ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে প্রক্টর বরখাস্ত

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৯, ২৬ আগস্ট ২০২৫  
জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে প্রক্টর বরখাস্ত

এ জে এম নূর-ই-আলম

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদেরকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহীর নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর এ জে এম নূর-ই-আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। নূর-ই-আলম বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রক্টর নূর-ই-আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা জানানো হয়েছে। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তিনজন ছাত্র প্রতিনিধিসহ সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে একটি ফোনকল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে নূর-ই-আলমের মতো একটি কণ্ঠ এবং অচেনা আরেকজনের কথা শোনা যায়। ফোনকলে বলতে শোনা যায়, যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নেবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৫০ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু যায়-আসে না।

এই ফোনকল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রক্টর নূর-ই-আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। সোমবার সন্ধ্যায় কিছু শিক্ষার্থী নগরের চৌদ্দপাই এলাকায় ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরদিন কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রক্টর এ জে এম নূর-ই-আলমের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো এবং আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আনিত অভিযোগ ও উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে প্রক্টর এ জে এম নূর-ই-আলম অভিযোগ করেছেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। এআই দিয়ে অডিও বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। 

তার দাবি, তিনি জুলাই আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। এর প্রমাণ তার ফেসবুক আইডিতেই আছে। তিনি তার ফেসবুক আইডি যাচাই করার অনুরোধ করেন।

পরে তার ফেসবুকে গিয়ে দেখা যায়, কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৭ জুলাই তিনি প্রোফাইল পিকচার কালো করেছেন। পরদিন ১৮ জুলাই ‘সেভ বাংলাদেশী স্টুডেন্টস’ লেখা একটি ফটোকার্ড প্রোফাইল পিকচার করেছেন। ৩০ জুলাই লাল করেছেন প্রোফাইল পিকচার। ৩১ জুলাই আবার নিজের ছবির সঙ্গে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না, সেভ বাংলাদেশী স্টুডেন্টস’ লেখা একটি ছবি প্রোফাইলে দিয়েছেন। এছাড়া আন্দোলনের পক্ষে তিনি বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়েছেন নিজের ফেসবুকে।

এ জে এম নূর-ই-আলম বলেছেন, “আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করি। আন্দোলনের অনেক আগে থেকেই আমি নিপীড়িত শিক্ষার্থীদের আইনি সেবা দিয়ে এসেছি। আওয়ামী সরকারের পতনের পর আমি চলতি বছরে প্রক্টর হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জুলাই যোদ্ধাদের আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই কমিটিতে আমি ছিলাম। আমি তাদের যাচাই-বাছাই করে সহায়তার জন্য নির্বাচিত করেছি। আমি আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলাম, এমন অভিযোগ পুরোপুরি অসত্য। এটা ষড়যন্ত্র।”

কারা ষড়যন্ত্র করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু, সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের কমিটি ঘোষণা করা হয় এবং তারা আমাকে ফুল দিতে আসে। আমি বলেছি যে, প্রক্টর সবার, এই শুভেচ্ছা নিতে পারব না। সম্প্রতি বিভাগের কয়েকজনকে সাময়িক বহিষ্কারও করেছিলাম। তারপর থেকেই ষড়যন্ত্র।”

“তারপরও অভিযোগ আসতেই পারে, কর্তৃপক্ষও সাময়িক বরখাস্ত করতে পারে। কিন্তু, আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। সেটা না হলে আমি আইনের আশ্রয় নেব,” যোগ করেন নূর-ই-আলম।

নূর-ই-আলমের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন তার বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, “তিনি (নূর-ই-আলম) আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন কি না, সেটা আমি বলতে পারব না। তবে, তিনি ছাত্রলীগ করতেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখায় ছিলেন। আমরা তার অডিও শুনেছি, এটা আমাদের কাছে এআই দিয়ে তৈরি মনে হয়নি। এটা নিয়ে আমরাও আলোচনা করেছিলাম।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়