এখনো কিছু ভাবিনি ভাইয়া।

আমি হাসতে হাসতে বলি, ভেবেছিস। তোর চোখমুখের ভাষা ভাবার কথাই বলছে। কংগ্রাচুলেশনস সুষমা। আমি খুব খুশি হয়েছি। একদিন আমার কাছে নিয়ে আসবি। চুটিয়ে আড্ডা দেব তিনজনে। তৈমুরকে গান শোনাব। ও কি গান শুনতে ভালোবাসে? আচ্ছা ঠিক আছে আমি জিজ্ঞেস করে নেব। বিয়েটা আমার বাড়িতে হবে। সব ব্যাবস্থা আমি করব। ওর ছেলেরা বাবার বিয়েতে এলে সেটা একটা দারুণ ঘটনা হবে।

 

ভাইয়া- সুষমা টেনে উচ্চারণ করে। আমার চাইতে তোমার খুশি অনেক দেখছি।

তুই খুশি প্রকাশ করছিস না, আমি করছি। ক্ষতি নেই, খুশি প্রকাশ হলেই হয়।

তুমিতো কিছুই জানতে চাইলে না। আগেই বিয়ের কথা বলছ, মনে হচ্ছে বিয়ে আমার নয় তোমার।

কি বললি? আমি চমকে ওর দিকে তাকাই। বুকের মধ্যে গুরগুর করে শব্দ, বিয়ে আমার নয় তোমার?

সুষমা হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে আবার বলে, তুমি তো ঠিক করে কিছুই জানতে চাইলে না?

আমার তো জানার দরকার নেই। জানবি তুই, বুঝেশুনে পা ফেলবি, তারপর সিদ্ধান্ত নিবি। আমি হবো অনুষ্ঠানের আয়োজক। ঠিক আছে? তবে হ্যাঁ, অনুষ্ঠানের আয়োজনের আগে তৈমুরের সঙ্গে দেখা করতে হবে। যেদিন তুই ওকে এই বাড়িতে নিয়ে আসবি সেদিন আজকের পারফিউম শরীরে ছড়িয়ে আসবি। ঠিকতো?

আমি আলতো করে ওর ঘাড়ে হাত রাখি। বলি, তোকে কি আমি বিব্রত করেছি সুষমা?

মোটেই না। এমন কথা তুমি বলতেই পার। আমরা সাত ভাইবোন। তোমার সঙ্গে আমার মনের টান বেশি। অন্যদেরকে কথাটা তো তোমাকেই জানাতে হবে ভাইয়া।

গুড। আমি খুব খুশি হয়েছি। চল ডাইনিং টেবিলে বসে আরও কথা বলব।

তুমি যাও। আমি কফি বানিয়ে আনছি।

দেখতে পাই ওর মুখে খুশির আভা। ভাবি, এবার ও মবিনকে একটা জবাব দিতে পারবে। একজন মানুষের জীবনে জিরো সময় বলে কিছু থাকতে পারে তা আমার ভাবনায় আসে না। আমি অপমানিত বোধ করি। আগেও করেছি। কিন্তু নিজের মনোভাব সুষমার কাছে প্রকাশ করিনি। আজ প্রাণখোলা ডাকের সাড়া পাচ্ছি। আমার বুকের ভেতরে তোলপাড় করে ওঠে সময়। আমার সময় ডালিয়ার সঙ্গে। আমার সময় ভালোবাসার সঙ্গে। আমি ডাইনিং রুমের দেয়ালের আয়নায় আমাকে আর ডালিয়াকে দেখতে পাই। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ে আগের আমরা, বিশ^বিদ্যালয়ের কোয়াটারে উঠেছি, মনের আনন্দে ঘর সাজাচ্ছি, এটা-ওটা কিনে আনছি। ড্রইংরুমের নতুন সোফায় বসে ডালিয়া আমার আঙুল মটকাতে মটকাতে বলেছিল, বিয়ের দুবছর পরে আমরা নতুন একটি ফ্ল্যাটে এলাম। বেশ লাগছে, মনে হচ্ছে নতুন জীবন শুরু হলো।  এবার আমরা নতুন মানুষ আনব, আমি কথাটি বলে ওর দুহাত আমার গালে চেপে ধরি। কতক্ষণ এভাবে ছিলাম জানি না। ডালিয়ার মাথা আমার বুকের মধ্যে, ফিসফিসিয়ে বলে, হ্যাঁ, নতুন মানুষ চাই। আমাদের খুনসুটিতে সময় চলে যায়। জানালার কার্নিশে বসে কাক ডাকে, আমরা বিরক্ত হই না। মনে হয় কাকের সঙ্গীতও মানুষের বুকে নদী হয়। মনে মনে ভাবি, কাকটা আজ ডাকতেই থাকুক। ডেকে ডেকে বলুক, তোমাদের এই সুখের সময় চিরকালের হোক। তোমাদের সুখের সময় কোনোদিনই শেষ হবে না। কতক্ষণ চলে যায় আমি জানি না। অনন্ত সময় আমার বুকের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে থাকে। আমি নিবিষ্ট চিত্তে নিজের মধ্যে মগ্ন হই। ডালিয়ার কণ্ঠস্বর শুনতে পাই। বলছে, যে ভালোবাসার কথা আমাকে বলেছ তা কিন্তু অন্য কাউকে বলবে না। আমার মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। ধাম করে মাথা সোজা করে বলি, তুমি আমাকে অপমান করলে ইরাবতী নদী।

 

অপমান করিনি। তবে এটাও সত্যি পুরুষ মানুষের কোনোকিছু ঠিক থাকে না।

আমি আরও রেগে গিয়ে বলেছিলাম, আমার শব্দ ভাণ্ডার এত কম নয় যে তোমার জন্য বলা ভালোবাসার কথা একইভাবে আর একজনকে বলতে হবে। বললে, নতুন কথাই বলব।

তারপর সাত দিন ডালিয়া আমার সঙ্গে কথা বলেনি। আমিও ওর অভিমানের তোয়াক্কা করিনি। ভেবেছিলাম অন্যায় ও করেছিল, অপরাধও ওর। তবে আমি কেন মান ভাঙাবো! আমি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলাম সে সময়ে। পরে ডালিয়াই বলেছিল, সরি আমি কথাটা ঠিক বলিনি। তুমি দুঃখ পেয়ো না।

আমার দুঃখ তুমি আর ঘোচাতে পারবে না ডালিয়া। তুমি সব পুরুষকে এক পাল্লায় ওঠালে কেন?

আমি সরি বলেছি মাছরাঙা। আর কোনোদিন বলব না।

আমি চুলের ভেতর হাত ডোবাই। পাঁচ বছরেরও আগে ডালিয়ার বলব না শব্দটি বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য ও যতদিন সক্রিয় ছিল ততদিন ঐ কথা আমাকে আর বলেনি। অজস্র কথার মাঝে আড়াল হয়েছিল ওর ওইসব কথা। যতদিন প্রাণের ধুকধুকি আছে ততদিন ও আর বলবে না। আমার চোখে পানি আসে। আমি দুহাত দিয়ে চোখের পানি আড়াল করি।

সুষমা কাছে দাঁড়িয়ে ডাকে, ভাইয়া কফি।

বোস। তোর যাবার তাড়া নেই তো? আমি উদগ্রীব হয়ে ওর দিকে তাকাই। আমার ইচ্ছে ও আরও কিছুক্ষণ এই বাড়িতে থাকুক। আমার সময় কাটুক আনন্দে।

ও সোফায় বসতে বসতে বলে, তোমার কথা থাকলে শুনব। আমার তাড়া নিয়ে ভেবো না। জানোই তো আমি সময় ম্যানেজ করতে পারি।

আমি গভীর ঔৎসুক্য নিয়ে ওর দিকে তাকাই। আমার ভেতরে সুষমার নতুন করে শুরুর জানার ইচ্ছা প্রবল হয়ে ওঠে। নিজের ভেতরে কেন এই অস্থিরতা তা আমাকে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। বলি, আমি তোর নতুন জীবনের কথা শুনতে চাই। যে ভালোবাসার কথা তুই মবিনকে বলেছিস সেসব কথা তো তুই তৈমুরকে বলিসনি। না রে?

হ্যাঁ, তাতো বটেই। একজনকে বলা কথা আমি অন্যজনকে কেন বলব? ভাইয়া আমার জীবন থেকে আমি মবিনকে মুছে ফেলতে পারব না, কিন্তু তৈমুরের সঙ্গে শুরু আমাকে বসন্তের নতুন গজানো পাতার স্নিগ্ধতা দেবে। আমি নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তুলব। 

ডিভোর্স হওয়ার পরও তুই বলতি তুই মবিনকে ভালোবাসিস। আমার মনে হতো তুই বাড়াবাড়ি করছিস। বিষয়টি আমি মানতে পারতাম না।

মনের ভেতরে সেতো থেকেই ছিল ভাইয়া। কারণ আমি আমারটুকু নিয়ে কথা বলেছি। ওরটুকু তো আমি কবেই ঝেড়ে ফেলেছি। তার কিছু অবশিষ্ট নাই। আমারটুকু বাদ দিলে আমার জীবনের একটা চ্যাপ্টার অন্ধকার হয়ে যায়। আমি তা চাই না। আমার যা কিছু তাকে আমি আমার ভেতরেই রাখব। সতেজ রাখব। আড়াল করব না।

 

সুষমা থামে। আমি কফিতে চুমুক দেই। পরপর কয়েকবার চুমুক দেই। মনে হয় আমার ভেতরে ভীষণ তৃষ্ণা। আমাদের মধ্যে আর কথা হয় না। সুষমাও ওর কফি শেষ করে বলে, ভাবির বালিশের পাশে কিছু বকুল ফুল রেখেছি। সন্ধ্যা হলে ফেলে দিও ভাইয়া। নইলে পোকা আসতে পারে।

তুই তো জানিস আমি সারাদিনে কয়েকবার ওর বিছানা ঝেড়ে দেই।

তোমার তুলনা শুধু তুমিই। আমি আজ যাই। দেখে এসেছি রান্না ঘরে সবকিছু ঠিকঠাক আছে। রাতের রান্নার জন্য বিকেলে তো বুয়া আসবে, না?

হ্যাঁ আসবে। একটু পরেই এসে যাবে।

তুমি এখন কি করবে ভাইয়া?

হারমোনিয়াম নিয়ে বসব। এখনতো গানই আমার ডালিয়া। গানের মধ্যে ওকে খুঁজে ফেরা।

ভাবি তোমার গানের খুব অনুরাগী ছিল। মাঝে মাঝে মনে হতো ভাবি বুঝি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে গায়কই মনে করে না। ভাবি যখন গদগদ স্বরে তোমার গানের কথা বলতো, আমি হেসে গড়িয়ে পড়তাম। মাঝে মাঝে ভাবি রেগে গিয়ে বলত, হাসছ কেন? আমি কোনো উত্তর দিতাম না, আমি তো জানি আমার উত্তর দেয়ার কিছু নেই। 

গান শুনেই তো প্রেম। ও এমন মুগ্ধ ভাষায় আমার গানের কথা বলতো যে মনে হতো আমার সামনের পুরো জগৎই ডালিয়া।

প্রেম! সুষমা হেসে গড়িয়ে পড়ে। প্রেম বারবার ফিরে আসে ভাইয়া। তোমার জীবনেও কি তেমন কিছু ঘটবে?

জানি না। আমি দ্বিধা নিয়ে বলি। সুষমা এমন একটি প্রশ্ন করবে তা আমি ভাবিনি। আমার ভেতরে কাঁপুনি জাগে।

এলে আমি খুশি হবো। তোমার নিঃসঙ্গতা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। ছেলেমেয়েরা কাছে থাকলে তুমি খানিকটুকু স্বস্তিতে থাকতে। ওদের বাচ্চা নিয়ে তোমার সময় কেটে যেত।

আমার কাছে নিঃসঙ্গতা শুধু একটি শব্দ মাত্র নয়। এটা জীবনের ব্যাপকতাও রে বোন। আমি এক উদাস ভঙ্গিতে কথাটা বলি যেন জীবনের কাছে আমার কোনো পরাজয় নেই।

 

সুষমা আমার কথা শোনে, কিন্তু আমার দিকে তাকায় না। একই ভঙ্গিতে বলে, তোমার জীবনযাপনে আমি সেটাই দেখতে পাচ্ছি। আজ গেলাম। আবার কবে আসব তা তোমাকে ফোনে জানাব। আর যদি তোমার দরকার হয় তাহলে ফোন দিও।

আমার দরকার হলে ফোন দেব সেটা ভিন্ন ব্যাপার, কিন্তু তৈমুরের সঙ্গে আমার পরিচয় হবে কবে?

তুমি চাইলে তাকে নিয়ে আসব। যখন বলবে তখনই আনব। অবশ্য তার যদি অন্য কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট না থাকে সেটাও দেখতে হবে। তুমি আমাকে ফোন দিও ভাইয়া, তোমার চাওয়া আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। 

আমি তো চাই। আমি আনন্দের হাসি ছড়িয়ে কথাটা বলি। আমার চাওয়া তোর কাছে বড় পাত্তা পাবে সেটা আমি জানি। কথাটা বলে আমি হাসি। সুষমাও হাসে, আমরা বুঝে যাই যে আমাদের জীবনের জানালাগুলো খুলে গেছে। আমরা দুই ভাইবোন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি। (চলবে)

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়