ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বরগুনা পৌরসভা

ছোট সেতুতে হাজারো প্রাণের ঝুঁকি

ইমরান হোসেন, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৩, ১১ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৯:১৮, ১১ নভেম্বর ২০২৪
ছোট সেতুতে হাজারো প্রাণের ঝুঁকি

বরগুনা পৌর শহরের ভাড়ানি খালটি খননের কয়েক বছর অতিবাহিত হলেও নেওয়া হয়নি দুই পাড় রক্ষায় কোনো উদ্যোগ। ফলে ভাঙনে বিলীন হতে যাচ্ছে খাল পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ দুটি সড়ক ও তিনটি সেতু। দুর্ঘটনা এড়াতে অনেকেই চলাচল করছেন বিকল্প পথে।

বরগুনা জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, সরকারি কলেজ ও মহিলা কলেজের অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন চলাচল করেন এই খালের ওপর থাকা সেতু দিয়ে। সেতু দেবে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ সেতুর সামনে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে সেতু ধসে পড়ে বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। 

আরো পড়ুন:

পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, খালের ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত সুরহা মেলেনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বরগুনা পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রের ভাড়ানি খালের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা ২০১৯ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ করা হয়।  ২০২১ সালে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে পানি উন্নয়ন বোর্ড খালটি খননের উদ্যোগ নেয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই খালটি খনন করা হয়।

এলাকাবাসী জানান, খননের পরে খালের দুই পাড় রক্ষায় নেওয়া হয়নি স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা। এতে দুই পাড়েই দেখা দিয়েছে ভাঙন। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ভাড়ানি খালটির ওপরে থাকা বিভিন্ন স্থানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সেতু। খালের ভাঙন রোধে সাময়িকভাবে বাঁশ ও জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না।

তাদের অভিযোগ, খাল খননের সময় শুধুমাত্র মাটি বিক্রির জন্যে অতিরিক্ত গভীর করা হয়। পাড় রক্ষায় স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মাছ বাজার থেকে আব্দুল কাদের সড়ক পর্যন্ত দুই পাড়ের সড়ক বারবার সংস্কার করা হয়। চার মাস আগেও সড়ক সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু তা ভেঙে গিয়ে আবারও সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। সবশেষ বৃষ্টিতে খালের দুই পাশের দেড় কিলোমিটার সড়কের অন্তত ৯টি স্থান ভেঙে যায়। 

মাছ বাজার সংলগ্ন আল্লাহর দান চালের আড়তের মালিক ফরিদ হোসেন বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন করে মাটি বিক্রি করেছে ঠিকাদার হুমায়ূন কবির। এজন্য খননের পর থেকেই তীব্র ভাঙন শুরু হয় খালের দু’পাশে। এই সড়ক দিয়ে আমরা সারা দেশে চাল পাঠাই। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় এই সড়ক ব্যবহার করতে পারছি না আমরা।’ 

ব্যবসায়ীরা জানান, খননের পরে স্থায়ী কোনো গাইড ওয়াল নির্মাণ না করায় নতুন রাস্তা তৈরি হলেও তা ভেঙে যাচ্ছে। বাঁশ দিয়ে যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে তা অস্থায়ী, বারবার ভেঙে যায়। মাত্র চারমাস আগেই রাস্তা সংস্কার করা হয়েছিল, এখন তা ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’

এই পথে চলাচলকারী গাড়ি চালক ফোরকান মিয়া বলেন, ‘আগে এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাত্রী পরিবহন করতাম। খালে ভাঙন দেখা দেওয়ার কারণে এই সড়ক এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তাই বিকল্প পথে চলাচল করতে হয়।’ 

এদিকে, বরগুনা জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, সরকারি কলেজ ও মহিলা কলেজের অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন চলাচল করেন ভাড়ানি খালের ওপর থাকা আলিয়া মাদরাসা সেতু দিয়ে। খাল খননের কারণে দেবে যাওয়ায় সেতু চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ সেতুর অর্ধেক আটকে দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে। এরপরেও প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীসহ পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড ও বুড়িরচর ইউনিয়নের বাসিন্দারা চলাচল করছেন। 

সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেঘলা রানী বলেন, ‘প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু পার হই আমরা। সড়কের পাশাপাশি সেতুটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। জিলা স্কুল সংলগ্ন সেতু এবং আব্দুল কাদের সড়ক সংলগ্ন সেতু দুটিও ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প উপায় না থাকায় প্রতিদিন আমরা আতঙ্ক নিয়ে সেতু পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাই।’ 

জাহিদুল ইসলাম নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘চার মাস আগে ভাড়ানি খালের দুই পাশের সড়কের সংস্কার কাজ করে কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারীরা সেতু ও সড়ক দিয়ে চলাচল করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের দুইপাশে স্থায়ীভাবে গাইডওয়াল নির্মাণ না করলে সেতু ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’ 

বরগুনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাড়ানি খালটি খনন করে। খালের দুই পাড় সুরক্ষার যে ব্যবস্থা তা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে খালের দুই পাড়েই ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। আমরা এ বিষয়টি জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। তারা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে আশ্বাস দিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করেনি।’

এলজিইডি বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান খান মুঠোফোনে বলেন, ‘সেতুর দুই পাশের মাটি দেবে যাওয়ায় তিনটি সেতুর মধ্যে আলিয়া মাদরাসা সড়কের সামনের সেতু সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকি এড়াতে সেতুর দুই পাশে অর্ধেক অংশ ব্লক করে দিয়েছি। সাইনবোর্ড দিয়েছি। স্থায়ীভাবে গাইডওয়াল দেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি। জেলা প্রশাসকের সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।’

এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, ‘বরগুনা পৌরসভা থেকে চিঠি পেয়ে আমরা ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি। বরাদ্দ আসলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

খাল খননে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খাল খননের সময় আমি ছিলাম না। অতিরিক্ত খনন করে মাটি বিক্রি করা হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

ঢাকা/মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়