ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

লাল-সবুজ ঘুড়ি

রণজিৎ সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫০, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লাল-সবুজ ঘুড়ি

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

রণজিৎ সরকার

বিশাল ফাঁকা মাঠ। দুপুর গড়িয়ে সবেমাত্র বিকেল হয়েছে। ঠিক এমন সময় রাহা মাঠের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হলো। রাহার হাতে ঘুড়ি এবং নাটাই। রাহাকে দেখে কালু এগিয়ে এলো। ওরা সমবয়সী। কালু বলল, ‘আজ এত দেরি করলি কেন?’

রাহা ঘুড়িটা কালুর হাতে দিয়ে বলল, ‘আগে ঘুড়িটা ধর, তারপর বলছি।’

কালু ঘুড়িটা হাতে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বেশ বাতাস বইছে, সুতা বেঁধে চল ঘুড়িটা উড়িয়ে দেই।’

কালুর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে রাহা ঝটপট ঘুড়িতে সুতা বেঁধে নিল। তারপর কালুর সাহায্যে ঘুড়িটা আকাশে উড়িয়ে দিল।

 

এমন সময় সৌরভ এলো। ওর হাতেও একটা ঘুড়ি। আসলে এ সময় ওরা সবাই এই মাঠে অনেক মজা করে ঘুড়ি ওড়ায়। সৌরভ এসেই রাহার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দেখ,  আমার ঘুড়িটা আজ দুই রঙের।’

কালু সেদিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোর ঘুড়িটা কে বানিয়েছে?’

‘আমি নিজেই।’

রাহা এবার ঘুড়িটি দেখে বলল, ‘তা তো বুঝলাম, কিন্তু লাল-সবুজ কেন?’

সৌরভ বলল, ‘স্কুলে যখন পতাকা বাতাসে পতপত করে উড়তে দেখি তখন খুব ভালো লাগে। তাই হঠাৎ মনে হলো, যদি লাল-সবুজ কাগজ দিয়ে ঘুড়ি তৈরি করি তাহলে নিশ্চয়ই ভালো হবে। তাই নিজেই বানালাম। কেমন হয়েছে?’

‘খুব ভালো হয়েছে,’ বলেই কালু হাত বাড়াল, ‘দে উড়িয়ে দেই।’

সৌরভ বলল, ‘তুই নাটাই ধর। আমি উড়িয়ে দিচ্ছি।’

 

সৌরভ ঘুড়িটা উড়িয়ে দিল। অপরূপ লাল-সবুজ ঘুড়ি উড়তে লাগল নীল আকাশে। ধীরে ধীরে রাহার সঙ্গে সৌরভের ঘুড়ির একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। একবার ভো করে সৌরভের ঘুড়ি রাহার ঘুড়ি টপকে উপরে উঠে যাচ্ছে। আবার পরক্ষণেই রাহার ঘুড়ি সৌরভকে টপকে যাচ্ছে।

ওরা ঘুড়ি উড়িয়ে বেশ মজা পাচ্ছে।

 

চাচার সঙ্গে শহর থেকে গ্রামে আসছিল তালহা। মাঠে দুই ঘুড়ির প্রতিযোগিতা দেখে সে দাঁড়াল। এতে চাচা একটু তাড়া দিয়ে বললেন, ‘কিরে, দাঁড়ালি কেন? চল।’

তালহা আকাশের দিকে তাকিয়েই বলল, ‘চাচা, একটু দাঁড়াই।’ তার কণ্ঠে আবদার। অথচ চাচার কণ্ঠে বিরক্তি, ‘কেন?’

তালহা হাতটা উঁচু করে ঘুড়ি দেখিয়ে বলল, ‘চাচা, ঘুড়িগুলো কি সুন্দর উড়ছে পাখির মতো! আমি যদি ঘুড়ি ওড়াতে পারতাম তাহলে খুব মজা হতো।’

‘তুই তো গ্রামে এবার থাকবি কিছুদিন। আমি ঘুড়ি বানিয়ে দেব।’

‘তা না হয় বুঝলাম কিন্তু আমার মনে হয়…’

‘এখন আবার কী মনে হচ্ছে? চল, সে সব পরে শুনবো।’

‘একটু দাঁড়াও না।’

‘কী?’

‘আমার খুব ইচ্ছে করছে ওই লাল-সবুজ রঙের ঘুড়িটি ওড়াতে। ওরা কি আমাকে একটু সময়ের জন্য ওড়াতে দেবে।’

‘অবশ্যই দেবে।’

 

চাচা তালহাকে নিয়ে সৌরভের দিকে এগিয়ে গেল, তারপর কথাটা বলতেই সৌরভ তালহার হাতে নাটাই দিয়ে দিল। নাটাই হাতে পেয়ে তালহার আনন্দ আর ধরে না। কিন্তু আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। হঠাৎ দমকা বাতাসে সৌরভের ঘুড়ির সুতা ছিঁড়ে গেল। ঘুড়ি উড়ে যেতে লাগল দূরে আরো বহুদূরে। তাই দেখে ঘুড়ির পিছু পিছু সৌরভ আর কালু দিল দৌড়। কিন্তু দৌড়ে ঘুড়ির সুতা ধরা তো আর চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। ঘুড়ি গিয়ে আটকে গেল জামগাছের মগডালে। আর তাতেই রক্ষা। সৌরভ দৌড়ে গিয়ে মগডাল থেকে ঘুড়ি নামিয়ে আনল। কিন্তু ঘুড়ির অবস্থা দেখে বেচারার মন বেজায় খারাপ হয়ে গেল।

 

কালু ঘুড়িটা দেখে বলল, ‘চাচা দেখেন ঘুড়িটা ছিঁড়ে গেছে।’

চাচা সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘মন খারাপ করো না। আমি নতুন করে আরো বড় ঘুড়ি বানিয়ে দেব।’

হঠাৎ এমন কাণ্ডে তালহা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। কারণ তার জন্যই তো সৌরভের লাল-সবুজ ঘুড়িটা ছিঁড়ে গেল। সে বলল, ‘শুধু বড় ঘুড়ি হলে হবে না। এমন অনেক অ-নে-ক লাল-সবুজ ঘুড়ি বানিয়ে দিতে হবে।’

শুনে চাচা বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘এতো ঘুড়ি দিয়ে কী হবে?’

‘আমরা ঘুড়ি উৎসব করবো। কক্সবাজারে তো ঘুড়ি উৎসব হয়।’

শুনে সৌরভ লাফ দিয়ে উঠল, ‘গ্রেট আইডিয়া!’

চাচাও খু্ব খুশি হলো। কিন্তু তিনি বুঝতে পারছিলেন না, সব ঘুড়ির রঙ লাল-সবুজ হবে কেন? বিষয়টা তালহা ব্যাখ্যা করে বলল, ‘আমরা তো মানব পতাকা বানিয়ে বিশ্বরেকর্ড করলাম। এবার লাল-সবুজ কাগজ দিয়ে ঘুড়ি বানিয়ে পৃথিবীকে দেখিয়ে দেব।’

এবার যেন চাচা তালহার বুদ্ধিটা ধরতে পারলেন। তিনি তালহাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, সাবাস! চলো সবাই কাল থেকেই লাল-সবুজ ঘুড়ি বানানো শুরু করি। চাচার কথা শুনে তালহা, সৌরভ, কালু, রাহা সকলেই খুশিতে হইহই করে উঠল।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়