ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কর্মসূচি ছাড়াই কাটলো সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস 

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৬, ৩০ জুন ২০২১  
কর্মসূচি ছাড়াই কাটলো সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস 

ফাইল ফটো

বুধবার (৩০ জুন) সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে হবিগঞ্জের চা বাগানগুলোতে তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। 

প্রতি বছর এই দিবসটিতে জেলার চুনারুঘাট, মাধবপুর, বাহুবল, নবীগঞ্জ উপজেলার চা বাগানগুলোতে বসবাসকারি প্রায় ৩০ হাজার সাঁওতাল দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেন।

এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলার চানপুর চা বাগানের বাসিন্দা ও আদিবাসী ফোরাম হবিগঞ্জ জেলার নেতা স্বপন সাঁওতাল বলেন, ‘হবিগঞ্জের চা বাগানগুলোতে প্রায় ৩০ হাজার সাঁওতাল রয়েছে। এদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। প্রতি বছর জাঁকজমকভাবে দিবসটি পালন করলেও এবার করোনার জন্য কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। তবে কয়েকটি বাগানে সীমিত আকারে কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন হওয়ার কথা রয়েছে।’

স্বপন সাঁওতাল বলেন, ‘সহজ-সরল সাঁওতালরাই এই উপমহাদেশের দুর্গম জঙ্গল ও ভূমিকে কঠোর পরিশ্রম করে আবাদী জমিতে রুপান্তর করে কৃষির প্রচলন করে আসছেন। এখনও সাঁওতালরা চা শিল্প ও কৃষিতে যেভাবে কাজ করছেন, আর কেউই এভাবে কাজ করেন না। কিন্তু সাঁওতালরা তাদের এই পরিশ্রমের কোন স্বীকৃতি পাননি। সরকারি কোনো পৃষ্টপোষকতা না থাকায় আমাদের সংস্কৃতি ও ভাষাবিলীন হওয়ার পথে।’

একই বাগানের বাসিন্দা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের চার ভাইয়ের নেতৃত্বে আদিবাসীরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ সৈন্য ও তাদের দোসর অসৎ ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর ও মহাজনদের অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা।’

নৃপেন পাল বলেন, ‘১৮৫৫ সালের ৩০ জুন যুদ্ধ শুরু হয়। সাঁওতালরা তীর-ধনুক ও দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করলেও ইংরেজ বাহিনীর হাতে ছিলো বন্দুক ও কামান। তারা ঘোড়া ও হাতি যুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। এ যুদ্ধে ইংরেজ সৈন্যসহ প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল যোদ্ধা মারা যায়। সাঁওতাল বিদ্রোহের লেলিহান শিখা ব্রিটিশ সরকারের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধে সিদু, কানহু, চান্দ ও ভাইরো পর্যায়ক্রমে নিহত হন। ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাসে যুদ্ধ শেষ হয় ও বিদ্রোহের পরিসমাপ্তি ঘটে।’

চা শ্রমিকদের নাট্য সংগঠন দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘শুধু সাঁওতালরা নয় পুরো চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীই অধিকার বঞ্চিত রয়েছে। করোনার প্রকোপ থাকায় এ দিবসটিতে তেমন কোনো আয়োজন করা হয়নি।’

উল্লেখ‌্য, ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের চার ভাই সিদু,কানহু, চান্দ ও ভাইরোর নেতৃত্বে আদিবাসীরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। অধিকার আদায়ের সে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ হাজার সাঁওতাল যোদ্ধা।

মামুন/মেয়া/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়