ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্কুল ফিডিংয়ের প্রথম দিনই বনরুটি বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ১৮ নভেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১০:৫৩, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্কুল ফিডিংয়ের প্রথম দিনই বনরুটি বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও উপস্থিতির হার বাড়াতে যখন স্কুল ফিডিং কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, ঠিক তখনই চাঁপাইনবাবগঞ্জে এর শুরুটা হলো চরম হতাশাজনক। সোমবার (১৭ নভেম্বর) জেলার চারটি উপজেলায় একযোগে এই বহুপ্রতীক্ষিত কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।

কর্মসূচির প্রথম দিনই উঠেছে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। এদিন, পূর্বনির্ধারিত খাদ্যতালিকায় কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য বনরুটি ও দুধ দেওয়ার কথা ছিল। তবে, প্রাথমিক স্কুলগুলোতে বনরুটির কোনো খোঁজই মেলেনি। 

আরো পড়ুন:

প্রাথমিক স্কুলে বনরুটি সরবরাহের দায়িত্ব পাওয়া গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) নামে প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিদের্শনা অনুযায়ী, তাদের আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে বনরুটিসহ অন্য খাদ্যপণ্যগুলো সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার শুধুমাত্র দুধ সরবরাহ করা হয়েছে। বনরুটি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা সরবরাহ করেনি। আগামী সোমবার থেকে তারা বনরুটিসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যগুলো সরবরাহ করার কথা জানিয়েছে।

এদিকে, এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, এই অব্যবস্থাপনার ফলে একদিকে যেমন শিশুরা তাদের প্রাপ্য খাবার থেকে বঞ্চিত হলো, তেমনি কর্মসূচির সুষ্ঠু ও আন্তরিক বাস্তবায়ন নিয়েও প্রশ্ন উঠল। যে প্রকল্পটি প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন আশার সঞ্চার করেছিল, শুরুতেই এই ঘাটতি সেই আশাকে ম্লান করে দিল।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহের সোমবার ১২০ গ্রামের একটি বনরুটি ও ২০০ গ্রাম দুধ দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের। মঙ্গলবার ফর্টিফাইড বিস্কুট ৭৫ গ্রাম ও স্থানীয় মৌসুমি ফল বা কলা দেওয়া হবে ১০০ গ্রাম। এছাড়া, প্রতি রবিবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ১২০ গ্রাম ওজনের বনরুটি ও ৬০ গ্রাম ওজনের একটি সিদ্ধ ডিম দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সোমবার শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র ২০০ গ্রাম ওজনের একটি দুধের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। খাদ্যতালিকায় নিয়ম অনুযায়ী ১২০ গ্রাম ওজনের বনরুটি দেওয়ার কথা থাকলেও; তা সরবরাহ করা হয়নি। অভিভাবকদের প্রশ্ন, যে কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্যই হলো শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করা, সেখানে উদ্বোধনের দিনেই কেন খাদ্যতালিকা থেকে একটি খাবার বাদ গেল?

শিবগঞ্জ পৌর এলাকার জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মিজানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‍“রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে হয়। সামান্য আয় দিয়ে সন্তানদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ সম্ভব না। আশা নিয়ে সোমবার বাচ্চাকে স্কুলে পাঠালাম, ভেবেছিলাম পুষ্টিকর খাবার পাবে। শুরুর দিনই একটি খাবার বাদ পড়ে গেল। শুধুমাত্র একটি দুধের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিনই যদি এমন হয়, তবে বাকি দিনগুলোতে কী হবে? শিশুদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হলো।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার পাঠানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক সাইদুর রহমান বলেন, “আজকে শুধু বাচ্চাদের একটি দুধের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। বনরুটি দেওয়ার কথা থাকলেও বাচ্চারা পায়নি।”

গোমস্তাপুর উপজেলার মচকৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষিকা জানান, সোমবার পূর্বনির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী দুধ ও বনরুটি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শিক্ষার্থীদের শুধু দেওয়া হয়েছে একটি দুধের প্যাকেট। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী এক শিক্ষিক বলেন, স্কুল ফিডিংকে মিডডে মিল বলা হচ্ছে। শুরুর দিনে শুধু ২০০গ্রাম একটি দুধের প্যাকেট দেওয়ায় বাচ্চাদের পেট ভরেনি। বনরুটি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। 

তিনি বলেন, আজকে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম দেওয়ার কথা, কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসব খাবার সরবরাহ না করায় আজকের দিনের স্কুল ফিডিং বন্ধ। আবার ২৪ তারিখ থেকে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বনরুটি, কলা ও সিদ্ধ ডিম সরবরাহের কাজটি পেয়েছে। 

স্কুলে বনরুটি সরবরাহ না করার কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, “সোমবার থেকে স্কুল ফিডিং চালু হলো। এদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বনরুটি দেওয়ার কথা ছিল। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিদের্শনা অনুযায়ী, আমাদের আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে বনরুটিসহ অন্য খাদ্যপণ্যগুলো সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। যে দিনগুলোয় খাবার সরবরাহ করা হয়নি, এসব খাবার পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে।” 

এই সাতদিন কেন তালিকা অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করা হবে না- এমন প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলম বলেন, “জেলার নাচোল উপজেলা বাদে বাকি চার উপজেলায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় রয়েছে জেলার ৬১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের ১ লাখ ২১ হাজার ৪৪৫ জন শিশু শিক্ষার্থীকে মিডডে মিল দেওয়া হবে। আজকে শুধুমাত্র দুধ সরবরাহ করা হয়েছে। বনরুটি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা সরবরাহ করেনি। আগামী সোমবার থেকে তারা বনরুটিসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যগুলো সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছে।”

এই অব্যবস্থপনার সম্পর্কে জানতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ফিডিং কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়