সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যত ক্ষত
নতুন বছরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ২০২৫ সালে ফিরে তাকালে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন এক গভীর উদ্বেগের ছবি তুলে ধরে। বছরজুড়ে আলোচনায় এসেছে সৃজনশীলতার সাফল্যের চেয়ে বেশি বিতর্ক, হামলা ও দমন-পীড়নের ঘটনা।
চলতি বছরে নাটক ও সংগীত আয়োজনে বাধা আসে। শাহবাগে ‘গানের আর্তনাদ’ কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদী আয়োজন পণ্ড হয়, কয়েকটি স্থানে নাটক মঞ্চায়ন স্থগিত করা হয়। মার্চ মাসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ দেখা যায়।
বছরের শেষে পরিস্থিতি আরো অস্থির হয়ে ওঠে। গত ১৮ ডিসেম্বর ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং পরের দিন উদীচীর কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডে ৫৭ বছরের নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার ঘটনা সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে নাড়িয়ে দেয়। নিরাপত্তার অজুহাতে বাতিল হয় একাধিক বিদেশি শিল্পীর কনসার্ট।
এছাড়া ২০২৫ সালে বাউল সম্প্রদায়, লোকসংগীতশিল্পী, নাট্যদল ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক আঘাতের মুখে পড়ে। বাউল ও লোকসংগীত শিল্পীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও বছরজুড়ে আলোচিত ছিল। ময়মনসিংহের তারাকান্দায় বাউল ফকির হালিম উদ্দিন আকন্দের মাথার জট জোর করে কেটে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
সব মিলিয়ে ২০২৫ সাল সংস্কৃতির জন্য ছিল ক্ষতবিক্ষত এক বছর। সহিংসতা, হুমকি ও বাধার মধ্যেও প্রতিবাদ হয়েছে, প্রতিরোধ হয়েছে। তবু স্বাধীন সংস্কৃতি ও বহুত্ববাদী চর্চা রক্ষার লড়াই যে আরো কঠিন হয়ে উঠছে, সে বাস্তবতাই বছর শেষে সবচেয়ে বড় সত্য হয়ে রইল।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত