যমুনা রেল সেতুতে যাত্রীবাহী ট্রেন উঠছে আজ
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন সয়দাবাদ রেল স্টেশনে প্রবেশ করছে
দীর্ঘ অপেক্ষার পর পরীক্ষামূলক যাত্রা শেষে যমুনা রেল সেতুতে চালু হচ্ছে যাত্রীবাহী ট্রেন। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে নিয়মিত এই সেতুতে ট্রেন চলবে। এর মাধ্যমে ইতি ঘটছে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চলাচলের।
আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সয়দাবাদ রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মনিরুজ্জামান এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্টেশন মাস্টার মনিরুজ্জামান বলেন, “আজ প্রথমে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি যমুনা সেতু দিয়ে পারাপার হবে। এরপর থেকে নিয়মিত ট্রেন চলবে নতুন তৈরি যমুনা রেল সেতু দিয়ে।”
যমুনা রেল সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুরর রহমান বলেন, “আজ সকাল ১০টায় সিল্কসিটি এক্সপ্রেস যাত্রীবাহী ট্রেনটি যমুনা রেল সেতু অতিক্রম করার সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সিডিউল অনুযায়ী বাকি ট্রেনগুলো যাবে।”
তিনি আরো বলেন, “আগামী (১৮ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে যমুনা রেল সেতু। যোগাযোগ উপদেষ্টাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই অনুষ্ঠানে থাকবেন। ওই দিন থেকে দুই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তবে, আজ নতুন রেল সেতু চালুর সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে আর ট্রেন চলবে না।”
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যমুনা রেল সেতুতে দুটি লাইন থাকলেও প্রথমে একটি লাইন দিয়েই উভয় দিকে ট্রেন চলাচল করবে। আগামীকাল (১৩ ফেব্রুয়ারী) ঢাকা থেকে যেতে ডান পাশের লাইন, অর্থাৎ সেতুর উত্তর পাশের লাইনটি দিয়ে ট্রেন চলবে।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেয়। এরপর সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের গতি কমিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করে সরকার।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর রেল সেতুরটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। এরমধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশীয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা। দেশের বৃহত্তম এ রেল সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেল সেতু ব্যবহারের জন্য ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের শুরুতে এই সেতুর নাম ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুর নাম পরিবর্তন করে যমুনা রেল সেতু রাখে।
ঢাকা/অদিত্য/মাসুদ