ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘আমরা সবাই হাদি হব’: হাদি হত্যার প্রতিবাদে এককণ্ঠে ছাত্রসমাজ

ডেস্ক রিপোর্ট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৬:০৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
‘আমরা সবাই হাদি হব’: হাদি হত্যার প্রতিবাদে এককণ্ঠে ছাত্রসমাজ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধা ওসমান বিন হাদির হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, গায়েবানা জানাজা, সড়ক অবরোধ ও শপথ পাঠ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে এক শোকবার্তায় উপাচার্য এই শোক প্রকাশ করেন। শোকবার্তায় তিনি মরহুম শরিফ ওসমান হাদির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু দেশ ও সমাজের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তার স্মৃতি সহপাঠী, শুভানুধ্যায়ী ও সংশ্লিষ্ট সকলের হৃদয়ে চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে।”

আরো পড়ুন:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) রাত সাড়ে ১০টার পর জোহা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহরের অভিমুখে অগ্রসর হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা হাদি হত্যার বিচার, আধিপত্যবাদ বিরোধিতা ও জুলাইয়ের চেতনা রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। রাকসু জিএস সালাহউদ্দীন আম্মার বলেন, “হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।” রাবি ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, “খুনিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হন। প্রধান ফটক থেকে বের হওয়া মিছিল রায়সাহেব বাজার ও তাঁতিবাজার মোড় ঘুরে সড়ক অবরোধ করে। পরে বিশ্বজিৎ চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, হাদিকে হত্যা মানে জুলাইয়ের চেতনাকে হত্যার চেষ্টা। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দেন তারা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বটতলা থেকে শুরু হওয়া মিছিল শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে জাকসু ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু শিক্ষার্থীদের শপথ পাঠ করান। শপথে হাদির হত্যার বিচার নিশ্চিত ও তার রেখে যাওয়া কাজ সম্পন্ন করার অঙ্গীকার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের সূচনা হয়। জিয়া মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে প্রধান ফটক সংলগ্ন খুলনা–কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। তারা হাদির হত্যার দ্রুত বিচার, খুনিদের গ্রেপ্তার এবং ব্যর্থতার দায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন। একই দাবিতে রাত ১টার দিকে ইবির নারী শিক্ষার্থীরাও মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকে সমবেত হন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আব্দুল জব্বার মোড়ে গায়েবানা জানাজা আদায় শেষে শিক্ষার্থীরা টিএসসি ও উপাচার্যের বাসভবন প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, হাদির হত্যাকাণ্ড মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনের ধারাবাহিক অংশ।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) মধ্যরাতে বিভিন্ন হল থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। প্রধান ফটকে অনুষ্ঠিত সমাবেশে খুনিদের গ্রেপ্তার, ভারত থেকে ফেরত এনে বিচার এবং তরুণ রাজনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) রাত সাড়ে ১১টায় প্রধান ফটক থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল মডার্ন মোড় ও শাপলা চত্বর ঘুরে পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। এতে কারমাইকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও সংহতি জানান। বক্তারা বলেন, জুলাই বিপ্লবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

সব ক্যাম্পাসের বিক্ষোভে ‘তুমি কে আমি কে, হাদি-হাদি’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘গোলামী না আজাদী’, ‘খুনীদের ফাঁসি চাই’, ‘আমরা সবাই হাদি হবো’সহ বিভিন্ন স্লোগান ধ্বনিত হয়।

এদিকে হাদির মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ও পরবর্তী সময়ে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তার সাহসী ভূমিকা দেশ ও সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।”

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর/পুরান পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন শরিফ ওসমান বিন হাদি। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পাস প্রতিনিধিরা]

ঢাকা/সৌরভ/ফাহিম/লিমন/হাবীব/তানভীর/লিখন/হাসিব/সাজ্জাদ/জান্নাত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়