মায়ের লাশ তুলে লেপ–কাঁথায় মুড়িয়ে রাখলো ছেলে
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম
কবর খুঁড়ে মায়ের লাশ তুলে লেপ-কাঁথায় মুড়িয়ে রাখেন ছেলে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মোথাজুরী এলাকায় ঘটেছে চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। পারিবারিক কবরস্থান থেকে নিজের মায়ের লাশ তুলে এনে ঘরে মশারী টানিয়ে লেপ–কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছে সজিব হোসেন নামের এক মাদকাসক্ত ছেলে। ঘটনাটি জানাজানি হতেই এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র কৌতুহল।
এলাকাবাসী, মৃতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোথাজুরী এলাকার আনতাজ আলীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী খোদেজা বেগম একমাত্র ছেলে সজিবকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। অসৎ সঙ্গে পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে সজিব। প্রায়ই মায়ের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ ও শারীরিক নির্যাতন করত।
গত শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে মা–ছেলের মধ্যে তীব্র বাক-বিতণ্ডা হয়। পরে অভিমান ও মানসিক যন্ত্রণায় খোদেজা বেগম গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার সন্ধ্যায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু রাতের কোনো একসময় সজিব গোপনে কবর খুঁড়ে লাশ তুলে নিজ ঘরে নিয়ে আসে। সেখানে মশারী টানিয়ে লেপ–কাঁথা দিয়ে লাশ ঢেকে রাখে।
সোমবার সকালে কবরস্থানে গিয়ে কবর খোলা দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। পরে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সজিব ঘর বন্ধ করে রেখেছে। আচরণেও অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সজিবের ঘরের তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে। ঘরের ভেতর মশারীর নিচে লেপ–কাঁথায় মোড়া অবস্থায় পাওয়া যায় খোদেজা বেগমের লাশ। লাশ থেকে তখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল।
এর আগের রাতে সজিব তার মামা আব্দুল মান্নান মিয়াকে ফোন দিয়ে ‘মাকে কেন দাফন করা হলো’ এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দাফনকাজে অংশ নেওয়া স্বজনদের প্রাণনাশের হুমকিও দেন। এতে পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে ভয়–আতঙ্ক তৈরি হয়।
এ ঘটনা জানাজানি হলে আশপাশের বহু মানুষ ভিড় করে লাশ দেখতে। খোদেজার বড় ভাই আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘‘সজিব আমাকে ফোন করে বলেছে মাকে কেন মাটি দিলেন? সে আমাকে খুন করার হুমকিও দিয়েছে। আমারা বর্তমানে চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি।’’
কালিয়াকৈর থানাধীন ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুরুজ জামান বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও মর্মান্তিক। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় লাশটি পুনরায় দাফন করা হয়েছে।”
ঢাকা/রেজাউল/এস