ঝুঁকিপূর্ণ বাণী ভবনে জীবন পার জবি কর্মচারীদের
লিমন ইসলাম, জবি || রাইজিংবিডি.কম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন বাণী ভবন
জরাজীর্ণ ভবনের ছাদে বিস্তর ফাটল, পলেস্তারা ক্ষয়ে যাওয়া দেয়াল, স্যাঁতসেতে মেঝে, আর জানালার শিকে মাকড়সার জালের আধিপত্য। এটা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শতবর্ষী পুরাতন বাণী ভবনের চিত্র।
এ দুরবস্থার মধ্যেই বছরের পর বছর ধরে বসবাস করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মচারী। তাদের প্রধান দাবি, নিরাপদ আবাসন ও ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা। তবে মে দিবস আসে যায়, কিন্তু তাদের কথা কেউ ভাবে না; পরিবর্তন হয় না ভাগ্যেরও।
আইসিটি সেলের কর্মচারী সজীব বলেন, “বাণী ভবনটি ১০০ বছরের পুরাতন। দোতলার ছাদে বড় ফাটল ধরেছে, একপাশে ছাদ ভেঙে গেছে। ওইপাশে কেউ থাকে না। তবুও ঝুঁকি নিয়েই আমরা থাকছি।”
এই ভবনে নেই বিদ্যুতের সংযোগও। প্রায় দুই দশক আগে বিল বকেয়া থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
সজীব বলেন, “কলেজ থাকাকালে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়নি। আমরা এখন সৌর লাইট দিয়ে রাত পার করি। আগে যারা ছিলেন, তারা মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকতেন।”
ভবনের বাসিন্দা অধিকাংশ কর্মচারীই অস্থায়ী এবং হাজিরাভিত্তিক চাকরিতে নিযুক্ত। স্বল্প বেতন হওয়ায় ইচ্ছা না থাকলেও সেখানে তাদের থাকতে হচ্ছে অনেকটা বাধ্য হয়েই।
তারা জানান, মাসে শুক্র ও শনিবারসহ সরকারি ছুটির কারণে প্রকৃত আয় ১০-১২ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কখনও তা আরও কমে যায়।
অর্থ-হিসাব সহকারী হিসেবে কর্মরত এক কর্মচারী জানান, ঈদ বা বড় ছুটির সময় মাসে মাত্র ৫-৬ হাজার টাকা পান তারা। এ টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে শহরে থাকা সম্ভব নয়।
সমাজকর্ম বিভাগের অফিস সহায়ক কাজী মুহিন বলেন, “খুব অল্প বেতনে চাকরি করি। তাই খরচ কমাতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই থাকছি। প্রশাসন ভবন ছাড়তে বললেও যাওয়ার জায়গা নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী ওমর আলী মাঝি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাদের নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করে, তাহলে উপকার হতো।”
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা দীর্ঘদিনের। আমরা নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। তাদের জন্য কাঠামোগত সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
ন্যূনতম মজুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আইন না দেখে কিছু বলা যাবে না। তবে আমরা সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। বাজেট সীমিত হলেও অস্থায়ী কর্মচারীদের কাঠামোর আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।”
ঢাকা/মেহেদী