ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মৌসুমের প্রথম দিনে সেন্ট মার্টিনে গেলেন সহস্রাধিক পর্যটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ১ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৩:৪৭, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
মৌসুমের প্রথম দিনে সেন্ট মার্টিনে গেলেন সহস্রাধিক পর্যটক

১ হাজার ১৭৪ জন পর্যটক নিয়ে চলতি মৌসুমে প্রথম বারের মতো প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে গেছে তিনটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ। 

সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় জাহাজগুলো।

শুরুতেই পর্যটকদের কিউআর কোড যাচাই, নিরাপত্তা ব্রিফিং এবং স্বাগত জানান জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।

দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার পর আজ (১ ডিসেম্বর) থেকে দুই মাসের জন্য সীমিত পরিসরে সেন্ট মার্টিনে রাতযাপনের সুযোগ চালু হয়েছে। তবে, প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটকের বেশি দ্বীপে যেতে পারবেন না এবং সরকার ঘোষিত ১২ নির্দেশনা কঠোরভাবে মানতে হবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, “সরকারি নির্দেশনা অনুসারে ট্রাভেল পাস ও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন না। প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক, ওয়ান-টাইম বোতল, মোটরচালিত যান, উচ্চ শব্দ, রাতের আলোর ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসন মাঠে থাকবে।”

গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই প্রবাল দ্বীপে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ ছিল। এরপর থেকে নিয়ন্ত্রিত পর্যটনব্যবস্থা চালু থাকলেও রাতযাপনের অনুমতি না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এবার দুই মাসের পূর্ণ প্রস্তুতিতে জাহাজ পরিচালনা করবে মালিকপক্ষ। সি ক্রুজ অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেছেন, “রাত্রীযাপনসহ আজ থেকে দুই মাসের জন্য মুক্ত করা হয়েছে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। আজ ১ ডিসেম্বর ১ হাজার ১৭৪ জন যাত্রী নিয়ে তিনটি জাহাজ সেন্ট মার্টিনে গেছে। গত বছরের ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ১ লাখের বেশি পর্যটক ওই দ্বীপে ভ্রমণ করেছিলেন। এবার আরো সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় জাহাজ চলবে এবং নিয়ম মেনে পর্যটকরা সেন্ট মার্টিনে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।”

ঢাকার বনশ্রী থেকে আসা দম্পতি আহসান রিয়াদ ইসলাম ও নাহার তাসনীম প্রথম বার সেন্ট মার্টিনে যাচ্ছেন। কথা হয় তাদের সাথে। রিয়াদ বলেন, “দীর্ঘ সময় পর রাতে থাকার অনুমতি পেয়ে আমরা দারুণ খুশি। কিউআর কোড স্ক্যান থেকে শুরু করে নিরাপত্তা—সবকিছুই আজ খুব সুশৃঙ্খল মনে হয়েছে। সেন্ট মার্টিন সব সময়ই আমাদের কাছে স্বপ্নের জায়গা।”

নাহার বলেন, “পরিবেশ রক্ষায় কড়াকড়ি দেখে ভালো লাগছে। সবাই যদি নিয়ম মানে, দ্বীপটা আরো সুন্দর থাকবে।”

রাজবাড়ী থেকে শওকত দস্তগীর বলেন, “প্রথম বারের মতো সেন্ট মার্টিনে যাওয়া হচ্ছে। তাই, আগে থেকেই রেজিস্ট্রেশন করেছি‌। আজকের যাত্রায় নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা দুটোই প্রশংসার যোগ্য। প্রথম দিনের আয়োজন দেখে আমাদের আস্থা বেড়েছে। প্রতিদিন যেন এই নিয়ম অব্যাহত রাখা হয়।”

মাহমুদা জারা নামের আরেক পর্যটক বলেন, “টিকিটের কিউআর কোড যাচাই, লাগেজ চেক—সবকিছুই খুব পেশাদারভাবে হয়েছে। আমরা খুব উৎসাহ নিয়ে যাচ্ছি।”

এদিকে, দীর্ঘ অপেক্ষার পর পর্যটক বরণে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন সেন্ট মার্টিনের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সেন্ট মার্টিন মারমেইড রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী তৈয়ব উল্লাহ বলেছেন, “দীর্ঘ ১০ মাস পর পর্যটকরা আমাদের সেন্ট মার্টিনে আসছেন। তাদেরকে বরণ করতে আমরা প্রস্তুত আছি। সারা দেশ থেকে পর্যটকরা আসলে আমাদের আরো বেশি ভালো লাগবে।”

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেছেন, “শুধু দুই মাস নয়, অন্তত চার মাস রাতযাপন চালু থাকলে আগ্রহ নিয়ে থাকা অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন আসতে পারবেন। ফলে, অর্থনীতি আরো দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে।”

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে ১২টি নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান চলাচল করবে না। ট্যুরিস্টদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টাল থেকে অনলাইনে টিকিট কিউআর কোডসহ সংগ্রহ করতে হবে। সৈকতে রাতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ বা বারবিকিউ নিষিদ্ধ। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ, প্রবাল, কাছিম, পাখি, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা যাবে না। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ মোটরচালিত যেকোনো যান চলাচল নিষিদ্ধ। পলিথিন এবং ওয়ান টাইম প্লাস্টিক নেওয়া যাবে না। ৫০০ ও ১ হাজার মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল বহন করা যাবে না। 

ঢাকা/তারেকুর/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়