ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হাঁসে হাসি হবিগঞ্জের তরুণদের মুখে

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১১, ২০ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
হাঁসে হাসি হবিগঞ্জের তরুণদের মুখে

সুজন মিয়া হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এক সময় বেকার ছিলেন। হাঁস পালন করে এখন স্বাবলম্বী। তার ছোট খামার থেকে বছরে তিনি লাখ খানেক টাকা আয় করেন।  

সুজনের মতো হাঁস পালন করে জেলার বহু তরুণের সুদিন এসেছে। তাদের দেখাদেখি হাঁস পালন বাড়ছে। দূর হচ্ছে বেকারত্ব।  

জেলার ভাটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি বানিয়াচঙ্গ, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই, নবীগঞ্জ উপজেলার হাওরাঞ্চলের মানুষের বছরে আট মাস তেমন কাজ থাকে না। তারা শুধু বোরো ধানের উপর নির্ভরশীল। বিকল্প পেশা হিসেবে তারা হাঁস পালনে ঝুঁকেছেন।

বোরো ধান সংগ্রহের পর হাওরের শামুক খেয়ে হাঁসগুলো বড় হয়। আলাদা করে খাদ্য দেওয়া লাগে না। হাঁসের খামারিরা চৈত্র-বৈশাখ মাসে বাচ্চা সংগ্রহ করেন। ৫০০ থেকে ৪ হাজার হাঁস নিয়ে একটি পাল বা খামার গড়ে ওঠে। এক হাজার হাঁস খামারে থাকলে প্রতিদিন ৯০০ ডিম পাওয়া যায়। একটি হাঁস চার বছর পর্যন্ত ডিম দেয়। একটি ডিম ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়।

বানিয়াচঙ্গ উপজেলার খামারি সাখাওয়াত হোসেন জানান, ৫০০ হাঁসের একটি খামার থাকলে একজন খামারি মাসে ১৪/১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারে। 

বাহুবল উপজেলার অলুয়া গ্রামের বাসিন্দা আবিদ আলী। এক যুগ ধরে হাঁসের খামার করছেন। খুব অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলেন। এখন তার খামারে ২ হাজার ৫০০ হাঁস রয়েছে। আলাপকালে তিনি বলেন, হাওরের খাল, ডোবা ও অনাবাদি জমিতে প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে হাঁসগুলো বড় হয়।

তিনি জানান, হাঁস পাঁচ মাস বয়স থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে। একটি হাঁস চার বছর পর্যন্ত বাঁচে এবং খাবার দিলে ১২ মাসই ডিম দেয়। তবে তিনি জানান, যেহেতু তার হাঁসগুলো প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বড় হয়, সেজন্য তিনি এক মৌসুম অর্থাৎ চার/পাঁচ মাস ডিম পাড়ার পর সেটি মাংস হিসেবে বিক্রি করে দেন।

তিনি জানান, তার খামার থেকে তিনি বছরে ৭/৮ লাখ টাকা আয় করেন। তবে প্রতিবছর এই পরিমাণ আয় করতে পারেন না। হাঁস পালনে ঝুঁকিও রয়েছে। এ জন্য তিনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। 

একই উপজেলার অমৃতা গ্রামের সাদিকুর রহমান হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার খামারে ৭৫০টি হাঁস রয়েছে। তিনি বলেন, তিনি হাঁস ও ডিম বিক্রি করে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করতে পারেন।

তবে তিনি জানান, বন্যা ও করোনার কারণে এ বছর তিনি লাভ করতে পারছেন না। বন্যায় হাওর-বিলে পানি বেশি হওয়ায় হাঁসের প্রাকৃতিক খাবার মিলছে না। আবার করোনার কারণে হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় হাঁসের মাংসের চাহিদা কমে গেছে।

তিনি জানান, অন্য সময়ে একশত হাঁস ২৬/২৭ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১৮/১৯ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।   

বাহুবল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন ভূইঞা বলেন, উপজেলাজুড়ে শতাধিক খামারে ৮২ হাজার হাঁস রয়েছে। হাঁস পালন করে উপজেলার তরুণরা স্বাবলম্বী হতে পারছে। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, হাওর-বাঁওড়ের জেলা হবিগঞ্জে হাঁস পালনের জন্য প্রচুর প্রাকৃতিক খাবার পাওয়া যায়। এতে খামারিরা লাভবান হন।

তিনি বলেন, তবে এখন শুধু হাওর নয়, বিভিন্ন উপজেলায় হাঁসের খামার গড়ে উঠছে। জেলায় প্রায় ২ হাজার ১০০ খামার রয়েছে। খামারসহ বাড়ি বাড়ি ১১ লাখ হাঁস পালন করা হচ্ছে। খামারিদের বেশিরভাগ তরুণ। তাদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে বলে জানান এই কর্মকর্তা।


মামুন/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়