ঢাকা     বুধবার   ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে উত্তাল ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৮:৪৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে উত্তাল ইরান

অর্থনৈতিক সংকটের তীব্র প্রভাবে ইরানে দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে গণবিক্ষোভ। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে এই বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

আরো পড়ুন:

প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) টানা তৃতীয় দিনের বিক্ষোভে তেহরানের রাস্তায় নেমেছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ইসফাহান, ইয়াজদ এবং জানজান শহরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় গত রবিবার। সেদিন তেহরানের জুমহুরি এলাকা এবং গ্র্যান্ড বাজারের কাছে দুটি প্রধান প্রযুক্তি ও মোবাইল ফোন শপিং সেন্টারের দোকানিরা দোকানপাট বন্ধ করে রাস্তায় নেমে আসেন। রিয়ালের মান রেকর্ড পরিমাণ কমে যাওয়ায় আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, যা খুচরা ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের নিষেধাজ্ঞা এবং কূটনৈতিক চাপের কারণে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রিয়ালের মান দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। গত রবিবার যখন বিক্ষোভ শুরু হয়, তখন প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে রিয়ালের বিনিময় হার ছিল প্রায় ১৪ লাখ ২০ হাজার, যা এক বছর আগে ছিল ৮ লাখ ২০ হাজার।

দশকব্যাপী পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত ইরানের অর্থনীতি গত সেপ্টেম্বরের শেষভাগ থেকে আরো চাপের মুখে পড়েছে। সে সময় জাতিসংঘ দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে ১০ বছর আগে তুলে নেওয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় বহাল করে।

ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় ইরান সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সরকার বিক্ষোভকারীদের দাবি শুনবে।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেন, “সরকার ধৈর্য ধরে কথা শুনবে, এমনকি যদি কণ্ঠস্বর কঠোরও হয়। কারণ আমরা বিশ্বাস করি আমাদের জনগণ যথেষ্ট ধৈর্যশীল। যখন তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চকিত হয়, তখন বোঝা যায় যে তাদের ওপর চাপ অনেক বেশি।”

তিনি আরো বলেন, “সরকারের কাজ হলো সেই কণ্ঠস্বর শোনা এবং সমাজের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে একটি সাধারণ বোঝাপড়ায় পৌঁছাতে সাহায্য করা।” তিনি আরো উল্লেখ করেন, সরকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।

ইরানি সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান মঙ্গলবার শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। পেজেশকিয়ান সরকারি কর্মকর্তাদের বিক্ষোভকারীদের ‘বৈধ দাবি’ শোনার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জনগণের জীবিকা রক্ষা করার অঙ্গীকার করেছেন, যা তার ‘প্রতিদিনের উদ্বেগের বিষয়’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক সংস্থা কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্রাফট-এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পারসির মতে, অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে সরকারের সক্ষমতার ওপর ইরানের জনগণের আস্থা নেই।

তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, “ইরানের প্রেসিডেন্ট নিজেই প্রায় এক সপ্তাহ আগে বলেছিলেন যে, তিনি এই সমস্যাগুলো নিয়ে কিছুই করতে পারবেন না। সরকারের সক্ষমতার ওপর এই আস্থার অভাব মূলত সরকারের নিজেদের বক্তব্যের কারণেই তৈরি হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “এখন বড় প্রশ্ন হলো- এই বিক্ষোভ আরো গতি পাবে কি না এবং অর্থনৈতিক সংকটের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক ইস্যুতে মোড় নেবে কি না।”

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এই বিক্ষোভের খবরে জোর দিয়ে বলছে যে, এটি মূলত রিয়ালের দরপতনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে দেশ শাসনকারী ধর্মতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোনো অসন্তোষ থেকে এটি হয়নি।

এর আগে ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। সে সময় কঠোর হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশ হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনীর মৃত্যুর পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। সেই বিক্ষোভে কয়েক শ’ মানুষ নিহত হন, ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়