ঢাকা     শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

শিক্ষকদের রাজনীতিতে হুমকির মুখে কুবি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ৪ মে ২০২৪   আপডেট: ১৬:২৮, ৪ মে ২০২৪
শিক্ষকদের রাজনীতিতে হুমকির মুখে কুবি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ

ফাইল ছবি

সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো দাবি-দাওয়া নেই, প্রতিবাদ-প্রতিরোধও নেই। তবুও গত ছয়দিন ধরে অচল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। এই অচলাব্যবস্থার জন্য শিক্ষকদের রাজনীতিকে দায় করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা ।

২০২২ সাল থেকে নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিরোধ এখন চরমে। উপাচার্য ডানে গেলে বামে যায় শিক্ষক সমিতি।

চলতি বছর গত ২৮ এপ্রিল প্রকাশ্যে উপাচার্য ও শিক্ষকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও কনুই দিয়ে পরস্পরকে আঘাত করার ঘটনাও ঘটেছে। এরপর দু’পক্ষই পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছে, দিয়েছে পরস্পরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে উপাচার্য জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ জারি করেন। কিন্তু ছাত্রদের হলে থাকতে বলছেন শিক্ষকরা। গতকাল শুক্রবারও অনেক শিক্ষার্থীকে হলে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষকদের বড় অংশটি রয়েছে শিক্ষক সমিতির দিকে। আর ছোট একটি অংশ উপাচার্যের পক্ষে। দু’পক্ষের এই দলাদলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ।

উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছেন শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহের ঘোষণা দিয়েছেন, উপাচার্য আবদুল মঈন সরে না যাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এ অবস্থার মধ্যেই গতকাল শুক্রবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকদের রাজনীতি ও দলাদলিতে বিশ্ববিদ্যালয় ডুবতে বসেছে। বিভিন্ন বিভাগে সেশনজট দেখা দিয়েছে। নানা উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের।

জানা গেছে, গত ২০০৬ সালের ২৮ মে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুবি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অশান্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। ছাত্রলীগের গ্রুপিয়ের জের ধরে ২০১৬ সালে গুলিতে নিহত হন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

শিক্ষকদের গ্রুপিংয়ে উপাচার্যের কক্ষে তালা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেকবার। ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন উপাচার্য ড. আমির হোসেন খানের কার্যালয়ে তালা দেন অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ শিক্ষক জোটের নেতারা। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবরও তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফের পদত্যাগসহ ১৪ দফা দাবিতে তার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষক সমিতি।

বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক এএফএম আবদুল মঈন ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি যোগ দেন। মেয়াদ শেষের বেশ আগেই নানা অভিযোগে তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষকদের একটি বড় অংশ।

নাম প্রকাশে অনিচছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকরা হামলা-মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন। হামলার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরালও হয়েছে। করোনার সময় দীর্ঘ ছুটিতে একদফা লেখাপড়া বিঘ্ন ঘটে, এখন শিক্ষকদের দলাদলিতে আবার তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হলো।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষার্থীরা হল ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন। অনেক শিক্ষকরা এসব আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমর্থনও করেছেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ভাষ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য কার্যালয়ে তারা হামলার শিকার হন। এ হামলার বিচার, প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর অপসারণ, ঢাকার গেস্ট হাউস শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য খুলে দেওয়া এবং পদোন্নতিসহ সাতদফা দাবি তাদের। দাবি আদায়ে ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামও দেয়। কিন্তু উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টর গত ২৮ এপ্রিল ছাত্রলীগের একাংশ ও সাবেক শিক্ষার্থীদের দিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা করান।

এ ঘটনায় উপাচার্যসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করে শিক্ষক সমিতি। অপর দিকে উপাচার্য ও তার মদদপুষ্ট শিক্ষকদের ওপর হামলার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার সাদেক হোসেন মজুমদার শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহেরসহ ছয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা প্রশাসনিক দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন।

এদিকে নির্দেশ দেওয়ার পরও কুবির কিছু শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা তো হল সিলগালা করিনি। মেয়েদের দুইটি ও ছেলেদের তিনটি আবাসিক হলে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়ে গেছে। গুচ্ছ পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনেক স্বজন এসেছিল। কেউ কেউ টিউশনি করছে। তাই বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যাচিছ না।’

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহিদী হাসান বলেন, ‘শিক্ষকদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অপকর্মের জন্য উপাচার্যকে স্বেচ্ছায় চলে যেতে হবে। এটা এক দফা দাবিতে পরিণত হয়েছে। উপাচার্য পদে থাকার যোগ্যতা তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। তাই তিনি চলে না যাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, ‘কিছু শিক্ষক নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পদোন্নতি ও ছুটিসহ বিভিন্ন দাবি আদায় করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। আমি নিজেও হামলার শিকার হয়েছি।’

/রুবেল/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়