ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

নৌকার হাটে নেই বেচা-কেনা

অলোক সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২০ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
নৌকার হাটে নেই বেচা-কেনা

ঘাটে বাঁধা রয়েছে সারি সারি নতুন নৌকা। ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন বিক্রেতারা। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় ঝালকাঠির সীমান্তবর্তী শত বছরের আটঘরের নৌকার হাটে নেই বেচা-কেনা। নৌকার কারিগর, আড়ৎদার আর ইজারাদসহ ৫ হাজার পরিবার পড়েছে চরম বিপাকে।

নৌকার কারিগর অমল কান্তি মিস্ত্রী বলেন, ‘তার বাপ-দাদার সময় থেকেই নৌকা গড়ে আসছি। ছোট থেকে এ কাজ করছি বলে অন্য কোনো পেশায় যেতে পারেনি। প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু হওয়া হাট চলে ভাদ্র মাস পর্যন্ত। চার মাস নৌকা বিক্রি করে যে আয় হয় তা দিয়েই পুরো বছর চলে যায়। এ বছর হাট শুরু হয়েছে দু’সপ্তাহ হলো। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে নৌকার হাটে ক্রেতা নেই। তাই বেচা-বিক্রিও নেই। এমন চলতে থাকলে এ বছর পথে নামতে হবে।’

আড়ৎদার সনজিব হাওলাদার বলেন, ‘প্রতি বছর ৫০০ থেকে ৬০০ নৌকা তৈরি করি।  প্রতি হাটে ২৫০০ থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা করে এক একটি নৌকা বিক্রি করি। মাছের ঘের, এ মৌসুমে পেয়ারা পাড়া, মাছ ধরা, বিলাঞ্চলে ভাসমান হাট-বাজারে বেচা-কেনা হয় নৌকায়। বিল অঞ্চলে যাতায়াতেও নৌকাই একমাত্র ভরসা। তাই চার মাসে লাখ খানেক নৌকা বেঁচা কেনা হয় এই হাট থেকে। কিন্তু এবার বিক্রি খুব কম।’

ঝালকাঠি ছাড়াও পিরোজপুর বরিশাল ও মাদারীপুর, ফরিদপুরের লোকজন হাটে এসে নৌকা কিনে নিয়ে যায়। এক দেড় বছর এ ডিঙি নৌকাগুলো থাকে। তাই প্রতি বছরই নৌকা কেনেন ক্রেতারা। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর নৌকার মৌসুম শুরু হলেও ক্রেতা শূন্য হাট।

আজিজুল ইসলাম নামে এমন এক ফরিয়া বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে নৌকা কেনার লোকজন কম আসবে ধারণা করেই এ বছর ব্যবসা বাড়ায়নি।’

আটঘরের এ হাটটি ঝালকাঠি সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী। হাটের দোকানি থেকে শুরু করে ক্রেতাও পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলারই বেশি। এ দুই জেলার ৫ হাজার পরিবার নৌকা বেচা-কেনার সঙ্গে জড়িত।

পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার চার নম্বর আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখর সিকদার বলেন, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ হাটটি সপ্তাহে দু’দিন বসে। শুক্র ও সোমবার। নৌকা ছাড়াও বিভিন্ন তরকারি, গ্রামীণ শিল্প ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে হাট বসে। প্রতি বছর বৈশাখ মাস থেকে হাটের ইজারা হয়। এ বছর পুরোহাটের ইজারা হয়েছে ২৫ লাখ টাকায়। কিন্তু করোনায় স্বাস্থ্য বিধি রক্ষায় গত বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস জুড়ে হাটের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত দু’সপ্তহ হলো হাট শুরু হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় হাটে ক্রেতা নেই। সাধারণ বিক্রেতা ছাড়াও এ বছর হাটের ইজারাদারকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হবে।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলীর বলেন, নৌকা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের এই দুর্দিনে ঋণসহ সহযোগিতা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হবে।



ঝালকাঠি/অলোক সাহা/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়