ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যশোরের রেস্তোরাঁয় খাবার পানিতে অণুজীবের উপস্থিতি: গবেষণা

সজিবুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ২৮ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৭:০০, ২৮ জুলাই ২০২১
যশোরের রেস্তোরাঁয় খাবার পানিতে অণুজীবের উপস্থিতি: গবেষণা

সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক গবেষণা করে দেখেছেন, যশোর শহরের বেশির ভাগ হোটেল, চায়ের দোকান ও রেস্তোরাঁর সরবরাহ করা খাবার পানি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় গবেষক দলটি যশোর পৌরসভার বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকানে সরবরাহকৃত পানীয় জলের গুণগতমান নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি সমীক্ষা চালান। এসময় পানির নমুনায় অণুজীবের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।

গবেষক দলটি যশোর পৌরসভার বিভিন্ন চায়ের দোকান, রাস্তার পার্শ্বের ফাস্ট ফুডের দোকান, সাধারণ রেস্তোরাঁ ও সজ্জিত রেস্তোরাঁর মধ্য থেকে মোট ৩৫টি স্থানের পানির নমুনা সংগ্রহ করে পানির গুণগত মান যাচাই করে। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, নমুনাগুলোর পানির অস্বচ্ছতা (টার্বিডিটি), বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা, পিএইচ (Ph), মোট দ্রবীভূত দ্রবণ, নাইট্রেট, সালফেট, ফসফেটের মানসমূহ বাংলাদেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত সীমার মধ্যে থাকলেও বেশ কয়েকটি নমুনায় ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের চেয়ে বেশি ছিল। এছাড়াও ৪৬ শতাংশ নমুনায় লৌহর ঘনত্ব বাংলাদেশ অনুমোদিত সীমা ছাড়িয়েছে।

আরো পড়ুন:

পাশাপাশি বেশিরভাগ নমুনা ফিকাল কলিফর্ম (স্তন্যপায়ী প্রাণীর পেট থেকে মলমূ্ত্রের মাধ্যমে বা মৃতদেহ পচে জলে বা মাটিতে মেশা বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া) দ্বারা দূষিত হয়েছে, যা জোরালো ইঙ্গিত দেয় যে, যশোর পৌরসভার লোকেরা রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। সব নমুনার মধ্যে রাস্তার পাশের ফাস্টফুডের ও ফুচকার দোকানগুলোতে সরবরাহ করা পানি জৈবিকভাবে খুবই দূষিত। অনুসন্ধানগুলো প্রমাণ করে যে, যশোর পৌরসভার খাবারের দোকান এবং রেস্তোরাঁগুলোতে সরবারাহকৃত পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক ও হুমকি স্বরূপ।

এই বিষয়ে গবেষণা দলটির প্রধান অধ্যাপক সাইবুর মোল্যা বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ হোটেল, চায়ের দোকান ও রেস্তোরাঁর মালিকেরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতন নয়। বিশেষত রাস্তার পাশের চা ও ফাস্টফুডের দোকানসহ ছোট-বড় খাবার রেস্তোরাঁগুলো। খাবার পানিতে ফিকাল কলিফর্ম নানাভাবে আসতে পারে। মূলত এইসব দোকানগুলো বেশির ভাগ সময় দেখা যায় মানুষের সংস্পর্শ, নিয়মিত পরিষ্কারের অভাব ও পশুপাখির মল থেকে ফিকাল কলিফর্ম দ্বারা দূষিত হয়।

এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য দোকান মালিকরা ঢাকনা যুক্ত পরিষ্কার-পরিছন্ন পানির পাত্র, চায়ের দোকানগুলোতে পানি উত্তোলনের জন্য লম্বা হাতল বিশিষ্ট পানির পাত্র ব্যবহারসহ নিয়মিত পানির পাত্রগুলোকে ডিটারজেন্ট দিয়ে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ভালো করে পরিষ্কার করতে পারেন। এক্ষেত্রে বাজারে সল্পমূল্যে কার্যকারী যেসব পানির ফিল্টার পাওয়া যায়, এগুলো ব্যবহার করে খুব অল্প টাকায় দোকান মালিকরা কাস্টমারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, এই সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরত প্রশাসনকে মুখ্যভূমিকা পালন করতে হবে। এই সমস্যা শুধু যশোর শহরেই নয়, এটা সমগ্র বাংলাদেশের হোটেল, চায়ের দোকান ও রেস্তারার খাবার পানির সমস্যা, যা সমাধান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য দোকান মালিকদের পাশাপাশি আমাদের সবার সচেতনতা খুবই জরুরি।

গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলগুলো Springer Publication এর Applied Water Science জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন যবিপ্রবি ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষেদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (ইএসটি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্যা, সদস্য হিসেবে ছিলেন এই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সাদিদ হোসেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এফ কে সায়মা তানজীয়া ও যবিপ্রবি ইএসটি বিভাগের স্নাতকোক্তর শিক্ষার্থী শিরিনা আক্তার।

যবিপ্রবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়