ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

অন্যের বাড়িতে কাজ করে হৃদয়ের পড়ার খরচ যোগাতেন মা

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২৮ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১০:২২, ২৮ জুলাই ২০২৪
অন্যের বাড়িতে কাজ করে হৃদয়ের পড়ার খরচ যোগাতেন মা

কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন হৃদয়

হৃদয় চন্দ্র তরুয়া। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। হৃদয় চন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়ার পর থেকে খরচ যোগাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হতো তার মাকে। হাজারও স্বপ্ন নিয়ে যে সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছিলেন মা-বাবা, সেই হৃদয় চন্দ্রের প্রাণ গেলো কোটা আন্দোলনের সহিংসতায়। 

চবি ছাত্র হৃদয় চন্দ্রের বাবা নাম রতন চন্দ্র তরুয়া। মা অর্থনা রাণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে হৃদয় ছিলেন ছোট। বাবা রতন চন্দ্র কাজ করেন কাঠ মিস্ত্রি হিসেবে। অভাবের সংসারে সব স্বপ্ন ছিলো হৃদয়কে ঘিরে। ছেলে পড়ালেখা শেষ করে বড় চাকরি করবে। সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। 

কোটা আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত চবি ছাত্র হৃদয় চন্দ্রের বড় বোন মিতু রাণী জানান, তাদের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ঘটকের আন্দুয়া নামক গ্রামে। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম জেলা শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন। ছোট বেলা থেকেই হৃদয় ছিলেন মেধাবী। এইচএসসি পাস করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। 

সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে মিতু রাণী বলেন, ভাই যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন বাবা সেদিন টাকা ধার করে মিষ্টি কিনে সবাইকে খাওয়ালেন। ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের পকেট খরচ চালাতেন।  মা মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে টাকা জমিয়ে হৃদয়কে পাঠাতেন। আমাদের সবার স্বপ্ন ছিলো হৃদয় একদিন বড় চাকরি করবে। আমাদের অভাবের সংসাদের দুঃখ যাবে।  কিন্তু সেই ভাই আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরলো গুলিবিদ্ধ লাশ হয়ে। 

হৃদয়ের বন্ধুরা জানান, কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন হৃদয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার দুই দিন আগেও তাকে চট্টগ্রামের দুই নম্বর গেইট এলাকায় প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা গেছে। তবে ১৮ জুলাই যে দিন হৃদয় গুলিবিদ্ধ হন, সেদিন তিনি আন্দোলনে ছিলেন না। বিকেলের দিকে টিউশনি শেষ করে ফিরছিলেন। এই সময় নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়েন। দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বুকে গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।  তাকে উদ্ধার করে প্রথম একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে একদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯ জুলাই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা মেডিক্যালে চার দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২৪ জুলাই হৃদয় মারা যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, হৃদয় চন্দ্রকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন সে গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত ছিলো। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে তার বুকের বাঁ দিকে গুলি লেগে ফুসফুস ভেদ করে বেরিয়ে গেছে। চট্টগ্রামে তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার করা হয়েছিলো। 

হৃদয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিভাগে পড়তেন সে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামীমা হায়দার বলেন, হৃদয় গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে গিয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে করণীয় সবকিছুই করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি। 

এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হৃদয়ের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে। তারা হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন  এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

/ইভা/

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়