ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শহীদ আবু সাঈদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যা বলছেন জুলাই বিপ্লবীরা

বেরোবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১৫ জুলাই ২০২৫  
শহীদ আবু সাঈদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যা বলছেন জুলাই বিপ্লবীরা

শহীদ আবু সাঈদ

‎একদিকে বর্বরতা, অন্যদিকে মুক্তি। দুই বিপরীত চিত্র নিয়েই আসে ২০২৪ সালের জুলাই মাস। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হলেও এতে সীমাবদ্ধ ছিল না; শুরু হয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য গণজাগরণ। ধর্ম, বর্ণ, দল নির্বিশেষে এক হয়ে যায় সবাই।

‎সারাদেশ যখন উত্তাল আন্দোলনে সোচ্চার, তখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে ছিলেন না। ভয়-আতঙ্কের মধ্যেও বুকভরা সাহস নিয়ে তারা রুখে দাঁড়ান। কোনো অপশক্তিই দমাতে পারেনি। জুলাই শুরু থেকে শেষ পযন্ত সবসময় মাঠে ছিলেন তারা।

আরো পড়ুন:

বেরোবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবু সাঈদ। বৈষম্যকে মেনে নিতে পারেননি তিনি। প্রায়ই মিছিলের সামনে কাতারে থাকতেন। ১৬ জুলাই ২০২৪ দুই হাত প্রসারিত করে আত্মোৎসর্গ- এই বিপ্লবকে দিয়েছে দ্বিগুণ গতি ও তেজ।

‎জুলাই বিপ্লবের প্রায় ১ বছর চলছে। জুলাই বিপ্লবের মহানায়ক আবু সাঈদের চেতনা ও জুলাই বিপ্লবের  বাস্তবায়নে আমাদের দায় কতটুকু? বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তা জানার চেষ্টা করেছে রাইজিংবিডি।

‎জুলাই বিপ্লবের অন্যতম সৈনিক আলবীর হোসেন বলেন, “শহীদ আবু সাঈদ ও জুলাই বিপ্লবের চেতনা এখনো প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ হয়নি। এই জুলাই বিপ্লব হয়েছে মূলত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনের মেয়েদের মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ‎কিন্তু আমরা এখনো দেখতে পায় বিভিন্ন জুলুম, নির্যাতন, চাঁদাবাজি হত্যা, দুর্নীতি ও অনিয়মে সয়লাব আমাদের বাংলাদেশ।”

তিনি বলেন, “এখনো বিচার বিভাগ সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো নানা ধরনের অনৈতিকতার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা ফ্যাসিবাদী কাঠামো এখনো রয়ে গেছে।”

‎আরেক বিপ্লবী সৈনিক ফাত্তাহান আলী বলেন, “বৈষম্যহীন সমাজ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতার যে স্বপ্ন আবু সাঈদ দেখিয়েছিলেন, তা এখনো অনেকাংশে অপূর্ণ রয়ে গেছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কিছুটা সচেতনতার উন্মেষ দেখা গেলেও, রাষ্ট্রীয় নীতি ও শাসনব্যবস্থায় সেই চেতনার বাস্তব প্রতিফলন আজো দুর্লভ।”

তিনি বলেন, “২০২৪ সালের প্রেক্ষাপটে আবু সাঈদ কেবল একজন শহীদ নন, তিনি আমাদের সামনে এক সতর্কবার্তা, এক প্রতিচ্ছবি। তিনি আজো আত্মবিশ্লেষণের আয়না হয়ে আছেন; থাকবেন চিরকাল।”

‎বেরোবি ছাত্রনেতা আল আমিন ইসলাম বলেন, “‎শহীদ আবু সাঈদ জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রতীক। অকুতোভয় এ বীরের জন্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গর্বিত। আমার মতো লক্ষ কোটি ছাত্র-জনতার জন্য সাহসের বাতিঘর ছিলেন আমাদের শহীদ আবু সাঈদ। আবু সাঈদ শিখিয়ে দিয়ে গেছেন দেশমাতৃকার জন্য কিভাবে নিজেকে উজাড় করে দিতে হয়।”

তিনি বলেন, “তবে আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার ১ বছর হয়ে গেলেও এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আবু সাঈদ যে স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে নিজের জীবন দিয়েছিলেন, তার সেই স্বপ্ন এখনো বাস্তবায়ন আমরা করতে পারিনি। তার এই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি তাদের মাঝে মাঝেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা আমাদের মনে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। অবিলম্বে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।”

‎বেরোবি ছাত্রনেতা রাকিব মুরাদ বলেন, “ফ্যাসিবাদ ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগ ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সব সংকীর্ণমনতা, অনৈক্য, বিভেদ ভুলে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ ও বৈষম্যের পুরোপুরি মূলোৎপাটন হলেই জুলাই বিপ্লব সফল হবে। একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে জুলাই স্পিরিটকে ধারণ করার বিকল্প নেই।”

ঢাকা/‎সাজ্জাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়