ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আইনি জটিলতায় ৪ বছরেও সন্তানকে দেখতে পাননি মা 

মেহেরপুর প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৪:৫২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২
আইনি জটিলতায় ৪ বছরেও সন্তানকে দেখতে পাননি মা 

মেহেরপুর প্রেসক্লাবে মায়ের সঙ্গে স্বপ্না

আইনি জটিলতায় জন্মের চার বছর পরও নিজের সন্তানকে একনজর দেখতে পাননি তছলিমা ফেরদৌস স্বপ্না নামের এক মা। সন্তানকে দেখবেন বলে প্রশাসন ও সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। স্বামী ও আপন ফুফাতো ভাই নবজাতকটিকে চুয়াডাঙ্গা সদর ফাঁড়ির সাবেক পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তার। 

স্বপ্নার বাড়ি মেহেরপুর সদর উপজেলার নতুন দরবেশপুর গ্রামে। 

আরো পড়ুন:

২০১৭ সালের জুনে যশোর জেলার চৌগাছার ব্যবসায়ী ফুয়াদ আবু নাসের সঙ্গে বিয়ে হয় স্বপ্নার। সন্তান পেটে আসার পর স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যায় স্বপ্নার। এরপর থেকেই মা বাহারুন নেছার সঙ্গে নতুন দরবেশপুর গ্রামেই থাকেন তিনি। 

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) মেহেরপুর প্রেসক্লাবে এসে স্বপ্না অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালের ২২ জুলাই দিবাগত রাতে তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। বৃষ্টির মধ্যেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। সেখানে অস্ত্রোপচারে মাধ্যমে এক ফুটফুটে কন্যাসন্তানের মা হন স্বপ্না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বপ্নাকে জানায়, তার সন্তানটি মৃত ছিলো। এরপর টানা দুইদিন অচেতন ছিলেন তিনি। জ্ঞান ফেরার পর স্বপ্না জানতে পারেন ক্লিনিক মালিক, তার স্বামী ও ফুফাতো ভাই মিলে এক পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে নবজাতকটিকে নিঃসন্তান এক দম্পতির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। সেই সন্তানকে এক নজর দেখতে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন স্বপ্না। 

এ ঘটনায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মেহেরপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চুয়াডাঙ্গার ইউনাইটেড ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্বপ্না। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিলে তারা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে চুয়াডাঙ্গা সদর ফাঁড়ির পুলিশ সদস্য সুজনের মাধ্যমে তার আত্মীয় সরোয়ার হোসেন পলাশ ও হীরা খাতুন সন্তানটি দত্তকপত্রের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়

স্বপ্না বলেন, ‘আমার সন্তানকে দেখার জন্য আমি চার বছর ধরে চেষ্টা করছি। আইনি জটিলতায় এখনো সম্ভব হয়নি। ন্যায়বিচার পেতে আর কতো সময় লাগবে? নিজের সন্তানকেও পেতে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে আমাকে।’ 

তিনি দাবি করেন, ‘স্বামী ফুয়াদ অবু নাসের ও ফুফাতো ভাই সদর উপজেলার নতুন দরবেশপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম আমাকে ও আমার পরিবারকে জব্দ করতে সন্তানটি বিক্রি করে দেন।’

স্বপ্নার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস সালাম বলেন, ‘স্বপ্নার সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় তিনি মামলায় আমার নাম যুক্ত করেছেন। তার সন্তান জন্মের সময় আমি তো ক্লিনিকেই ছিলাম না।’ 

মেহেরপুর প্রেসক্লাবে স্বপ্নার সঙ্গে তার মা বাহারুর নেছা উপস্থিত ছিলেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একজন পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার সরইনগর গ্রামের পলাশ-হিরা দম্পতিকে আমার নাতিকে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে কিনে নিয়েছে। শুধু পুলিশ সদস্য বলেই মামলা করেও সন্তান ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। বাচ্চাটি ফেরত পেতে সব রকমের চেষ্টা করেও কিছুই হচ্ছে না। আমরা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে আর কতো ঘুরব?

চুয়াডাঙ্গা ইউনাইটেডে ক্লিনিকের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্বপ্নার সন্তানটি তার পরিবারের সদস্যরা দত্তক দিয়ে থাকতে পারেন। এখানে হয়রানি করার জন্য ক্লিনিকের নামে মামলা করা হয়েছে।’

মেহেরপুর আদালত সূত্রে জানা গেছে, ‘আদালতে পিবিআই-র দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন করেন স্বপ্না। এরপর ২০১৯ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত। বর্তমানে সিআইডি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।’

মেহেরপুর সিআইডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছাইয়েদুর রহমান বলেন, ‘ স্বপ্নার সন্তানটি দলিল করেই দত্তক দেওয়া হয়েছে। দলিলে থাকা সইগুলো সঠিক না বেঠিক, তা জানতে স্বাক্ষর এক্সপার্টের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন এলে আদালতে জমা দেওয়া হবে।’

মহাসিন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়