ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

পটগান

সময়ের উপভোগ্য লোকসংগীত

স্বপন কুমার গুহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ২৬ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৬:৩০, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
সময়ের উপভোগ্য লোকসংগীত

রূপান্তরের পটগান প্রদর্শনী

পটগানের ইতিহাস বলতে ছবির বর্ণনাত্মক গানের মাধ্যমে শিক্ষা বা তথ্য প্রচারের প্রাচীন রীতির প্রসঙ্গ চলে আসে। আমাদের দেশের পটুয়ারা বিভিন্ন পটচিত্রের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সচেতন করেছেন সুদীর্ঘ কাল। আজকের অডিও ভিজ্যুয়াল বা চলচ্চিত্রের আদিম রূপ হলো পটগান। পঞ্চাশের দশকের পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন (বাদাবন) অঞ্চলের পটগানও বিলুপ্ত হতে শুরু করে। 

‘পট’ শব্দটি কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে লোকসংস্কৃতি গবেষকদের বিবিধ মতামত রয়েছে। কেউ বলেছেন ‘পট্ট’ শব্দ থেকে ‘পট’ শব্দটি এসেছে। অনেক  গবেষক মনে করেন, পট শব্দটি তামিল ‘পডম্’ থেকে এসেছে। তামিল ভাষায় ‘পডম্’ শব্দের অর্থ ছবি। তবে বেশিসংখ্যক গবেষকদের মতামত সংস্কৃত শব্দ ‘পট’ শব্দ থেকে এই শব্দের উৎপত্তি। পট শব্দের অর্থ ছবি আঁকার কাপড়। যেটা এখন ক্যানভাস নামে পরিচিত। পটের পরেই আসে পটচিত্র। সহজ কথায় পটচিত্র বলতে আমরা পটের (কাপড়ের) উপর অঙ্কিত কোনো ছবিকে বুঝি। অবশ্য পরে কাগজ কিংবা মাটির তৈরি বড় সরার উপর চিত্র তৈরি হলে তাকেও পটচিত্র বলা হয়েছে। কারণ পূর্বের ঐ চিত্রাঙ্কনের ঢঙটি পটচিত্র নামে পরিচিতি পেয়েছে।

পটগানের ইতিহাস অথবা এর প্রাচীনত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলা যায়- মানুষের ভাষার প্রথম প্রকাশ ঘটে চিত্রের মাধ্যমে। গবেষকদের মতে, সপ্তম ও অষ্টম শতকে পটচিত্র প্রথম তৈরি হয়। সপ্তম শতকের প্রথম দিকে রচিত বাণভট্টের ‘হর্ষচরিত’-এ যমপট ব্যবসায়ীদের উল্লেখ আছে। রাজা হর্ষবর্ধন নিজে একজন পটুয়াকে কতগুলো ছেলের মাঝে বসে পট বোঝাতে দেখেছিলেন। গবেষক রবীন্দ্রনাথ মজুমদার লিখেছেন, বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বুদ্ধদেবের জীবনী ও জাতকের কাহিনি পটচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হতো। অষ্টম শতকে রচিত বিশাখাদত্তের ‘মুদ্রারাক্ষস’ নাটকে এর উল্লেখ আছে। এ ছাড়া কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম্’ ও ‘মালবিকাগ্নিমিত্র’ নাটক, উত্তররাম রচিত এবং ভট্ট রচিত ‘হরিভক্তি বিলাস’ নামক গ্রন্থে পটচিত্রের বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা আছে।

প্রায় সকল লোকসংস্কৃতি গবেষকের লেখায় এটা স্পষ্ট যে, প্রধানত ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটানোর জন্যই পটচিত্রের উদ্ভাবন। অবশ্য পরে জীবিকা উপার্জনের জন্যও এটি ব্যবহৃত হয়েছে। তবে কিছুকাল অতিবাহিত হওয়ার পর পটচিত্রকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য ছড়ার মতো করে সুর ও তাল সম্বলিত কিছু কথা সাজিয়ে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। সেটাই হচ্ছে পটগান। ধর্মপ্রচারের জন্য এই পটগান ব্যবহারের কারণ পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা গেছে তখনকার সময় বিভিন্ন ভাষাভাষী ও নিরক্ষর মানুষের জন্য ছবির ভাষা বেশি গ্রহণযোগ্য ছিল। স্ব-স্ব অঞ্চলের কথ্য ভাষার ‘শব্দমালা’ ব্যবহার হতো পটগানে।

অনেকে মনে করেন, বাংলার পটশিল্পীরা বৌদ্ধযুগের চিত্রকরদের উত্তরসাধক। এ সম্পর্কে ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের মন্তব্য পটুয়াদের পূর্বপুরুষ মাস্করী উপাধিধারী। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বুদ্ধের সময় হতে পটচিত্র এঁকে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করতেন। বাংলার মাস্করীদের নাম পটীদার। ব্রাহ্মণদের দ্বারা অত্যাচারিত পটুয়ারা অনেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেও তাদের পূর্ব পুরুষের বৃত্তি আঁকড়ে ধরেছিলেন।

এক সময় ভারতবর্ষের প্রায় সব এলাকাতেই পটচিত্রের প্রচলন ছিল। প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্র কাব্যাদিতে পটের অনেক প্রমাণ আছে। অবশ্য গুজরাটে এখনও ‘চিত্রকর্থীর’ অস্তিত্ব আছে। এই চিত্রকর্থীরা হচ্ছে পটগানের গুজরাটীয় ভাষায় এবং সেখানকার পটুয়ারা বাংলার পটুয়াদের মতো ঘুরে ঘুরে পট দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করে। বাংলাতেও কোনো এক সময় পটুয়ারা পট দেখিয়ে ও গান শুনিয়ে যেমন অর্থ উপার্জন করতো। আবার সমাজের দরিদ্র মানুষদের লোকশিক্ষা দিতো। তবে সেই পটগানের কাহিনি ছিল পৌরাণিক অথবা অলৌকিক। 

শুধু বৌদ্ধ কিংবা হিন্দু আখ্যান নিয়েই পটগান তৈরি হয়নি, মুসলিম আখ্যান নিয়েও পটগান তৈরি হয়েছে যেমন গাজী-কালুর পটগান। গাজী পীরকে মনে করা হতো বাঘের দেবতা। গাজী কালুর পটের লেখক প্রফুল্ল কুমার পূর্ববঙ্গের গাজীর পট নাচানোর বর্ণনায় একটি চিত্রের উল্লেখ করেছেন, ‘গাজী সাহেব ব্যাঘ্রের উপর সমাসীন ও চারিদিকে ঊর্ধপুচ্ছ ব্যাঘ্রাদির পালায়ন’। ড. সুকুমার সেন তাঁর ‘ইসলামিক বাংলা’ সাহিত্য গ্রন্থে গাজীর ‘পট’ পাদনামে একটি আলোকচিত্র দিয়েছেন, তাতে শ্মশ্রুধারী বাঘের উপর গাজীর মনুষ্যমূর্তি অঙ্কিত দেখা যায়। এ ছাড়াও গাজী-কালু-চম্পাবতীর জীবনকে কল্পনা করে তাদের জীবনের ধারাবাহিকতার উপর বিভিন্ন পটগান তৈরি হয়েছে। 

এ সব প্রাচীন পটের প্রত্যক্ষ নিদর্শন এখন বাংলাদেশের কোথাও পাওয়ার উপায় নেই। তবে বিদেশের অনেক প্রতœতত্ত্বশালায় বা মিউজিয়ামে প্রাচীন পট সংরক্ষিত আছে। ১৭০০-১৯৪০ সালের মধ্যে তৎকালীন ভারত থেকে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পুঁথি পত্রের সঙ্গে নানা ধরনের পট স্থানান্তরিত হয়েছে।

বাংলার পটগান নিয়ে প্রথম গবেষণা করেন গুরুসদয় দত্ত। ১৯৩৫ সালে ‘পটুয়া সঙ্গীত’ নামে যে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় সেখানে পটুয়া সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা এবং এই মাধ্যমটি বিলুপ্ত হওয়ায় বাঙালি সংস্কৃতির মূল্যবান সম্পদের বিলুপ্তির আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন।

পটগানের অভিযাত্রা 

এক সময় ভারতবর্ষের প্রায় সব এলাকাতেই পটচিত্রের প্রচলন ছিল। গুজরাটে এখনও ‘চিত্রকর্থী’র অস্তিত্ব আছে। এই চিত্রকর্থীরা বাংলার পটুয়াদেও মতো ঘুরে ঘুরে পট দেখিয়ে বেড়াতো এবং এর আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। খ্রিষ্টীয় বারো-তেরো শতক থেকে পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে পটুয়ারা বেশ সক্রিয় ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও কিছু কিছু পটুয়া বা পটশিল্পীর অস্তিত্ব টিকে ছিল। পটগানের সম্ভবত সর্বশেষ উপস্থিতি দেখা গেছে সুন্দরবন অঞ্চলে।
বাংলাদেশে এক সময় পটুয়া বা পটশিল্পীরা পটগান দেখিয়ে একদিকে জীবিকা নির্বাহ করতেন, অন্যদিকে সমাজের দরিদ্র মানুষদের লোকশিক্ষা দিতেন। এ সময়ের কিছু পটের নাম এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। চণ্ডীপট, মনসাপট, শক্তিপট, দশাবতারপট, রাসলীলাপট, কৃষ্ণলীলাপট, যমপট, গাজীর পট, শিবপট, চাষপট ইত্যাদি। পুরাণ বা লোককাহিনী নিয়ে তৈরি এসব পটে পার্বতী-শিব-মনসা যেমন স্থান পেয়েছে, তেমন স্থান পেয়েছে রাধা-কৃষ্ণ। তবে এসব কাহিনি পুরাণ-মহাভারত এবং লোকধর্ম থেকে সংগৃহীত হলেও পটুয়াদের তুলিতে সব চরিত্র বাঙালি হয়ে গেছে। পটুয়ার বৃন্দাবন বাংলাদেশ, অযোধ্যা বাংলাদেশ, শিবের কৈলাস বাংলাদেশে এমনকি কৃষ্ণ-রাধা, গোপ-গোপীগণও বাঙালি হয়ে যেতো। শিব পার্বতী রাধা-কৃষ্ণর লীলাকে পটুয়ারা বাংলার পারিবারিক জীবনের অনুরূপ করে তুলতো ছবি আর গান দিয়ে। এর ফলে গ্রামীণ দর্শক এই পটের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতো। পটে আঁকা নদী-খাল-জঙ্গল সবই তাদের পরিচিত। এখানে কাহিনির পাত্রপাত্রী তাই সিনেমার মতো মূর্ত হয়ে দর্শকের সামনে ধরা দিত। প্রচীন পটের অন্যতম বিষয় থাকতো দেব-দেবী, পরে দেব-দেবীর পাশাপাশি পীর-গাজীদের নিয়েও পটগান তৈরি হয়েছে। তারপরেও প্রাচীন পটের গানসমূহ নির্দিষ্টভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সে সময় পটের গানে মোটামুটি পাঁচটি বৈশিষ্ট্য থাকতো। যেমন পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, প্রকৃতি, জীবন-জীবিকা এবং ব্যঙ্গ বা কৌতুক। 

গান ছাড়া পট নির্বাক

পটগানকে আদিম সিনেমা বলা যায়। কারণ, পটগান একটি আখ্যান দর্শকের  সামনে তুলে ধরে সিনেমার মতো। যেমন নদী, বন, জীবজন্তু, পাখি, কীটপতঙ্গ, মেঘরাশি ইত্যাদি। তারপর এর মধ্যে আঁকা হয়েছে মানুষ এবং মানুষের তৈরি অন্যসব যেমন বাড়িঘর, গাড়িঘোড়া, কৃষি সরঞ্জাম, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের ব্যবহার্য জিনিসপত্র, নৌকা, সাঁকো, রাস্তাঘাটা, হাটবাজার ইত্যাদি।

একটি পটের ছবি যা আপাত স্থির। এটি মূর্ত হয়ে ওঠে, পটগায়ক যখন ছবিগুলো ইঙ্গিত করে গান শুরু করেন। গায়ক বন নিধনের কথা বলে যখন ইঙ্গিত করে বনকে, তখন দর্শকের মানসপটে ভেসে ওঠে বন নিধনের পুরো প্রক্রিয়া। চিত্রে বা পটে যে বিষয়টি থাকে না, গানে তা থাকে। আবার গানে যে কথা বলা যায় না, তা দর্শক তার কল্পনায় এঁকে নেয়। যা অনেকটা সিনেমার মতো এবং জীবন্ত। দর্শক যদি শুধু এই গানটা এককভাবে শুনতেন, তাহলে তার মনে একটা চিত্ররূপ গড়ে উঠতো বটে, কিন্তু তাতে প্রকৃতির বা বন নিধনের প্রকৃত রূপ ফুটে উঠতো না।

একটি চিত্র থেকে আরেকটি চিত্র বিচ্ছিন্ন থাকে। কিন্তু গায়ক তার গানের মাধ্যমে পরস্পর বিচ্ছিন্ন দুটি অংশকে জোড়া দেন, কাহিনির ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন।

পটগান ও লোকশিক্ষা

একসময় পটগান ছিলো জনপ্রিয় এবং উপভোগ্য লোকসংগীত। পঞ্চাশের দশকের পর পটগান বিলুপ্ত হওয়া শুরু হয়। কিছু দিন আগেও এটি ছিল না বললেই চলে। ‘রূপান্তর’ ১৯৯৩ সাল থেকে সুন্দরবন অঞ্চলের লোকশিল্পীদের নিয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এই লোকমাধ্যমটি টিকিয়ে রাখার জন্য। লোকশিল্পীদের কর্মউদ্যোগী করে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণকে সচেতন করায় যুক্ত করা। পটগান এর মাধ্যমে লোকশিল্পীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পরিবেশ তৈরিও এই কর্মউদ্যোগে রয়েছে।

প্রাচীনকালে নিমাই সন্ন্যাস, চণ্ডীদাস-রজকিনী, গাজীর পট, বনবিবির পট, দক্ষিণরায় অথবা এলাকার আলোড়ন সৃষ্টিকারী যে কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে পটগান পরিবেশিত হতো। পটগানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল গান ও নৃত্যের সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যপূর্ণ ছবি দেখানো। গানের সুর ও কথা সহজ থাকে, লোকভাষার এই গানে থাকে মাটির গন্ধ।

গবেষণাধর্মীতায় পটগানের মূল ৩টি ধাপ হলো: প্রথমটি সুনির্র্দিষ্ট বিষয় বস্তুভিত্তিক গীত রচনা ও সুর সংযোজন; দ্বিতীয়টি গানের বিষয়বস্তু ও কথার বর্ণনা অনুসারে চিত্রাঙ্কন; তৃতীয়টি পরিবেশনরীতি ও কৌশলভিত্তিক প্রযোজনা নির্মাণ।

মোংলায় বয়স্ক সংস্কৃতিকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজীর পটে মাঝখানে বাঘের পিঠে চড়ে আছেন গাজী আর উপরে নিচের ৩টি করে মোট ৬টি ছবি থাকতো। উপস্থাপন রীতি ছিল একজন গায়েন পায়ে ঘুঙুর বেঁধে নেচে-নেচে, ঘুরে-ঘুরে, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের পট দেখাতেন।পরে দল হিসাবে যখন পটগান হতো তখনও লোকযন্ত্র ঢোলক, জুড়ি, হারমোনিয়াম সহযোগে পরিবেশিত হতো পটগান। গাজীর পট, কালিঘাটের পট, যমপট এর উপস্থাপন রীতি ছিল এই একই ধরনের। 
ভারতের পশ্চিম বাংলায় বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগণা, মেদিনীপুর, বাকুড়া, বীরভূম, নদীয়া জেলায় যেসব পট এখনো পরিবেশিত হতে দেখা যায় সে সব ঐ একই উপস্থাপন রীতির। শুধু কালক্রমে চিত্রকলার কিছু ঢঙ পরিবর্তন হয়েছে।  

লোকনাট্যের আঙ্গিকে পটগান পরিবেশন করা হয়। এ পদ্ধতিতে ২ জন শিল্পী কাঁধে করে পট নিয়ে নেচে নেচে মঞ্চে ঢুকবে সাথে মূল গায়েন, ঢোল এবং জিপসি বাজাবে। ৫ জনে তালে-তালে নৃত্যের ছন্দে মঞ্চে প্রবেশ করবে। মঞ্চের দুইপাশে থাকবে যন্ত্রীদল যারা যন্ত্র সঙ্গত ছাড়াও দোহার হিসেবে কাজ করবে। পটের ক্যানভাস ধরে থাকবে দুজন। তারা দৃশ্য পরিবর্তন করবে এবং দোহার হিসেবে ওরা গানের সাথে অভিব্যক্তি প্রকাশ করবে। এই উপস্থাপন রীতি নির্মাণ করে পটগানকে একটি লোকনাট্যের আঙ্গিকে উন্নীত করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য মূল গায়েন যখন পটগান প্রদর্শনের স্থানে থাকে তখন ঢুলি ও নৃত্যশিল্পী পট ক্যানভাসের দুই পাশে অবস্থান নেয় এবং যখন পটের প্লট পরিবর্তন করা হয় তখন ঢুলি ঢোল ও নৃত্যশিল্পী জিপসি বাজিয়ে নেচে মূলগায়েন উপস্থাপনাকে রিদমিক ও নান্দনিক করে। দোহাররা মূল গায়েনের নির্দেশ অনুযায়ী দোহার দেয়। পট ক্যানভাসের একেকটি প্লটের গান হয়ে গেলে একপাশের পটপ্রদর্শক পট স্ট্যান্ড থেকে ক্যানভাস ছেড়ে দিলে অন্য পাশের পটপ্রদর্শক পট স্ট্যান্ডে জড়িয়ে নেয়। পটগান শেষ হয়ে গেলে দুজন পটপ্রদর্শক পটের ক্যানভাস পট স্ট্যান্ডে জড়িয়ে কাঁধে করে বাজনার তালে তালে মঞ্চের ডান থেকে সামনে দিয়ে ঘুরে বেরিয়ে যায়। এরপর ঢুলী, নৃত্যশিল্পী মঞ্চের পিছনে নাচতে নাচতে গিয়ে দর্শকের উদ্দেশ্যে অভিবাদন জানিয়ে শেষ করে।


 

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়