ঢাকা     শনিবার   ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

দিনে জরিমানা করায় রাতের তোলা হয় বালু

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫  
দিনে জরিমানা করায় রাতের তোলা হয় বালু

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাজপাট ইউনিয়নের রাজপাট দক্ষিণপাড়া ও বরইহাট গ্রামে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব চলছে।

অভিযোগ আছে, ওই গ্রামের অসিম, সাহিনুর, কালাম ও নাসির জমি থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে সেগুলো ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। অতিরিক্ত বালু উত্তোলনে ঝুঁকিতে পড়েছে আশেপাশের আরও ফসলি জমি ও বসত বাড়ি।

আরো পড়ুন:

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজপাট ইউনিয়নের অসিম, কালাম ও সাহানুর বরইহাট সিদ্দিকীয়া সিনিয়র (আলিম) মাদ্রাসা বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কাজে বালু দেওয়ার নাম করে রাতের আঁধারে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন।

অন্যদিকে, একই ইউনিয়নের ধোপাপাড়া গ্রামে রাজপাট কলেজের অধ্যাপক মতিয়ার রহমান মতিন ও ইয়াসিন দিন-রাত এক করে বালু উত্তোলন করে নতুন নির্মাণাধীন রাস্তার বেড, বসতি ভিটা ও রাস্তার পাশের জায়গা ভরাট করছেন। রাজপাট দক্ষিণপাড়া রজব আলির পুকুর থেকে স্কুলে বালু দেওয়ার নাম করে অসিম বালু উত্তোলন করছেন। 

পরিবেশ বিষয়ক আইন সংস্থা ‘বেলা’র একটি সূত্র জানায়, অবৈধ ড্রেজার বা বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। বালু উত্তোলন করতে হলে সরকার স্বীকৃতি নির্ধারিত বালু মহল থেকে তা উত্তোলন করতে হয়। ফসলি জমি, পুকুর, ডোবা-নালা বা গ্রামের বৃদ্ধ খাল থেকে বালু উত্তোলনের সময় সেখানে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়, তার কারণে আশপাশের ভূমি বা ভূমিতে অবস্থিত বিভিন্ন স্থাপনা, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি ও গাছপালা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

অথচ রাজপাট ইউনিয়নে মাদ্রাসা, আশ্রয়কেন্দ্র, রাস্তার বেড ও স্কুল মাঠ ভরাট করতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি নির্মাণকাজসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ঠিকাদারের কাছে স্বল্প খরচে বালু উত্তোলন করে তা তারা বিক্রি করেন।

স্থানীয় আলম মোল্লা ও শাহা মীর জানান, সিঙ্গা, রাজপাট ও পুইশুর ইউনিয়নে কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও আবার রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বালুদস্যুরা প্রথমে মাঠের মাঝখানে কম দামে জমি কেনে। এরপর সেই ফসলি জমি থেকে শুরু করে বালু বিক্রি।

তারা জানান, দিনে কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কারণে এখন রাতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে তোলা হয় বালু। তৈরি হয় বিশাল আকারের গর্ত। পরে আশপাশের জমি ভাঙতে শুরু করে। এরপর ভয় দেখিয়ে ওইসব ফসলি জমি কিনে শুরু করা হয় মাটি-বালু উত্তোলন। 

তারা আরো জানান, অসিম, সাহিনুর, কালাম, অধ্যাপক মতিউর রহমান মতিন ও ইয়াসিন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে হামলার শিকার হচ্ছে। ওই ভূমিদস্যুদের কাছে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তারাও ব্যর্থ।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অসিম বলেন, “কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত আমাদের জরিমানা করেছে। তাই এখন আর দিনে বালু তুলি না। রাতের বেলায় বালু তোলার কাজ করি। তাই প্রশাসন আমাদের কিছুই করতে পারবে না।”

রাজপাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিল্টন মিঞা পটু বলেন, “একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হয়েছে। তারপরেও বন্ধ হচ্ছে না রাজপাট ইউনিয়নে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং আইন-শৃংখলা মিটিংয়ে এ বিষয় নিয়ে আবারও আলোচন করব।”

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, “বিষয়টি আমি মৌখিকভাবে জেনেছি। কয়েকবার ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। রাতে বালু উত্তোলনের বিষয়টির সত্যতা পেলে আইনানুগভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/বাদল/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়