ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ঋতুরাজ এসেছে দখিনা বাতায়নে

মোহাম্মদ রায়হান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
ঋতুরাজ এসেছে দখিনা বাতায়নে

তোমার অশোকে কিংশুকে/অলক্ষ্য রঙ লাগলো আমার অকারণের সুখে। অকারণের সুখ আর মন না মানা ভালোবাসাকে স্বাগত জানিয়ে দরজায় কড়া নেড়েছে ঋতুরাজ। এইতো, ফাগুনকে বরণ করার সময় এসেছে। এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত।

বাংলার প্রকৃতিতে বসন্ত আসে সুখের বার্তা নিয়ে। ফাল্গুন-চৈত্র দুয়ে মিলে বসন্ত। ঋতুর আবর্তনের গোলকের সম্মুখে পিঠে এখন বসন্তের ছোঁয়া। এইতো, এখনো শীতের অনুভূতি জাগানি দেয় ফাল্গুন, আবার আবছা গরমের পুলকি ছড়াতে চৈত্র এসে ধাক্কা দেয় বাংলা মাসের ক্যালেন্ডারে৷ উষ্ণতা আর শীতল আবহাওয়া একইসঙ্গে প্রকৃতিকে করে তোলে অসাধারণ সহনীয়! বসন্ত ঋতু শীত-গ্রীষ্মের সঙ্গমস্থল। ঝাউয়ের দোল হৃদয় ছুঁয়ে যেতেই আবার পশ্চিমা দমকা হাওয়া বাংলা ঋতুকে দেয় নাড়া। হ্যা, তারপরই আসে কালবৈশাখীর তাণ্ডব।

আরো পড়ুন:

ঋতুরাজ বসন্ত বাঙলার প্রকৃতিকে এক মৌহনীয় রূপ দান করে। শীতের পত্রঝরা উদ্ভিদগুলো নিজেদের দেহকে সাজিয়ে তোলে নতুন পত্রকুড়িতে। নতুন গাছের পাতাগুলো যেন যুবতী। তার উপর অশোক পলাশ আর হিমঝুরির বনে জাগে নতুন ফুল ফোটার ধুম। বসন্ত ঋতুর স্বার্থকতা বোধহয় ফুল ফোটানোর মহিমাকে গায়ে মেখে একাকার হয়ে যাওয়াতে। কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়ার গাছ যেন রঙিন-বেগুনী খেলায় মত্ত হয়ে ওঠে। কোকিলের কুহু-রব আবহমান বাঙলার বসন্তের চিরাচরিত এক রুটিন যেন। প্রকৃতি যখন রুঢ় আচরণ করে ঋতুর চেহারায় বদলে যাওয়ার চাপ ফেলে যায়, কোকিলের মধুর তান শুনে প্রেমপূজারী মানুষ কখনই বসন্তের আগমনী বার্তা পেতে কুণ্ঠাবোধ করে না।

‘‘আকাশে মেলিয়া আঁখি, তবুও ফুটিছে জবা/দূরত্ব শিমুল গাছে গাছে, তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক/এলিয়ে পড়ছে হাওয়া, ত্বকে কি চঞ্চল শিহরণ/মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি পাওয়া-পাতা।’’

ভালেবাসার ঋতু, ‘ঋতুরাজ’। প্রকৃতির সাথে সাথে নর-নারী নিজেদেরও সাজিয়ে তোলেন বসন্তের সাজে৷বসন্ত মানেই সাদা পাজামা- হলুদ পাঞ্জাবি, লাল/হলুদ শাড়ি লাল টিপ আর রেশমী চুড়ির ছড়াছড়ি।  বসন্ত সবার হৃদয়ে ভালোবাসার এক সার্বজনীন বার্তা দিয়ে যায়। প্রেমীক যুগলের মনে বসন্ত নতুন করে প্রেমের জাগানি দেয়। একে-অপরকে উপহার দেওয়া, হাত ধরে বহুদূর হেঁটে প্রেমীকার কপালে ঢলে আসা চুলকে আলতো স্পর্শ করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার প্রেরণা দেয় এই প্রেমের ঋতু। কখনো আবার প্রিয় মানুষের বিয়োগবিধুর স্মৃতিকে নাড়া দেয়। রঙিন বসন্ত বড়ই মলিন হয়ে ধরা দেয় কারো কারো হৃদয়ে। বসন্ত এলেই কারো হৃদয়ে বাজে অন্য সুর। সুর বেজেছিল সুফিয়া কামালের হৃদয়ে, স্বামী হারোনোর ব্যথায়। বসন্ত হদয়কে রঙিন না করে বরং বিষাদের কালে মেঘে ঢেকে দিয়ে উড়াল দেয়।

হোক তবু, বসন্তের প্রতি কেন এই তীব্র বিমুখতা? কহিলাম উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা? কহিলো সে কাছে সরে আসি, কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে রিক্ত হস্তে। বসন্ত বয়ে আনুক অনাবিল প্রশান্তি। বসন্ত আসুক যুগের পর যুগ। প্রেম জাগুক, প্রেম হোক সার্বজনীন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি সাহিত্য, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়