ঢাকা     রোববার   ১৮ মে ২০২৫ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩২

সাংবাদিককে যুবদল নেতার ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি, থানায় জিডি

পটুয়াখালী (উপকূল) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৯, ৯ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ১৬:৫০, ৯ এপ্রিল ২০২৫
সাংবাদিককে যুবদল নেতার ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি, থানায় জিডি

অভিযুক্ত পটুয়াখালী জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির সোহাগ। ডানে সাংবাদিক মো. সিদ্দিকুর রহমান

পটুয়াখালী জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির সোহাগের বিরুদ্ধে এক সাংবাদিককে ‌‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

একটি প্রাইমারি স্কুলের চলমান কাজের তথ্য জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে হুমকি দেন। এ ধরনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনার পর ভুক্তভোগী সাংবাদিক গতকাল মঙ্গলবার রাতে বাউফল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।  

বুধবার (৯ এপ্রিল) বাউফল থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, “জিডির বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। আদালত থেকে অনুমতি পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরো পড়ুন:

এদিকে, ঘটনার একদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি যুবদল। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করছেন পটুয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুইমাস আগে বাউফল পশ্চিম নুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই তলা বিশিষ্ট একটি ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এলাকাবাসী কয়েকদিন আগে ওই ভবনের নির্মাণ কাজে অনিয়ম হচ্ছে বলে বাউফল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও দৈনিক দেশ রুপান্তরের বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমানকে জানান।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে সিদ্দিকুর রহমান ওই বিদ্যালয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য যান। সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আসার পর ওই ভবনের ঠিকাদার ও পটুয়াখালী জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহাগ মোবাইল ফোনে সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমানকে হুমকি দেন। ওই অডিও কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। 

ভাইরাল অডিওতে যুবদল নেতা হুমায়ুন কবির সোহাগকে বলতে শোনা যায়, “আমি জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। ১৭ বছর পর একটা কাম নিছি, হেই সাইটে আপনি কির লইগ্যা গেছেন। রড একটা হইবে না চারটা হবে, আপনি সাইটে গেছেন ক্যা? ১৭ বছর যুদ্ধ কইরা আইছি, আর আপনি এহন কন এইয়্যা অইয়্যা। অনিয়ম করলে আমনে কেডা সেইটা কন। অনিয়ম করলে অফিস দেখবে আপনে কেডা? টোপ‍ খাইতে চান, আমি আইতাছি দেইখ্যা নিমু। সাংবাদিকদের সাইটে কাজ কি? তুই সাংবাদিক, তুই থাকবি অন্য কামে তোর ওই জায়গায় কাজ কি? তুই সাইটের ধারে গেলে তোর কি করা লাগবে হেডা আমি বুঝমু হানে।” 

বাউফল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাংবাদিক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “কয়েকদিন ধরে স্থানীয়রা আমাকে জানান, ওই বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়ম হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি তথ্য সংগ্রহ করতে যাই। আমি মোবাইলে ওই বিদ্যালয়ের ঠিকাদার পটুয়াখালী জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সোহাগের কাছে কাজের অনিয়মের সম্পর্কে বক্তব্য জানতে তাকে ফোন করে কথা বলি। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার আমাকে ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও জীবননাশের হুমকি দেন। আমি বিষয়টি আমার অফিস ও সিনিয়র সাংবাদিকদের জানাই। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে গতকাল মঙ্গলবার রাতে থানায় জিডি করি। এখন পর্যন্ত থানা কিংবা যুবদল থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”  

বাউফল প্রেস ক্লাবের সভাপতি জলিলুর রহমান বলেন, “একটি দলের পরিচয় দিয়ে এভাবে সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া কোনভাবেই ঠিক হয়নি। আমরা বাউফল প্রেস ক্লাব এ ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে সাগংঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।” 

পটুয়াখালী প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক জাকির হোসেন বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। সবাইকে সাংবাদিকদের সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

পটুয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন বলেন, “বিষয়টি গতকালই আমরা সেন্ট্রাল কমিটিকে জানিয়েছি। আজও সেন্ট্রাল কমিটির নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশা করছি, তার বিরুদ্ধে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়