ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

উপাচার্যের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে কুবি শিক্ষক সমিতি

কুবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ২৭ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৩:০৪, ২৭ মার্চ ২০২৪
উপাচার্যের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে কুবি শিক্ষক সমিতি

গত ২৫ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের দেওয়া বক্তব্যকে মিথ্যাচার দাবি করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে উপাচার্যের দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য সম্পূর্ণ বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন বলেও দাবি করা হয়।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাজু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে বিষয়টি জানা যায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৫ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেছেন, এক সময় স্থবির হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষক সমিতি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই স্থবির ছিল না। বরং বর্তমান উপাচার্য যোগদানের পর থেকে নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, শিক্ষকদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করা, প্রশাসনিক কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য, পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণে বৈষম্য তৈরি, তথ্য গোপন করে ইনক্রিমেন্ট গ্রহণসহ নানাবিধ আর্থিক কেলেংকারীর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল ও স্থবির করে রেখেছেন। অতীতের সব উপাচার্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প এনেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত গতিশীল ছিল।

উপাচার্য ভর্তি পরীক্ষার টাকা থেকে শিক্ষকদের অ্যাওয়ার্ড ও শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তি প্রদানের নামে অর্থ আত্মসাৎ, গবেষণা খাতের বরাদ্দের তহবিল তসরুপ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা করেছেন। নিয়োগের শর্ত শিথিল, বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ অগ্রাহ্য এবং নিয়োগ বোর্ড সদস্যদের নোট অব ডিসেন্ট উপেক্ষা করে একাধিক বিভাগে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বিভাগগুলো চলছে ধুকে ধুকে। উপাচার্য দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র সাতজন শিক্ষকের পদ এনেছেন। একটি কর্মকতা-কর্মচারীর পদও তিনি নতুন করে আনতে পারেননি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দও তিনি (উপাচার্য) আনতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সে সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলছে, সবই আগের উপাচার্যের আমলের। উপাচার্য সিন্ডিকেট, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, স্থায়ীকরণ কমিটির সিদ্ধান্ত প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করে কার্যবিবরণী মনগড়াভাবে তৈরি করেন। সবমিলিয়ে গত দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দৃশ্যমান কোন উন্নয়নই করতে পারেননি। প্রতিনিয়ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, নিয়ম-নীতি ও বিধি-বিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এছাড়া আরও উল্লেখ করা হয়, উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের বিভ্রান্তি। উপাচার্য ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদ থেকে অবসর নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র প্রভাষক পদে চাকরি নিয়ে চলে যান এবং সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১২ বছর একই পদে চাকরি করার পর পুনরায় চাকরি নবায়ন করতে না পেরে ২০২০ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং জানুয়রি ২০২০ থেকে জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে চুক্তিভিত্তিক অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তার প্রদত্ত বায়োডাটায় চুক্তিভিত্তিক কিংবা অবসরপ্রাপ্ত কথাটি তিনি উল্লেখ করেননি। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক উপাচার্যের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনটি নিয়েও নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

শিক্ষক সমিতি মনে করে গত সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে চরম মিথ্যাচার করেছেন। তার দেওয়া বক্তব্য সম্পূর্ণ বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন। উপাচার্যের এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যলয়ের মান সম্মান ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

/এমদাদুল/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়