লেখকের দায় সুস্থ মূল্যবোধের কাছে: হাসনাত আবদুল হাই
স্বরলিপি || রাইজিংবিডি.কম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে সিভিল সার্ভিসে দীর্ঘ ও সফল ক্যারিয়ার গড়েন হাসনাত আবদুল হাই। বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করলেও লিখছেন অবিরাম। বর্নাঢ্য, বিস্তর এক সৃষ্টিশীল জগৎ তাঁর। জীবনকে মনে করেন একটি ‘যাত্রা’। লেখক হিসেবে নিজের দায় মানুষ এবং সুস্থ মূল্যবোধের কাছে বলে মনে করেন তিনি। বহু সম্মাননায় ভূষিত এই কথাসাহিত্যিক সম্প্রতি ‘ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার’ আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি এই সাক্ষাৎকারে অল্প পরিসরে বলেছেন লেখার উপজীব্যসহ নানা বিষয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্বরলিপি।
রাইজিংবিডি: সমাজ বাস্তবতার নিরীক্ষা শুরু থেকেই করে চলেছেন। সংগ্রামী মানুষের কথা এসেছে, শোষিত মানুষের কথা লিখেছেন, সার্বজনীন আবহে তৈরি করেছেন সমতল ও পাহাড়ের মানুষের মধ্যকার পার্থক্য। একটি বিষয় বা বস্তুকে কখন লেখার জন্য প্রয়োজনীয় বলে ধরে নেন?
হাসনাত আবদুল হাই: দু’ভাবে হয়। প্রথমত কতগুলো বিষয় আছে যা চলমান। যেমন দারিদ্র, নারীদের অবমাননা, তাদের অবদমিত করে রাখা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ক্ষমতার অপব্যবহার, হিংসা-দ্বেষ, বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে সংঘাত। এই সব বিষয়ে যে কোনো সময় লেখা যায়। আর কিছু বিষয় সাম্প্রতিক। যেমন জুলাই আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সড়ক দুর্ঘটনা— এসব নিয়েও আমি লিখি।
রাইজিংবিডি: জীবনীভিত্তিক আপনার একাধিক উপন্যাস রয়েছে। আলোচিত একটি উপন্যাস ‘নভেরা’। উপন্যাসে নভেরার শিল্পজীবন এবং ব্যক্তিজীবন দুই-ই প্রাধান্য পেয়েছে। এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু এবং প্রয়োজনীয় উপাদান কীভাবে সংগ্রহ করেছেন? উপন্যাস প্রকাশের পরবর্তীতে নভেরার পরিবার কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল কিনা?
হাসনাত আবদুল হাই: যারা নভেরাকে চিনতেন তাদের ইন্টারভিউ নিয়ে উপন্যাসটা লিখেছি। তার বড় বোন নভেরা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য থাকায় আপত্তি করেছেন। আমি বলেছি এসব কথা আমি তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর মুখে শুনে লিখেছি৷ তার আপত্তি লিখে পাঠালে বইয়ের পরিশিষ্ট হিসেবে ছাপা হয়েছে।
রাইজিংবিডি: আপনার লেখায় নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধ এসেছে। আপনি ১৯৬৫ সাল থেকে একাত্তরের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকে কীভাবে দেখেছেন? এই যুদ্ধ আপনার লেখক সত্তা বিকাশে কীভাবে সহায়তা করেছে?
হাসনাত আবদুল হাই: মুক্তিযুদ্ধকে দাসত্ব থেকে, কলোনিয়াল শক্তি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তির উপায় মনে করেছি। মুক্তিযুদ্ধ লেখার উপকরণ দিয়েছে এবং লেখকের দায়িত্ব সম্বন্ধে আরো সচেতন করেছে।
রাইজিংবিডি: হোটেলে, ক্যাফেতে বসে আপনি গল্প, উপন্যাস লেখেন। সেখানেও মানুষের উপস্থিতি থাকে, আপনাকে অনেকে চেনেন-জানেন; লেখা চলাকালে কেউ এসে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সেই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেন?
হাসনাত আবদুল হাই: আমি ভদ্রভাবে জানাই যে, কথা বলতে পারবো না।
রাইজিংবিডি: উপন্যাস লিখেছেন পঞ্চাশের অধিক। ছোটগল্প, ভ্রমণ কাহিনি এগুলো তো আছেই—লেখালেখির শুরু থেকেই কী অনেক বেশি লিখতেন? ২০০০ সালে অবসর নিলেন, আমরা জানি যে, আপনার স্ত্রী ২০১২ সালে মারা গেছেন। এই একাকীত্ব আপনার জীবন-দর্শনে কী যোগ করেছে?
হাসনাত আবদুল হাই: উপন্যাসের সংখ্যা এখন ৭৫। চাকরিকালীন রাতে এবং ছুটির দিনে লিখেছি। একাকীত্ব আমাকে আরো বেশি করে বই পড়তে, লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
রাইজিংবিডি: তরুণ লেখকদের লেখা নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
হাসনাত আবদুল হাই: কয়েকজন খুব ভালো লিখছে। কিন্তু তাদের সংখ্যা কম।
রাইজিংবিডি: আপনার জীবনে অনেক সম্মাননা পেয়েছেন, সম্প্রতি ব্র্যাংক ব্যাংক সমকাল আজীবন সাহিত্য সম্মাননা পেলেন— এই প্রাপ্তিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
হাসনাত আবদুল হাই: উৎসাহ বোধ করছি।
রাইজিংবিডি: আপনার কাছে অল্প কথায় জানতে চাই— জীবনের মানে কী, লেখকের দায় কিসে?
হাসনাত আবদুল হাই: জীবনের মানে এক যাত্রা, যেখানে ভালো- মন্দ দুই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়। মন্দের অভিজ্ঞতাকে বড় হতে না দিয়ে ভালোকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে জীবনযাপন আনন্দময় হবে। আমি মনে করি, লেখকের দায় মানুষের কাছে, সুস্থ মূল্যবোধের কাছে।
রাইজিংবিডি: আপনার কবিতা নিয়ে বোধহয় একটু কম কথা হয়। ‘পুলিশ এলে বলবো আইডি নেই কবিতার বই দুটো ছাড়া’ এই বইয়ে অনেক প্রেমের কবিতা আছে। যার প্রেমের কাছে আপনি ঋণী তার সম্পর্কে একটু জানতে চাই।
হাসনাত আবদুল হাই: প্রেমের কবিতাগুলি এক বন্ধুর সঙ্গে চ্যালেঞ্জ দিয়ে লেখা যে, এই বয়সেও আমি রোমান্টিক হতে পারি।
রাইজিংবিডি: শেষ প্রশ্ন হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে সিভিল সার্ভিসে কেন গিয়েছিলেন?
হাসনাত আবদুল হাই: সেই সময়ের সামাজিক মূল্যবোধে সিভিল সার্ভিসের স্থান ও মর্যাদা উপরে ছিল, সেজন্য।
রাইজিংবিডি: এখন কী লিখছেন?
হাসনাত আবদুল হাই: একটা গবেষণামূলক লেখা নিয়ে খুব ব্যস্ত আছি।
তারা//