ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

ঈদের চার দিনে পঞ্চগড়ে সড়কে প্রাণ গেছে ৭ জনের

আবু নাঈম, পঞ্চগড় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ৭ মে ২০২২   আপডেট: ০৮:৩০, ৭ মে ২০২২
ঈদের চার দিনে পঞ্চগড়ে সড়কে প্রাণ গেছে ৭ জনের

ঈদ উদযাপন আনন্দের হলেও এবার বিষাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। গত চার দিনে এ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারীসহ ৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এতে ম্লান হয়েছে নিহতদের পরিবারগুলোর ঈদ আনন্দ। 

ঈদুল ফিতরের দিন তথা গত মঙ্গলবার (৩ মে) থেকে শুক্রবার (৬ মে) পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। তবে প্রতিটি দুর্ঘটনাই ছিল মোটরসাইকেল কেন্দ্রিক। নিহত ৭ জনের মধ্যে ৬ জনেরই বয়স ২৫ বছরের নিচে।

ঈদের দিন স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেল যোগে ঘুরতে বের হন শারমিন আক্তার (২২)। তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড় জাতীয় মহাসড়কের মাগুরমারি চৌরাস্তা এলাকায় পৌঁছালে চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনের চাকায় ঢুকে যায় পরনের বোরকার অংশ। এতে সড়কে ছিটকে পড়ে আহত হন তিনি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসার তিন দিনের মাথায় শুক্রবার (৬ মে) সকালে সেখানে মৃত্যু হয় তার। শারমিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের গোবড়াগঞ্জ গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী।

ঈদের দ্বিতীয় দিন, বুধবার (৪ মে)। এদিন দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে সিয়াম ওরফে নতুন (১৬), মাহবুব আলম শিশির (১৭) এবং আবু বক্কর সিদ্দিক (১৭) নামের তিন বন্ধু মারা যান। পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের তালমা-মডেলহাট সড়কের জমাদারপাড়া এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত তিন বন্ধুর বাড়ি সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের খালপাড়া গ্রামে। তারা তিনজন নিকটাত্মীয় এবং প্রতিবেশী।

একই দিন রাতে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সামনে মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান রিমন (২৫) নামের এক যুবক। রিমন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার সাল্টিয়ার হাট হাছিয়া এলাকার মৃত বুলু মিয়ার ছেলে। তিনি ঈদ উপলক্ষে বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল যোগে ঘুরতে এসেছিলেন পঞ্চগড়ে।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) দুপুরে জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে ইশাদ (১৩) নামের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়। নিহত ইশাদ দেবীগঞ্জ পৌরসভার কলেজপাড়া এলাকার কুরবান আলীর ছেলে। একই সময় সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের চেকরমারী এলাকায় পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়কে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় খোরশেদ আলম (৬০) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়।

এদিকে এসব দুর্ঘটনার জন্য অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ চালকের নিয়ন্ত্রণহীন গতিবেগ এবং অসচেতনতাকে দুষছেন সচেতন মহল। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহ্বান তাদের।

পঞ্চগড় জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, মহাসড়কের পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জের সড়কগুলোতেও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। নিহত অধিকাংশই তরুণ মোটরসাইকেল আরোহী। তাদের উন্মাদনা আর বেপোরোয়া গতিবেগই দুর্ঘটনার মূল কারণ।

তিনি বলেন, ঈদের সময় পুলিশ প্রশাসন শহরে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করলেও গ্রামে যেতে পারেন না। এজন্য প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং মেম্বাররা গ্রাম পুলিশদের নিয়ে বেশি চলাচলের সড়কগুলোতে কাজ করলে অনেকটাই কমে যাবে এসব দুর্ঘটনা।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার জন্য মূলত অভিভাবকদের অসচেতনতা, স্কুল-কলেজেপড়ুয়া শিশু-কিশোরদের হাতে মোটরসাইকেলের চাবি তুলে দেওয়াটাই দায়ী। সড়ক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী মোটরসাইকেল চালককে অবশ্যই ১৮ বছরের বেশি বয়স হতে হবে। সেখানে সন্তানের আবদার মেটাতে অভিভাবকেরা কম বয়সী ছেলেদের হাতে মোটরসাইকেলের চাবি তুলে দিচ্ছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।

/এইচএম/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়