ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ছাত্রলীগ নেতা হত্যায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের যাবজ্জীবন

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
ছাত্রলীগ নেতা হত্যায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের যাবজ্জীবন

নাটোরের নলডাঙ্গার ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলীম জীবন (২২) হত্যা মামলায় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। 

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আলোচিত এ মামলার রায় দেন। মামলায় আসাদুজ্জামানের দুই ভাই ফয়সাল শাহ ফটিক ও আলীম আল রাজীও আসামি ছিলেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন। রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানান, গত ৩০ জুন মামলাটি নাটোর জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এরপর আদালতে ২৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পরে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত এ রায় দিলেন। রায়ে যিনি দণ্ডিত হয়েছেন, তিনি পলাতক আছেন। অন্য দুইজন কারাবন্দি ছিলেন। রায় ঘোষণার জন্য তাদের আদালতে হাজির করা হয়। তারা খালাস পাওয়ায় কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে। পলাতক আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালত সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন। গ্রেপ্তারের পর তার সাজা কার্যকর হবে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নলডাঙ্গা উপজেলার আমতলী বাজারের চার রাস্তার মোড়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক জামিউল আলীম জীবন ও তার বাবা ফরহাদ শাহকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এর চার দিন পর ২৩ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামিউল আলীম জীবন মারা যান।

স্বামী ও ছেলেকে মারধরের ঘটনায় ২০ সেপ্টেম্বর জামিউলের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে নলডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। এতে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার দুই ভাইকে আসামি করা হয়। জামিউল পরে মারা গেলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, এলাকার একটি মসজিদের মাইক চুরি নিয়ে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদের নেতৃত্বে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জামিউল আলীম জীবনকে ওই চুরির ঘটনায় জড়িত করে সন্দেহভাজনদের তালিকা করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ওই রাতেই জামিউল আলীম ফেসবুক লাইভে এসে সালিশ ষড়যন্ত্রমূলক ও আক্রোশবশত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের সমালোচনাও করেন লাইভে। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান তার সহযোগীদের নিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে তার বাবা ফরহাদ শাহকেও পেটানো হয়।

মামলা তদন্ত শেষে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি আসাদুজ্জামান আসাদ ও তাঁর দুই ভাইকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন নলডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার চৌধুরী। হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় আসাদুজ্জামানকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। আওয়ামী লীগের দলীয় পদও হারান তিনি।

মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ এবং নিহতের পরিবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, রায়ে সকল আসামির মৃত্যুদণ্ড হবে। কিন্তু আদালতের রায়ে আমরা খুশি হতে পারিনি।’ 

নিহত জামিউলের মা ও মামলার বাদী জাহানারা বেগমও একই কথা বলেছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও জানিয়েছেন।
 

কেয়া/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়