কুয়াশা-শৈত্যপ্রবাহে স্থবির রাজশাহীর জনজীবন
রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে উত্তরের জেলা রাজশাহী। পদ্মা পাড়ের এই শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। প্রতিদিনই কমছে দিনের তাপমাত্রা, ফলে ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। টানা ৩ দিন পর বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা কমেনি।
বুধবার ভোর সাড়ে ৬টায় রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে সময় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ছিল শতভাগ; যা শীতের অনুভূতিকে আরো তীব্র করে তোলে।
গত ৩ দিন ধরে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল পুরো এলাকা। বুধবার দুপুরে কিছুটা কুয়াশা কেটে সূর্যের দেখা মিললেও হিমেল বাতাসে স্বস্তি মেলেনি। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে নগর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনে।
সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ। শীতের কারণে কাজ কমে যাওয়ায় তাদের আয় নেই, আবার অনেকের কাছে নেই পর্যাপ্ত গরম কাপড়। শীতবস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল মানুষদের কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করে রাত কাটাতে হচ্ছে। কেউ কেউ সকাল-সন্ধ্যা খড়কুটো জ্বালিয়ে শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছেন।
চারঘাট উপজেলা থেকে ভোরে কাজের আশায় শহরে আসেন দিনমজুর নাজমুল। কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে তিনি বলেন, “আজ খুব বেশি ঠান্ডা। মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না, তাই কাজও মিলছে না। আগে সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন কাজ পেতাম, এখন বেশিরভাগ দিনই কাজ থাকে না।”
রিকশাচালক জাকির আলী বলেন, “হুহু করে ঠান্ডা বাতাস বইছে। রিকশা চালালে শরীর জমে যায়। যাত্রীও কম, আয়ও কম। খুব কষ্টে দিন কাটছে।”
শীতের প্রভাব পড়েছে নগর জীবনের ছন্দেও। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কুয়াশা আর ঠান্ডার ভয়ে মানুষ দ্রুত ঘরে ফিরছে। সন্ধ্যার পর অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহর আগেভাগেই নিস্তব্ধ হয়ে পড়ছে।
গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা আরো বেশি। বানেশ্বর এলাকার বাসিন্দা তুষার আলম বলেন, “শহরের তুলনায় গ্রামে শীত অনেক বেশি। খোলা মাঠ, নদী আর কুয়াশার কারণে ঠান্ডা হাড়ে হাড়ে ঢুকে পড়ে।”
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, “বুধবার রাত সোয়া ৩টার পর থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। ভোরের পর ঘন কুয়াশা দেখা গেছে, যার কারণে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মতো অনুভূতি হয়। রাজশাহীসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এই পরিস্থিতি আরো কয়েক দিন থাকতে পারে।”
মেঘ ও কুয়াশা কেটে গেলে শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/কেয়া/জান্নাত