ধামরাইয়ে মাজারে হামলা-ভাঙচুর, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ঢাকার ধামরাইয়ের বাটুলিয়া এলাকায় একটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের কাছে এটি সাধক বুচাই পাগলার মাজার হিসেবে পরিচিত। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মাজারটিতে দীর্ঘদিন ধরে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড চলে আসছিল। এরই জেরে স্থানীয় প্রায় পাঁচ শতাধিক আলেম ওলামারা সেটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। যদিও মাজারে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাজারের মূল ভবনটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও দুটি টিনের ঘর ও একটি সেমি পাকা ভবন ভাঙচুর করা হয়েছে।
কুশুরা দক্ষিণ কান্টাহাটি মসজিদের ইমাম মাওলানা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে শেরেক বেদাতি কাজকর্ম চলছিল। তবে কোনোভাবেই প্রতিরোধ করতে পারছিলাম না। আলহামদুলিল্লাহ এখন প্রতিরোধ করার সময় হয়েছে। এখন যদি বসে থাকি, তবে কেয়ামতের ময়দানে হিসাব দিতে হবে। যে কারণে আমরা ধামরাইয়ের আলেম ওলামারা বিভিন্ন সংগঠন থেকে একত্রিত হয়ে এটি বন্ধ করি। ধামরাই ওলামা পরিষদ, ইমাম পরিষদ, কালামপুর আঞ্চলিক ইমাম পরিষদ এখানে ছিল।’
এ হামলার সমন্বয় করেছেন বলে পরিচয় দেওয়া আবুল কাশেম বলেন, ‘এখানে অনেক আগে থেকে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড হয়েছে। তবে জনগণ প্রতিবাদ করতে পারেনি। এখানে মদ, গাঁজাসহ, নানা অনৈতিক কাজ হতো। কালামপুর ও আশপাশের তৌহিদি জনতা সবাই একত্র হয় ও এটি ধ্বংস করে।’
যদিও এলাকাবাসী বলছেন, এই মাজারে শরিয়াবিরোধী কাজকর্ম হতো না। মাজারে মাদক নিষিদ্ধ ছিল। মাজারে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা।
বাটুলিয়া এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এলাকার একটা লোকও মাজার ভাঙার সঙ্গে ছিল না। তারা কেউ বুঝতেই পারেনি। এই মাজারে শরিয়াবিরোধী কোনো কাজকর্ম করতে কখনো দেখিনি। মাদক সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল এখানে। পুলিশ প্রশাসন সার্বক্ষণিক মাজারে নিরাপত্তা দিয়েছে। দূরের লোকজন এসে যেভাবে মাজার ভাঙলো এটা অন্যায়। আল্লাহ এর বিচার করবেন।’
স্থানীয় তারা মিয়া নামে এক বৃদ্ধ ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘ওরা যেভাবে এসেছে, আমরা বুঝলে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতাম। এলাকার কেউই মাজার ভাঙতে দিত না।’
মাজার সংলগ্ন মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘এই মাজারে শরিয়াবিরোধী কর্মকাণ্ড আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতাম। সিজদা করতে দেওয়া হতো না। মাজারের দানবাক্সের টাকা মানুষের জন্য ব্যয় করা হতো। তারা যেভাবে এটি ভাঙচুর করেছে, এটাই ইসলাম বিরোধী কাজ। এলাকার মানুষ খুবই কষ্ট পেয়েছে।’
সানোড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. তিতুমীর হোসেন বলেন, ‘তারা অতর্কিতে এসে ভাঙচুর করেছে। ইউএনওর ফোন পেয়ে দুইজন চৌকিদার নিয়ে এখানে এসেছিলাম। তবে তাদের সামনে যেতে পারিনি। পরে সেনাবাহিনী এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তত দেড় থেকে দুই কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।’
ধামরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি প্রশান্ত বৈদ্য বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুপুরের দিকে তারা এখানে আসেন। তারা কিছু দাবিদাওয়া জানিয়েছেন। তাদের সঙ্গে ইউএনও বৈঠক করবেন। আপাতত তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
আরিফুল/ইমন