খুলনার পশুরহাটে গরু কিনলে ছাগল ফ্রি
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম
২৭ মণের ‘শান্ত’কে যিনি কিনবেন, তাকে উপহার হিসেবে ছাগলটি দেওয়া হবে
গরু কিনলে ছাগল ফ্রি— অফার চলছে খুলনার কোরবানির পশুর হাটে। তবে সব ব্যাপারীর ক্ষেত্রে নয়, এটি একজন ব্যাপারী; তার আদরে পালিত গরু ‘শান্তর’ ক্ষেত্রে এ অফার দিয়েছেন। ২৭ মণের এ গরুর দাম হাঁকানো হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
অপরদিকে, নগরীর সর্ববৃহৎ কোরবানির পশুরহাটে খুলনার সবচেয়ে বড় গরু ‘সম্রাট’ নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। ৫৫ মণ ওজনের সম্রাটের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৮ লাখ টাকা।
এদিকে, ঈদের আর মাত্র তিন দিন বাকি থাকায় ক্রেতারা বাজারে আসতে শুরু করেছেন। বিক্রিও বাড়তে শুরু করেছে। তবে ঈদের দু/একদিন আগেই বিক্রি পুরোপুরি জমবে বলে আশা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
বাগেরহাট জেলা সদরের বারইপাড়ার কাপড়পোড়া গ্রামের বাসিন্দা শান্ত খান এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি নিজের বাড়িতে রেখে ‘শান্ত’ কে চার বছর ধরে লালন-পালন করেছেন। গরুটি শাহীওয়াল জাতের। ওজন হয়েছে ২৭ মণ। তিনি ১০ লাখ টাকা দাম পেলে গরু বিক্রি করবেন। তবে যিনি কিনবেন তার আদরের ‘শান্ত’কে, তাকে তিনি উপহার হিসেবে একটি খাশি ছাগল দেবেন। তবে ক্রেতারা ৬-৮ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
শান্ত খান জানান, গত বছরও তিনি নগরীর জোড়াগেট হাটে গরুটি এনেছিলেন। তখন দাম চাওয়া হয়েছিল ৫ লাখ টাকা। কিন্তু প্রত্যাশিত মূল্য না পেয়ে বিক্রি করেননি।
অপরদিকে, নগরীর সর্ববৃহৎ কোরবানির পশুরহাটে খুলনার সবচেয়ে বড় গরু ‘সম্রাট’ নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। ৫৫ মণ ওজনের সম্রাটের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৮ লাখ টাকা। নগরীর দৌলতপুরস্থ পাবলা মোল্লাবাড়ির মোড়ে মধুমতি ডেইরি ফার্মে গরুটি লালন-পালন করেছেন ব্যবসায়ী শামীম শেখ। তার ফার্মে ৭৫টি গরু রয়েছে। তবে কোরবানির ঈদে এবার ১৫টি গরু বিক্রির উপযোগী করেছেন তিনি।
শামীম শেখ বলেন, তিনি ৫৫ মণ ওজনের ‘সম্রাটের’ দাম চাচ্ছেন ১৮ লাখ টাকা। তবে ক্রেতারা এখনও তেমন একটা দাম বলছেন না। শুধু শুনছেন। বড় গরুর ক্রেতা কিছুটা কম বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি জানান, গত ঈদে তিনি ‘সম্রাটকে’ ঢাকার গাবতলী হাটে নিয়েছিলেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে ফেরত আনেন। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে তিনি বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন।
মধুমতি ডেইরি ফার্মে আসা মো. বেলায়েত শেখ বলেন, ‘খুলনা জেলায় বড় বড় গরু আছে শুনেছি। কিন্তু এই ফার্মে এত বড় বড় গরু আছে আগে দেখিনি। এবার আসলাম গরু দেখতে। এখানে অনেকে আসে। ফার্মে সম্রাটসহ বিভিন্ন নামের গরু আছে৷ দেখতে খুব সুন্দর। গরুও বিশাল বড়। শুনেছি হাটে নিয়ে যাবে, তাই দেখতে এসেছি।’
জোড়াগেট হাটে ১৭টি গরু নিয়ে আসা নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মহিষখোলা গ্রামের ব্যাপারী ইখলাস শেখ বলেন, এখনও বিক্রি শুরু হয়নি। ক্রেতারা আসছেন, দরদাম করছেন। তবে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বিক্রি জমবে বলে আশা করছেন তিনি।
তিনি জানান, গরুর খাবারের দাম এনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে গ্রাম থেকে গরু চড়া দামে তাদের কিনতে হয়েছে। দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে।
একই এলাকার ব্যাপারী ইকবাল মোল্লা বলেন, তিনি ১৬টি গরু নিয়ে এসেছেন। কিন্তু একটিও বিক্রি করতে পারেননি।
ক্রেতা এনামুল হক ঝন্টু বলেন, এবার পশুর দাম বেশ চড়া। যে কারণে ক্রেতারা বিভিন্ন হাট, খামার এবং গৃহস্থের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরুর দরদাম করছেন। তার মধ্যেই ক্রেতারা পছন্দের পশু ক্রয় করছেন।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম আইয়ুব আলী বলেন, এ বছর জেলা ৮৯ হাজার ৮৬৭ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। আর খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ৯২ হাজার ৩৭৫টি। ফলে এবার কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত আছে। ফলে জেলায় পশুর সংকট হবে না।
নুরুজ্জামান/বকুল