ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দখল-ভরাটে অস্তিত্ব সংকটে কুমিল্লার খালগুলো

রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ২০ ডিসেম্বর ২০২২  
দখল-ভরাটে অস্তিত্ব সংকটে কুমিল্লার খালগুলো

শুকিয়ে যাওয়া একটি খাল।

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবৈধভাবে দখল-ভরাটের কারণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে কয়েকটি খাল। এছাড়া অনেক খাল ইতোমধ্যে শুকিয়ে গেছে। ফলে প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় সেচ সংকটে অনাবাদি থাকে হাজারো হেক্টর জমির ফসল। আর তাই সংকট মোকাবিলায় সরকারিভাবে খালগুলো উদ্ধার করে খননের ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের গোপালপুর হিন্দুপাড় সংলগ্ন ব্রিজের নিচের খালটি অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে। এক সময় মালামাল নিয়ে ভারি নৌযান চলাচল করলেও বর্তমানে খালটির দুই পাড় ভরাট হয়ে যাওয়ায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছে সেটি। 

একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে গোপালপুর বাজার সংলগ্ন গোপালপুর মুন্সীবাড়ি, চেংগাতলী, বাঘাইরামপুর খালেরও। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুধু বাড়িঘর ও স্থাপনা নির্মাণ নয় খাল ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ার কারণে গ্রামগুলোর উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ চকের জমিগুলোতে সেচ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। 

গোপালপুর গ্রামের খালের দুই পাড় দখলে রাখার অভিযোগ রয়েছে মুজিব ভূইয়া ও রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তারা জানান, খাল আমরা ভরাট করিনি। বছর বছর পলি পড়ে এমনিতেই ভরাট হয়ে গেছে। সরকারি খাল সরকার ফেরত চাইলে আমরা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য।

নারান্দিয়া ইউনিয়নের গোমতী নদীর আসামানিয়া বাজার অংশ থেকে কাচারি বাজার হয়ে তুলাকান্দির দিকে প্রবাহিত খলটি দখল ও ভরাটের অভিযোগ রয়েছে।  

সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খাল শুকিয়ে চৌচির। অপরদিকে মজিদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন খালের মধ্যে শাহবৃদ্ধি সরকার বাড়ি সংলগ্ন ব্রিজের নিচের খালটি অবৈধভাবে দখল করে খালের দুই পাড়ে বাসাবাড়ি, টয়লেটের ট্যাংকি ও গোসলখানা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী বেদন সরকার ও আ. সামাদের বিরুদ্ধে ।

দখল ও বছর বছর ভরাটের কারণে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী এ খালটি। বর্তমানে এই খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন।  

বর্তমানে খালগুলো  দেখে বোঝার উপায় নেই কোনো এক সময় এগুলো খাল ছিল।  তাছাড়া গ্রামের উত্তর ও দক্ষিণ চকে গেলে বুঝাই যাবে না এখানে একটি খাল প্রবাহিত হচ্ছিল। জমি বরাবর ভরাট করে খালটি এখন জমিতে পরিণত হয়েছে।

শাহবৃদ্ধি গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলেন, ‘একসময় বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমেও এ খাল দিয়ে নৌকা ও লঞ্চ চলাচল করতো। এ খালগুলো দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের জন্য মালামাল আনা হতো। কৃষি জমির সেচ কাজেও ব্যবহৃত হতো খালের পানি। একসময় উজানের বিশাল জলধারা প্রবাহিত থাকলেও দখলদারদের করাল গ্রাসে খালটি এখন মৃতপ্রায়। আমরা চাই এ খালটির উদ্ধারের মাধ্যমে খনন করা হোক।

অভিযুক্ত দখলদার বেদন সরকার ও আক্তার হোসেন বলেন, আমরা ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সরকারি আমীনের মাধ্যমে মাপজোপ করে নিশ্চিত হয়ে নিজ জায়গায় স্থাপনা ও দেওয়াল নির্মাণ করেছি। খালের জায়গায় নয়। 

এদিকে সদর কড়িকান্দি ইউনিয়ন ইউসুফপুর থেকে বন্দরামপুরের মধ্যকার খালসহ উপজেলার সব ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে অবৈধভাবে খাল দখলের শতশত অভিযোগ। ইচ্ছে থাকলেও  প্রভাবশালী দখলদারদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলছে না বলেও জানান অনেক ভুক্তভোগী।

উপজেলার খালগুলো ঘুরেফিরে মাটিয়া, গোমতী ও তিতাস নদীতে এসে যুক্ত হয়েছে। এস.এ খতিয়ান প্রজার নামে ও বি এস জরিপে অনেক খাল সরকারের খাস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ থাকলেও বাস্তবে খালগুলোর প্রস্থ খুঁজে পাওয়াও মুশকিল।

অভিযোগ আছে, গত বিএস জরিপের সময় উপজেলার প্রায় ৭০ ভাগ খালপাড়ের দুই পাশের জায়গা বিভিন্ন ব্যক্তিরা নিজেদের নামেও রেকর্ড করে নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক-উর রহমান বলেন, খালগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে অচিরেই দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হবে।

জানতে চাইলে তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম মোর্শেদ বলেন, উপজেলার খালগুলোর ব্যাপারে আমাদের কাছে তেমন কোনো তথ্য নেই। এ ব্যাপারে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সহায়তা করলে আমরা তা উদ্ধারে কাজ করবো।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান বলেন, আমরা চাইলেই খাল খনন ও দখলমুক্ত করতে পারি না। এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। তাদের সহায়তা ছাড়া কিছুই করা যাবে না।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়