ঢাকা     সোমবার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

এক সংগ্রামী কবিয়ালের জীবন-অনুসন্ধান

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ১০ মার্চ ২০১৩   আপডেট: ০৮:৪৫, ১১ আগস্ট ২০২০
এক সংগ্রামী কবিয়ালের জীবন-অনুসন্ধান

ডেস্ক রিপোর্টার
কবিগানের দুই জুটি- কবিয়াল রমেশ শীল ও কবিয়াল ফণী বড়ুয়া। যে আসরে তাঁরা উপস্থিত হতেন, বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো মানুষ ছুটে আসতো সে আসরে। দর্শকদের উচ্ছ্বসিত করতালি আর খুশিতে ফেটে পড়া মুহূর্ত এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। কবিয়াল রমেশ শীল অনেক আগেই গত হয়েছেন। ফণী বড়–য়ার  জীবনাবসান হলো ২০০১ সালে। কবিয়াল ফণী বড়ুয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সম্ভবত একটি যুগেরও অবসান হয়েছে ।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম অনোমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘কবিয়াল ফণী বড়ুয়া স্মারকগ্রন্থ’। শিমুল বড়ণ্ডয়া সম্পাদিত ৩৫২ পৃ: এ স্মারকগ্রন্থে ‘স্মরণ ও মূল্যায়ণ’ ‘প্রামাণ্য চিত্র’ ‘সাক্ষাৎকার’ ‘নিবেদিত কবিতা-ছড়া’ ‘পরিবারের স্মৃতি’ ‘পুরস্কার ও সংবর্ধনা’ ‘চিঠি’ ‘জীবনপঞ্জি’ ‘আলোকচিত্র’ মিলে এক সমৃদ্ধ প্রকাশনা।
‘চাটগাঁয়ের কবিয়াল’ শিরোনামে কবি  সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন লাম্বুরহাট ঘুরে ঘুরে একদিন হাটের দর জেনে বেড়াচ্ছি, হঠাৎ একজন এসে বলল দেখা করবেন ফণী বড়ুয়ার সঙ্গে? ফণী বড়ুয়া হচ্ছেন রমেশ শীলের সবচেয়ে প্রিয় সাগরেদ। ‘দেশ জ্বলে যায় দুর্ভিক্ষের আগুনে/ তবুও দেশ জাগিল না কেনে’ তাঁর গানের এ দুটো কলি অনেককেই গুণগুণ করতে শুনেছি। হাটের মধ্যে একটা ঘড়ি সারাবার দোকান। মাথার চুলগুলো ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া, দেখলে বয়স অল্প বলেই মনে হয়। সঙ্গে যিনি ছিলেন তিনি আলাপ করিয়ে দিলেন- ইনিই ফণী বড়ুয়া। মুখে সর্বদা একটা লাজুক ভাব। গায়ে হাত গুটানো শার্ট। দেহে কিংবা মনে কোথাও জড়তা নেই। চাঁছা-ছোলা কথা, কোন ঘোরপ্যাচ নেই। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে এভাবে উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিয়েছেন কবিয়াল ফণী বড়ুয়া। তারাশঙ্করের ‘কবি’ উপন্যাসের নায়ক নেতাই চরণের মতোই ফণীন্দ্র লাল বড়ুয়া কবিয়াল ফণী বড়ুয়া নামে খ্যাত হয়ে ওঠেন। কবি হয়ে ওঠার এ সাধনা বড়ই বিচিত্র। লোকবাংলার মৌলিক সাহিত্যের অন্যতম শাখা কবিগান। অষ্টাদশ শতকে বাংলার সামন্ত জমিদারদের মনোরঞ্জনের জন্য কবিগানের উদ্ভব হলেও শুরুতে কবিগান ছিল আদি রসাত্মক, স্থূল রুচির এবং অশ্লীলতাপূর্ণ। তাই শহুরে শিক্ষিত, ভদ্র সমাজের কাছে কবিগান ছিল অপাংক্তেয়। ঊনিশ শতকের প্রথমপাদে কবিগান কিছুটা অশ্লীলতামুক্ত হয়ে বাংলার বিভিন্ন ভাববাদ নির্ভর হয়ে ওঠে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে কবিগান সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ারে পরিণত হয়। বামপন্থী রাজনৈতিক ধারার স্পর্শে কবিগান সামাজিক বৈষম্য, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চেতনা, শোষিত বঞ্চিত কৃষক, শ্রমিকের অধিকারের কথা, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও সংগ্রামী চেতনার জীবনভাষ্য হয়ে ওঠে।

কবিয়াল ফণী বড়ুয়া তাঁর গুরু কবিয়াল রমেশ শীলকে সঙ্গে নিয়ে কবিগানকে এক বিশেষ স্বাতন্ত্র্যবোধ ও চারিত্র্যে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শ্রেণীসংগ্রামের কথা, গণমানুষের মুক্তির কথা বলার জন্য এ দুই কবিয়াল বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন ‘একাল-সেকাল’ ‘ধনতন্ত্র-সমাজতন্ত্র’ ‘কৃষক-জোতদার’ ‘চাষী-জমিদার’ ইত্যাদি। গণমানুষের মুক্তিসংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ কবিয়াল ফণী বড়ণ্ডয়াকে স্মরণ ও মুল্যায়ন খুব জরুরি। না হলে বাংলার আদি শিল্পের এই ধারাটি সম্পর্কে মানুষ একদিন বিস্মৃত হবে।
গুণীজন সৌজন্যে গ্রন্থনা করেছে আনু মোস্তফা

রাইজিংবিডি২৪.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়