ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যে কারণে কক্সবাজারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২  
যে কারণে কক্সবাজারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু আক্রান্তরা। ছবি: রাইজিংবিডি

কক্সবাজারে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। বিশেষ করে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দ্রুত বাড়ছে এর প্রকোপ। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ জেলাজুড়ে নির্মাণকাজ বেড়ে যাওয়া, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ও থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে মশার ঘনত্ব বেড়ে গেছে। যে কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ, ২২ জনের মৃত্যু

আরো পড়ুন:

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কক্সবাজারে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জন মারা গেছে। কিন্তু জেলা সিভিল সার্জন অফিস বলছে, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কক্সবাজারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৭ জন।  তবে মৃতের সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নতুনভাবে হালনাগাদ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, শুরু থেকে তেমন ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয় না। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তারপর আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। যদি শুরু থেকে ভালো চিকিৎসা দেওয়া হতো তবে অনেক রোগী ভালো হয়ে বাড়ি ফিরতে পারতো বলে তারা জানান।

কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার কামাল বলেন, আমার ওয়ার্ডে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আছে। অনেকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ বলেন, আমার ওয়ার্ডে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। এ ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ডেঙ্গু দমনে সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন ও পৌরসভায় বলা হলেও কারো কোনো টনক নড়েনি। পৌরসভা শুধুমাত্র একবার মশা দমনের ওষুধ ব্যবহার করে চলে গেছে। 

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকতর্ক ডা. মো. আশিকুর রহমান বলেন, যেকোনো ধরনের পণ্যসামগ্রীর প্যাকেট ও ড্রাম জাতীয় দ্রব্যে বৃষ্টির পানি জমলে সেখান থেকে এডিশ মশার প্রজনন হয়। এছাড়া সংস্কার কাজ করার সময় খনন করা গর্তসহ নালা-নর্দমার পানিতে ডিম পাড়ে ডেঙ্গুবাহী এডিশ মশা। এছাড়া   কক্সবাজার পর্যটন এলাকা হওয়ায় ভ্রমণে আসা অনেক পর্যটক আবাসিক হোটেলে মশারি ব্যবহার না করায় ঝুঁকি বাড়ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি কক্সবাজারে এসে রাতযাপন করলে তাকে মশা কামড়ানোর পর অন্য ব্যক্তির মাঝে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ঠিক এভাবে ডেঙ্গু সবর্ত্রে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ৪৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। সেখান থেকে ৩ জন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন। এর আগের দিন ২ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে এ রোগ কক্সবাজারে দিন দিন বাড়ছে। তাই আমরা অতিরিক্ত চিকিৎসক টিম নিয়ে কাজ করছি।

কক্সবাজার পৌরমেয়র মুজিবুর রহমান জানান, গত আগস্ট মাস থেকে কক্সবাজারে ডেঙ্গু প্রকোপের কথা শুনে আমি কাউন্সিলরদের নিয়ে ডেঙ্গু দমনের ব্যাপারে সজাগ রয়েছি। প্রত্যেকটা ওয়ার্ডের ড্রেনে ব্লিচিং পাউডার  ও অন্যান্য কিটনাশক ব্যবহার করে ডেঙ্গু দমনের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া ফগার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন দুটি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। পৌরসভার প্রতিটি ঘরে ঘরে সচেতনতার বার্তা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। এমনকি ২০ থেকে ৪০ হাজার পরিবারের জন্য সচেতনতামূলক লিফলেট ছাপিয়েছি। শুধু আমরা এসব করলে হবে না, জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে।

এডিস মশা। ছবি: ইন্টারনেট

সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৯৬ জন। তাদের মধ্যে স্থানীয় ৭৪১ জন এবং রোহিঙ্গা ১২ হাজার ৬৫৪ জন। আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। মারা যাওয়া ৪ জন স্থানীয়, বাকিরা রোহিঙ্গা।

তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেখা দেওয়ায় নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের অন জব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার পর্যাপ্ত আরডিটি কিট সরবরাহ রাখা হয়েছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মী, ভলান্টিয়ার, রোহিঙ্গা মাঝিসহ নানাভাবে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এডিস মশা যাতে প্রজনন করতে না পারে সেজন্য ক্যাম্পে খাল, ডোবা, নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলা, ঘরের আশেপাশে পরিষ্কার রাখা এবং রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

/তারেকুর/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়