ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ঐতিহ্যের উনসত্তরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

সাইফুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৭, ৬ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১২:৩২, ৬ জুলাই ২০২১
ঐতিহ্যের উনসত্তরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

আজ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন প্রায় ৩৮ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর সমারোহ। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর। 

নানা গৌরবোজ্জল ঐতিহ্য নিয়ে ৬৯ বছরে পা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি৷ দীর্ঘ এ পথচলায় নিজস্ব আলোয় আলোকিত এই বিদ্যাপীঠ। শিক্ষা এবং গবেষণায় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির গৌরব ও ঐতিহ্য বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে।

আরো পড়ুন:

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভিন্ন বিভাগ এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও লকডাউনের কারণে বড় পরিসরে কোনো কর্মসূচির আয়োজন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এবার সীমিত পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে।

শহীদ ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতি বিজড়িত দেশের শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠের রয়েছে গৌরব-ঐতিহ্যের সুদীর্ঘ ইতিহাস। ব্রিটিশ আমলে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজ। এই কলেজে আইন বিভাগসহ পোস্টগ্র্যাজুয়েশন শ্রেণি চালু করা হলেও কিছু দিন পরেই সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তখনই রাজশাহীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ১৯৪৭ সালের দিকে রাজশাহীতে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়।

১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা। পরে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি ডেলিগেশন পাঠানো হয়। এভাবে একের পর এক আন্দালনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়। এই আন্দোলনে একাত্ব হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখ্শ।

অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাস হয়। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইতরাৎ হোসেন জুবেরীকে সঙ্গে নিয়ে মাদার বখ্শ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এর পর শুরু হয় রাবির পথচলা। 

বর্তমানে ৩০৩ দশমিক ৮০ হেক্টরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ১১৭৭ জন শিক্ষক ও ২০০০ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৩৩০ জন (বিদেশি শিক্ষার্থী ৫৮ জন)। এর মধ্যে ছাত্র ২৫ হাজার ৫৭৯ জন ও ছাত্রী ১২ হাজার ৫৫১ জন। বর্তমানে ১২ অনুষদের অধীনে বিভাগ রয়েছে ৫৯টি। বেড়েছে অবকাঠামো। ১২টি একাডেমিক ভবনসহ বর্তমানে রাবির ছাত্রদের থাকার জন্য আবাসিক হল রয়েছে মোট ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ৬টি। এছাড়া গবেষক ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক ডরমেটরি।

সুদীর্ঘ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিয়ে অনেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন। দীর্ঘ এ সময়ে রাবি তৈরি করেছে ভাষা বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, ইতিহাসবিদ আব্দুল করিম, তাত্ত্বিক ও সমালোচক বদরুদ্দীন উমর, চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম, নাট্যকার মলয় ভৌমিক, মাসুম রেজা ও জাতীয় ক্রিকেটার আল আমিন হোসেনদের মতো অসংখ্য গুণীজনকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, বিগত প্রায় সাত দশক ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এর স্নাতকরা দেশ-বিদেশে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সাফল্য ও উৎকর্ষের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। আগামী দিনগুলোতেও সে ধারা অক্ষুন্ন থাকবে বলে আমি আশা রাখি।

তিনি আরও বলেন, ১৯৫৩ সালে দুটি অনুষদের ৬টি বিভাগ নিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ সেখানে ১২টি অনুষদের ৫৯টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউটে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চলছে। আগামীতে এখানে আরও কয়েকটি অনুষদ ও বিভাগ চালুর পরিকল্পনা আছে। বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এখানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের এক গতিশীল ধারা চলছে। ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠছে। এজন্য সরকারের প্রতি আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী জ্ঞানকেন্দ্র।

রাবি/মাহি 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়