ডেঙ্গুতে শিক্ষার্থীর মৃত্যু: রাবি চিকিৎসা কেন্দ্র হয়ে গেল ‘নাপা সেন্টার’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বুধবার (১৬ জুলাই) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এতে চিকিৎসা কেন্দ্রের অবহেলা ও প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা রাবি চিকিৎসা কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে ‘নাপা সেন্টার’ নামকরণ করে ব্যানার টানিয়ে দেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে চিকিৎসা অবহেলায় এ মৃত্যুর প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন শেষে প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা। তারপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে যান। কেন্দ্রটির নামফলকের উপর তারা ‘নাপা সেন্টার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টানিয়ে দেন।

মৃত শিক্ষার্থীর নাম মৌমিতা জামান। তিনি রাবির বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাসা কুষ্টিয়া জেলায়।

জানা গেছে, গত সোমবার ক্লাস শেষে প্রচণ্ড জ্বর অনুভব করেন। বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল ৯টায় কুষ্টিয়ায় নিজ বাসায় পৌঁছানোর পর প্রচণ্ড বমি হয়। পরে দুপুর ১২টায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মানববন্ধনে বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তন্দ্রা বলেন, “মৌমিতার এই মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার। আমরা তার মৃত্যুর জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রশাসনকে দায়ী করি। কারণ অসুস্থ অবস্থায় সে চিকিৎসা কেন্দ্রে গেলে ডাক্তারকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রশাসন যদি আমাদের চিকিৎসাসহ সব মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে পারত, তাহলে আজ হয়ত মৌমিতার মৃত্যু হত না।”

তিনি বলেন, “স্কয়ার, ইবনে সিনাসহ বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে যাচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু তাতে শিক্ষার্থীদের কী লাভ, তা দেখা যায় না। আমাদের প্রধান দাবি, মৌমিতা হত্যার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে এবং তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। একইসঙ্গে আমাদের সব মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সব ভবন ও হলে পর্যাপ্ত বাথরুমের ব্যবস্থা করতে হবে।”

বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ নাঈম বলেন, “মৌমিতার অকাল মৃত্যু আমাদের জন্য গভীর শোকের ও ক্ষোভের বিষয়। জ্বর নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে গেলেও কোনো চিকিৎসা সে পায়নি। পরে কুষ্টিয়ায় নিয়ে গেলে জানা যায়, সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

তিনি আরো বলেন, “এই মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটি প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও চিকিৎসা অব্যবস্থার ফল। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা চালু করতে হবে, মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আর কোনো মৌমিতার মৃত্যু দেখতে চাই না। সময় এসেছে জবাবদিহিতার।”

দাবির বিষয়ে রাবির ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, “প্রথমেই মৌমিতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মশা নিধন কর্মসূচি ও চিকিৎসা কেন্দ্রের উন্নয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করব। চিকিৎসকরা যেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন এবং ভালো মানের চিকিৎসা দেন, সে ব্যবস্থা করব।”

তিনি আরো বলেন, “তাদের দেওয়া স্মারকলিপিতে যে দাবিদাওয়াগুলো আছে, সেগুলো প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে খুব শীঘ্রই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।”