ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

হবিগঞ্জের বহুলা পৌদ্দার জমিদারবাড়ি

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ১৫ জানুয়ারি ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হবিগঞ্জের বহুলা পৌদ্দার জমিদারবাড়ি

জমিদার গোপাল পৌদ্দার নির্মিত মন্দির, পাশে জমিদারবাড়ির পুকুর (ছবি : মামুন চৌধুরী)

স্থানটির নাম বহুলা। এটি হবিগঞ্জ জেলা সদরের গোপায় ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে রয়েছে কয়েকশ’ বছরের পুরনো একটি জমিদারবাড়ি। এ বাড়িতেই একদা বাস করতেন দাপুটে এক জমিদার। নাম তার গোপাল পৌদ্দার। দাপটের সঙ্গে তার পরবর্তী বংশধররাও জমিদারি করে গেছেন।

 

এখন এ বাড়িতে জমিদারদের কেউ থাকেন না। তবে অন্য লোকজন বসবাস করছেন পরিত্যাক্ত এ বাড়িটিতে। কালের সাক্ষী হয়ে জমিদারবাড়ির ভবনগুলো আজো দণ্ডায়মান আছে। বাড়ির সামনে রয়েছে বড় একটি পুকুর। পুকুর পাড়ে জমিদারদের দানকৃত জমিতে বানানো হয়েছে স্কুল। শুধু নেই জমিদারের বংশধরদের কেউ।

 

 

বহুলা পৌদ্দার জমিদারবাড়ির পুরাতন একটি ভবনের একপাশ (ছবি : মামুন চৌধুরী)

 

শায়েস্তাগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ শহরে যাওয়ার পথে একটি স্থানের নাম শোনা যাবে, পৌদ্দার বাড়ি। এ নামটি জমিদারদের নামের সঙ্গে জড়িত। এখানে সদর উপজেলা পরিষদ ভবনও রয়েছে।

 

যদিও পৌদ্দার বাড়ির জমিদাররা এখানে নেই। রয়েছে তাদের নামের সঙ্গে স্মৃতি জড়িত পৌদ্দার বাড়ি। এ নামটির অনুসন্ধানেই বেরিয়ে আসবে তাদের কথা। আরো আসবে তাদের জমিদারির ইতিহাস।

 

বহুলার বাসিন্দা নোমান মিয়া বলেন, ‘মুরুব্বীদের কাছ থেকে শুনেছি, খুব প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন এ বাড়ির জমিদাররা। এথানে কয়েকশ’ বছর আগে গোপাল পৌদ্দার নামে এক ব্যক্তি বিশাল এলাকা নিয়ে জমিদারি শুরু করেন। তিনি ছিলেন খুবই প্রভাবশালী। সফলতার সঙ্গে তিনি জমিদারি পরিচালনা করেন। এতে করে দিন দিন তার জমিদারিত্বের বিস্তার ঘটে।

 

জমিদার গোপাল পৌদ্দার নির্মিত দোতলা ভবনের বর্তমান চিত্র (ছবি : মামুন চৌধুরী)

 

তিনি মারা যাওয়ার পর তার বংশধর আনন্দ মোহন পৌদ্দার ও হেমন্ত মোহন পৌদ্দার জমিদারির হাল ধরেন। তারা জমিদারি ঐতিহ্যকে আঁকড়ে রেখেই জমিদারি পরিচালনা করেন। স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দান করেন তারাই।

 

এ জমিতে ১৯১০ সালে বহুলা প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়। পরে এটি বহুলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রূপ নেয়। এ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রয়েছে গোপাল পৌদ্দারকে দাহ করার স্থান। তবে অনেকে বলেন, এখানে জমিদার গোপাল পৌদ্দার পূজা করতেন।

 

জমিদারি আমলের নির্মিত কয়েকটি পুরনো ভবন এখনো টিকে রয়েছে। তবে এগুলোর কোনো ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ নেই। পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়।’

 

নোমান মিয়া আরো জানান, নানা কারণে জমিদারের বংশধরদের বেশিরভাগই জমিদারি ছেড়ে ভারতের কলকাতায় চলে গেছেন। আবার কিছু বংশধর জেলা শহর হবিগঞ্জ ও মাধবপুরে বসবাস করছেন।

 

বহুলার জমিদারদের দান করা জমিতে নির্মিত প্রাথমিক বিদ্যালয় (ছবি : মামুন চৌধুরী)

 

জমিদার আনন্দ মোহন পৌদ্দারের নামানুসারে এ মৌজার নাম আনন্দপুর হয়। তার নাম অনুসারে বহুলার কাছে আনন্দপুর নামে একটি গ্রামও রয়েছে।

 

পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, প্রাচীন এই জমিদারবাড়িতে লোকজন বসবাস করছে। খবর নিয়ে জানা গেল, তারা জমিদারদের কেউ নন। তবে তারা এ বাড়ির মালিক দাবি করে এখানে বসবাস করে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে।

 

এলাকাবাসীদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, সরকারি হস্তক্ষেপে এসব প্রাচীন ভবন সংস্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে ভালো হয়। এখনও বাড়িটি দেখলে তার প্রাচীন ঐতিহ্য মনে দাগ কাটে। মলিন হলেও আদতে এটাতো এক সময় জমিদারবাড়িই ছিল!

 

 

 

রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/১৫ জানুয়ারি ২০১৫/মামুন চৌধুরী/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়