ঠাকুরগাঁওয়ে রঙিন মাছে সফল মাদরাসা শিক্ষক তাজুল
মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল, ঠাকুরগাঁও || রাইজিংবিডি.কম
শিক্ষক তাজুল ইসলামের খামারের রঙিন মাছ
রঙিন মাছ চাষ—এখন আর কেবল শখের বিষয় নয়, বরং সম্ভাবনাময় একটি লাভজনক ব্যবসা। শিক্ষকতার পাশাপাশি এই মাছ চাষ করে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার হরিহরপুর গ্রামের মো. তাজুল ইসলাম। নিজের উদ্যোগে গড়ে তোলা ‘রানা অ্যাকুরিয়াম ফিস ফার্ম’ থেকে তিনি বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত মুনাফা অর্জন করছেন।
মো. তাজুল ইসলাম রহিমানপুর আলিম মাদরাসার সহকারী শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি ২০১৯ সালে বাড়ির উঠানেই শুরু করেন রঙিন মাছের চাষ। শুরুতে এটি ছিল নিছক শখের একটি উদ্যোগ। তবে, সময়ের ব্যবধানে সেই শখ রূপ নিয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ ও বাণিজ্যিক খামারে।
স্কুল শিক্ষার্থীকে নিজের খামারের মাছ দিচ্ছে তাজুল ইসলাম
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে এই শিক্ষকের খামারে গাপ্পি, মলি, গোল্ডফিশসহ প্রায় ২০ প্রজাতির নানা জাতের রঙিন মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে। এসব মাছ স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকেও সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান তাজুল ইসলাম।
উদ্যোক্তা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “শুরুতে শখের বশে রঙিন মাছ চাষ করলেও এখন এটি আমার একটি নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস। দিনে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা সময় দিলেই খামারের কাজ শেষ করা যায়। অল্প পুঁজি এবং কম পরিশ্রমে ভালো লাভ পাওয়া সম্ভব। ভবিষ্যতে এই খামারকে আরো বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
বাড়ির উঠানে তৈরি করা রঙিন মাছের খামারে কাজ করছেন তাজুল ইসলাম
তিনি জানান, বিভিন্ন দামে মাছ বিক্রি করে থাকেন। তার কাছে ১০টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত দামের রঙিন মাছ রয়েছে। পোনা থেকে মাছ উৎপাদন করে বিক্রি করেন বলেও জানান তিনি।
এই রঙিন মাছের খামারটি দেখতে ও মাছ কিনতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকার অনেকেই এখানে এসে মাছ কিনছেন এবং নতুন উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
খামারে মাছ কিনতে আসা সিয়াম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “এখানে বিভিন্ন ধরনের সুন্দর রঙিন মাছ পাওয়া যায়। দামও কম। তাজুল স্যারের এই উদ্যোগ আমাদের অনেককে উৎসাহ দিচ্ছে।”
রঙিন মাছ
শিক্ষক তাজুল ইসলামের প্রতিবেশী রিমা বলেন, “রঙিন মাছের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এমন উদ্যোগ এলাকায় আরো হলে অনেকেই স্বাবলম্বী হতে পারবেন।”
ঠাকুরগাঁও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, “রঙিন মাছের চাষ বর্তমানে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। উদ্যোক্তাদের মাছ বাজারজাতকরণসহ প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা মৎস্য বিভাগ থেকে দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। জেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।”
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট পুকুরের সংখ্যা ২১ হাজার ৪৬৮টি। পোনা সরবরাহকারী রয়েছেন ২৬৭ জন এবং মৎস্যচাষি আছেন ১৪ হাজার ৫৬৩ জন। জেলায় মাছের বার্ষিক চাহিদা ৩৬ হাজার ৩৯১ দশমিক ৬৬ মেট্রিক টন হলেও উৎপাদন হচ্ছে ৩৪ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন। মাছের ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০১ মেট্রিক টন।
এলাকাবাসীর মতে, তাজুল ইসলামের মতো শিক্ষিত যুবকরা যদি রঙিন মাছ চাষে এগিয়ে আসেন, তাহলে একদিকে যেমন বেকারত্ব কমবে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতেও এই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। রঙিন মাছের চাষে সফল এই শিক্ষক শুধু নিজের পরিবারকেই এগিয়ে নিচ্ছেন না, বরং এলাকার তরুণদের অনুপ্রাণিত করছেন।
ঢাকা/মাসুদ