উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে রাকসু নির্বাচনের প্রচার
রাবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাস এখন উৎসবমুখর।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জমজমাট প্রচারে মুখর অ্যাকাডেমিক ভবন, আবাসিক হল ও আড্ডাস্থল। প্রার্থীরা দলবেঁধে শিক্ষার্থীদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন, করছেন কুশল বিনিময়; হাতে তুলে দিচ্ছেন লিফলেট ও হ্যান্ডবিল।
আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে ভোটগ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চতুর্থ দিনের মতো চলছে এ প্রচার।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরণের আকর্ষণীয় ভিডিও প্রকাশ করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রার্থীরা লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চাইছেন।
বৃহস্পতিবার ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে ও টুকিটাকি চত্বরে প্রচার চালাতে দেখা যায়।
এছাড়াও কৃষি অনুষদ, শহীদ মিনার, টিএসসিসি, চারুকলা অনুষদ, পরিবহন মার্কেট ও জাবির ইবনে হাইহান বিজ্ঞান ভবনের সামনে ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা, বামজোট সমর্থিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ এবং অন্যান্য প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার চালাতে দেখা যায়।
রবীন্দ্র ভবনের সামনে প্রচার চলাকালে কথা হয় সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজার সঙ্গে।
প্রচার কেমন চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নির্বাচনের দুইদিন পরেই পূজার ছুটি থাকায় আমাদের আশঙ্কা ছিল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কেমন হবে। তবে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, সেই শঙ্কা কেটে গেছে। আমরা আশা করছি, এবার প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট কাস্ট হবে। যখন শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি, তখন ছাত্রশিবিরের প্যানেল হিসেবে তারা আমাদের আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হওয়ায় নির্বাচনী আমেজ আরো বেড়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী আমলে কেউ ভোট দিতে পারেনি। তাই অনেকে জীবনের প্রথম ভোট হিসেবে রাকসুতে ভোট দেবেন—এটি আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন। বর্তমানে মাত্র ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসনের সুযোগ পাচ্ছে। আমরা মনে করি রাজনৈতিক কারণে এ সমস্যা রয়ে গেছে। তাই আমাদের প্রথম ম্যান্ডেট হবে পূর্ণাঙ্গ আবাসন নিশ্চিত করা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা।”
গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, “প্রচার শুরুর পর থেকেই আমরা এক অভাবনীয় উৎসবমুখর পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা লিফলেট সাদরে গ্রহণ করছে। তারা আমাদের সংগ্রামকে লক্ষ্য করেছে, চিনছে এবং মূল্যায়ন করবে বলেও আশ্বস্ত করছে। আমরা স্বল্প লোকবল নিয়েই সবসময় শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলেছি, তবে শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রচেষ্টা উপলব্ধি করছে।”
অংশগ্রহণ নিয়ে কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ২১ তারিখ থেকে শুরু হবে, আর ২৫ তারিখেই আমাদের নির্বাচন। এরপরই পূজার ছুটি। এই কারণে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কতটা থাকবে, তা নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা রয়েছে।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী