ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ছাত্রলীগ নেতার পোস্ট

কাজের লোকরাই ‘ধরিয়ে দেন’ আনিসুল হককে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ২১:৩০, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
কাজের লোকরাই ‘ধরিয়ে দেন’ আনিসুল হককে

গ্রেপ্তারের পর আনিসুল হক, বাঁয়ে ওপরে শফিকুল ইসলাম সোহাগ, নিচে আলাউদ্দিন বাবু।

সাবেক আইনমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের (কসবা-আখাউড়া) সংসদ সদস্য আনিসুল হককে কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘ধরিয়ে দেন’ তারই বাসার দুজন ‘কাজের লোক’।

রবিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন তথ্য তুলে ধরেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শরিফুল। 

আরো পড়ুন:

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা হলেন—সাবেক মন্ত্রীর অসুস্থ মায়ের সেবা-যত্নের দায়িত্বে থাকা শফিকুল ইসলাম সোহাগ এবং মন্ত্রীর গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকার (দারোয়ান) ইদ্রিস মিয়ার ছেলে আলাউদ্দিন বাবু।

মোহাম্মদ শরিফুল ‘বিশ্বস্ত সূত্রের’ বরাতে ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে-পরে আনিসুল হকের ব্যক্তিগত শত শত কোটি টাকা নিরাপদে জমা রাখার কথা বলে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেয় সোহাগ ও বাবু। সরকার পতনের পর কৌশলে আনিসুল হককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ধরিয়ে দেন তারা।

শরিফুল বলছেন, এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী এখনো অবগত নন। টাকা আত্মসাৎ করে সোহাগ ও বাবু বিদেশে পালিয়ে যান। তারা প্রায়ই নাইট ক্লাবে আড্ডা দিচ্ছেন, আর অবৈধ টাকায় আরাম-আয়েশে বিলাসী জীবন পার করছেন। 

স্থানীয় রাজনীতিতে সোহাগ ও বাবুর একচ্ছত্র আধিপত্যের বিষয়েও সবিস্তারে বর্ণনা করেন ছাত্রলীগের এই নেতা। 

আনিসুল হকের ডানে শফিকুল ইসলাম সোহাগ, বামে আলাউদ্দিন বাবু


শরিফুল লেখেন, কৌশলে আনিসুল হকের এপিএস রাশেদুল কাওছার ভূঁইয়া জীবনকে সরিয়ে সোহাগ ও বাবু মন্ত্রীর পিএ পদ বাগিয়ে নেন। বনে যান সাবেক মন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা। এরপর দেশের সাব-রেজিস্ট্রার বদলি, চাকরির তদবির, অবৈধভাবে শত শত একর জমি; দেশ-বিদেশে ফ্ল্যাট, কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। 

পোস্টে বর্ণনা অনুযায়ী, সোহাগ ও বাবু কায়দা করে মন্ত্রীর গুলশান অফিস সম্পূর্ণ ‘নিয়ন্ত্রণে’ নেন। তখনই শুরু করেন আওয়ামী লীগসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে সরানোর ‘বিশেষ কৌশল’। 

অভিযুক্ত দুজন কসবা-আখাউড়ার রাজনীতি ধ্বংস করেছেন দাবি করে শরিফুল বলেন, কে নেতা, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়র হবেন; এসব সিদ্ধান্ত তারা নিতেন। আর মন্ত্রী তাদের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্তভাবে ঘোষণা দিতেন। 

শরিফুলের ফেসবুক পোস্ট


ছাত্রলীগের এই নেতার দাবি, কসবা-আখাউড়ার দলীয় নেতাকর্মীকে বিদেশে বসে হরতাল-অবরোধ ও দলীয় লিফলেট বিতরণ করতে বলেন তারা। 

এই দুজনকে পাওয়ামাত্র ‘গণধোলাই’ দেওয়ার কথা বলে শরিফুল লিখেছেন, তাদের কাছ থেকে মন্ত্রীর অর্থগুলো উদ্ধার করুন। দলের নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পরিবারের মাঝে টাকাগুলো বিলিয়ে দিন। 

শরিফুলের পোস্টে অনেকে মন্তব্য করেছেন, যার মধ্যে একজন সবুজ আহম্মেদ। তিনি লিখেছেন, ‘‘অভিযুক্ত দুজন অতীতে কখনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তৃণমূলের কোনো নেতাকে তারা চিনতেন না। মন্ত্রীর কারণে কসবা-আখাউড়ার আওয়ামী রাজনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে।’’

তানজিদ হাসান মিশু নামে একজন লেখেন, ‘‘তারা মন্ত্রীর পিএ পদ ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিশাল ক্ষতি করেছেন। অথচ অতীতে কখনো ছাত্রলীগ-যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি।’’

ছাত্রলীগ নেতা শরিফুলের ফেসবুক পোস্টের মন্তব্য


মো. ইভান ভূঁইয়া নামে একজন মন্তব্য্য করেছেন এমন, ‘‘দারোয়ান-কেয়ারটেকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে; এতেই বোঝা যায় আওয়ামী লীগের ধ্বংসের কারণ।’’ 

অভিযুক্ত দুজনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের বিষয়ে এলাকায় খোঁজ-খবর করে পাওয়া যায়, সরকার পতনের পরই দুজন বিদেশে চম্পট দেন।

শরিফুলের পোস্টটি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সেটি তার দেওয়া কি না, সে বিষয়ে জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকার কল করা হলেও সাড়া দেননি। তাকে এসএমএস দিলে ফিরতি বার্তায় ফেসবুক পোস্টটি তারই বলে জানিয়ে তিনি বলেন, যা লিখেছি সবই সত্য।

মাইনুদ্দীন/এনএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়