ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

হবিগঞ্জের আলাপুর জমিদার বাড়ি

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৭, ১২ জানুয়ারি ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হবিগঞ্জের আলাপুর জমিদার বাড়ি

আলাপুর জমিদার বাড়িতে অবস্থিত মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ (ছবি : মামুন চৌধুরী)

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে আলাপুর বগলা প্রশন্ন দত্ত কাছু বাবু জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। বর্তমানে জমিদারের কোনো বংশধর এখানে বসবাস করেন না। তারা অনেক আগেই জমিদারি ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন। আর যারা এ দেশে আছেন, তাদের কেউ কেউ বসবাস করছেন সিলেট এবং চুনারুঘাটে।

 

 

জমিদারি শেষ হয়েছে অনেক আগেই। তার পরও এখানে রয়ে গেছে জমিদারবাড়ির বেশ কিছু চিহ্ন। সে আমলের নির্মিত মন্দির ও একটি ভবনসহ শ্মশানের চিহ্ন এখনো দৃশ্যমান। তবে সেসব এখন কালের কষাঘাতে জরাজীর্ণ।

 

 

এ জমিদার বাড়িটি সম্পর্কে তেমন সমৃদ্ধ কোনো ইতিহাস পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, কয়েশ’ বছর আগে শিরিশ দত্ত নামে এক ব্যক্তি এ এলাকায় বিশাল স্থান জুড়ে জমিদারির গোড়া পত্তন করেন। তারপর এসব দেখভাল করেন বগলা প্রশন্ন দত্ত কাছু বাবু, সত্যন্দ্র প্রশন্ন দত্ত, অমিয় প্রশন্ন দত্ত ও বীরেন্দ্র প্রশন্ন দত্ত। সর্বশেষ তাদের বংশধর বিজয় নারায়ণ দত্ত ১৯৯০ সালের দিকে এখান থেকে চলে যান। এরপর থেকে এ জমিদার বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে।

 

 

এলাকাবাসী জানান, মাঝেমধ্যে জমিদারদের বংশধররা এখানে এসে তাদের পূর্ব পুরুষের তৈরি বাড়িটি মাঝে মাঝে দেখে যান। সে সময় তারা পুরনো স্মৃতি মনে করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

 

                  আলাপুর জমিদার বাড়ির মন্দিরের পাশে অবস্থিত ভবন

 

পরিত্যক্ত বাড়িটির মধ্যে জমিদারি আমলের একটি মন্দির কালের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে রয়েছে। মন্দিরের পাশেই একটি ভবন। তবে ভবনটি দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে এটি জমিদারবাড়ির কোনো ভবন। খুবই সাধারণ চেহারার। মন্দির ও ভবনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। যে কোনো সময় এসব ভবন ভেঙ্গে পড়তে পারে। ভবন বা মন্দিরটি না থাকলে হয়ত এই জমিদারবাড়ির কোনো চিহ্নই পাওয়া যেতো না।

 

এখন পর্যন্ত স্থানীয় লোকেরা এ বাড়িটি কাছু বাবু জমিদার বাড়ি হিসেবেই জানে। যদিও এর পূর্বে অনেক জমিদার এ বাড়িতে বসবাস করে এবং প্রজা শাসন করে গেছেন। কে জানে, হয়ত কাছু বাবু প্রজা পালনে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও উদার ছিলেন। আবার হয়ত অত্যাচারিও হয়ে থাকতে পারেন। সে ইতিহান এ এলাকার কেউ জানেন না। তবে তার কথাই বলেন সবাই।

 

এলাকাবাসী মকবুল হোসেন বলেন, ‘জমিদারের কোনো লোক এখানে বসবাস করে না। কারণ তারা এখানের জমি বিক্রি করে চলে গেছেন। আমিও তাদের কিছু জমি ক্রয় করেছি। আশ পাশের অনেকেই কিনেছেন।’

 

তিনি জানান, এখানে কয়েকশ’ বছর আগে শিরিশ দত্ত নামে এক ব্যক্তি জমিদারি পরিচালনা করেছেন। পরে তার বংশধররাও বসবাস করেছেন। এখন তাদের বংশধররা ভারতসহ এ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন।

 

ওই এলাকার ইউনিয়ন মেম্বার আব্দুস সামাদ বলেন, ‘এলাকার বয়স্ক লোকদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, এখানে এক সময় জমিদারবাড়ি ছিল। শিরিশ দত্ত বাবু ও রমন বাবু নামে দুইজন ব্যক্তি বিশাল এলাকা নিয়ে এখানে দীর্ঘদিন জমিদারি পরিচালনা করেছেন। তাদের শাসনামলের কথা আজো লোকজনের মনে আছে। বাড়িটি পরিত্যক্ত। এখানে জমিদারের কেউ থাকেন না।’

 

তিনি জানান, জমিদারি চলে যাওয়ার পর পরবর্তী বংশধরদের অনেকেই ভারতের কলকাতায় চলে যান। তারপরও প্রিয় বাসস্থানের মায়ায় জমিদারের বংশধর কাছু বাবু দীর্ঘ দিন এখানে বহু প্রতিকূলতা সত্বেও বসবাস করে গেছেন। পরে তিনি অন্যত্র চলে যান। তার চলে যাওয়ার পর বংশধরদের একজন আরো কিছু দিন এখানে বসবাস করেছিলেন। বর্তমানে তিনিও এখান থেকে চলে গেছেন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/মামুন চৌধুরী/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়