ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বরগুনায় এয়ারগান দিয়ে ২ কারারক্ষীর পাখি শিকার

বরগুনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫  
বরগুনায় এয়ারগান দিয়ে ২ কারারক্ষীর পাখি শিকার

পাখি ও এয়ার গান নিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে স্থান ত্যাগ করছেন দুই কারারক্ষী।

বরগুনায় এয়ারগান দিয়ে এক ব্যাগ পাখি শিকার করেছেন দুই কারারক্ষী। তাতে অন্তত ২৫টি পাখি ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বরগুনা পৌর শহর ও এর আশপাশের এলাকায় মোটরসাইকেলে ঘুরে ঘুরে পাখি শিকার করেন তারা। 

পরে বেলা ১১টার দিকে বরগুনা পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আঃ কাদের সড়কে একটি ডাহুক শিকারকালে সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার ও ভিডিও জার্নালিস্টের সামনে পড়লে তারা এর প্রতিবাদ জানান। এসময় পাখি শিকারী দুই কারারক্ষী ব্যাগ ভর্তি শিকার করা পাখি এবং এয়ারগান নিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেলে করে সটকে পড়েন।

এয়ার গান দিয়ে পাখি শিকার করা দুই কারারক্ষী হলেন- মো. হাফিজুর রহমান এবং মো. রফিকুল ইসলাম। তারা দুই জনই বরগুনা জেলা কারাগারে কর্মরত আছেন। 

এদের মধ্যে মো. হাফিজুর রহমান কারারক্ষী পদে এবং মো. রফিকুল ইসলাম সহকারী প্রধান কারারক্ষী পদে কর্মরত। এর আগেও মো. রফিকুল ইসলাম এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকার করে সাংবাদিকদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। সেসময় তিনি ভুল স্বীকার করে আর পাখি শিকার করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছিলেন।

এ বিষয়ে সময় টেলিভিশনের বরগুনার রিপোর্টার মো. সাইফুল ইসলাম মিরাজ বলেন, “সকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনে আমি আঃ কাদের সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার সহকর্মী সময় টেলিভিশনের বরগুনার ভিডিও জার্নালিস্ট রুবেলও সঙ্গে ছিল। আঃ কাদের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় দুজনকে এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকার করতে দেখি। মোটরসাইকেলে আমরা যখন তাদের কাছে পৌঁছাই তখন মো. হাফিজুর রহমানের হাতে একটি ডাহুক ছিল এবং মো. রফিকুল ইসলামের হাতে এয়ারগান ছিল। এয়ারগান দিয়ে ডাহুকটি শিকার করা হয়েছে। ডাহুকটি তখন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল।” 

তিনি আরো বলেন, “দৃশ্যটি দেখে আমরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে পাখি শিকার করতে নিষেধ করি এবং ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে শুরু করি। সেসময় মো. হাফিজুর রহমান গুলিবিদ্ধ ডাহুকটি ফেলে দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেলে উঠে বসেন এবং মো. রফিকুল ইসলাম এক হাতে ফেলে দেওয়া ডাহুকটি কুড়িয়ে নিয়ে এবং অন্য হাতে এয়ারগান নিয়ে হাফিজুর রহমানের মোটরসাইকেলে উঠে বসেন। এরপর তারা দ্রুত সটকে পড়েন। তাদের মোটরসাইকেলে বেঁধে রাখা একটি ব্যাগে অন্তত ২৫টি পাখি ছিল।”

একুশে টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি জয়দেব রায় জানান, সহকারী প্রধান কারারক্ষী মো. রফিকুল ইসলাম এর আগেও এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকার করে আমার প্রতিবাদের মুখে পড়েন। সেসময় তিনি আর পাখি শিকার করবেন না বলে অঙ্গীকার করেন। তাই তার বিরুদ্ধে আমি তখন অভিযোগ করিনি। তিনি সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন। তার বিরুদ্ধে এখন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।”

এ বিষয়ে বরগুনার পরিবেশকর্মী মুশফিক আরিফ বলেন, “এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকার করা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। যে দুই কারারক্ষী এয়ারগান দিয়ে এক ব্যাগ পাখি শিকার করেছেন, তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানাই। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানাই। আইনের রক্ষক হয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড যারা করেন, সাধারণ মানুষের তুলনায় তাদের আরো বেশি শাস্তি হওয়া দরকার।”

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সহকারী প্রধান কারারক্ষী মো. রফিকুল ইসলামের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে কারারক্ষী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “আমি ছুটিতে ছিলাম। সকালে মো. রফিকুল ইসলাম আমাকে ডেকে নিয়েছেন। তখন তিনি আর আমি আমার মোটরসাইকেলে বের হই। তারপর তিনি পাখি শিকার করেছেন। বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবগত হওয়ার পর রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেছেন এবং তার এয়ারগান জব্দ করেছেন। এছাড়া আমার কাছ থেকে লিখিত জবাব নিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর এর আগেও তিনি পাখি শিকার করার অভিযোগে মুচলেকা দিয়েছেন।”

এ বিষয়ে বন বিভাগের বরগুনার রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “বিষয়টি আমি অবগত নই। এ বিষয়ে খোঁজ নেব এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/ইমরান/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়