ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাকসুু ভোট পেছানোয় ক্ষুব্ধ শিবির, স্লোগানে উত্তাল রাতের ক্যাম্পাস

রাজশাহী ও রাবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আপডেট: ২১:০৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের শিবির সমর্থিত সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জানিয়েছেন, রাকসু নির্বাচনের তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত মানি না।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) জরুরি সভা শেষে নির্বাচন কমিশন রাকসু নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

নির্বাচনের তারিখ পেছানোর ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেছেন শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ‘২৫ তারিখ, রাকসু’, ‘১৮ তারিখ রাকসু, মানি না মানব না’, ‘লন্ডনের দালালি, মানি না মানব না’, ‘২৫ তারিখ রাকসু, দিতে হবে দিতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। 

রাকসু নির্বাচনের তারিখ পেছানোর প্রতিক্রিয়ায় মুস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “আমরা অবশ্যই এটা মানব না, বারবার রাকসু নির্বাচন পেছানোর যে অপরাজনীতি চলছে। এ নিয়ে চারবার ডাকসু নির্বাচন পেছানো হলো। তাদের যদি রাকসু দেওয়ার মানসিকতা না থাকে, তাহলে তারা সরাসরি বলে দিক যে আমরা রাকসু নির্বাচন দেব না। কিন্তু বারবার এভাবে পেছানোর দরকার নেই।”

তিনি বলেন, “ছাত্রদল বা একটি গোষ্ঠীকে যদি তারা প্রিভিলেজ দিতে গিয়ে বারবার রাকসু পিছিয়ে বা একসময় গিয়ে যদি বলে আমরা নির্বাচন করব না। এ কথাটা আগে বললেই ভালো হয়। বারবার তারা এভাবে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে।”

তিনি আরো বলেন, “এই প্রশাসনের স্ট্রং কোন ভূমিকা না থাকার কারণে রাকসু হবে কি হবে না সেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে বাসায় চলে গেছে। যে সিন্ডিকেট তাদের ব্যবহার করছে নির্বাচন পেছানোর জন্য, নির্বাচন বানচাল করার জন্য, তাদের ফাঁদে পা দিয়ে দুর্বল ভূমিকা পালন করছে। আমরা পরবর্তীতে কি করব, সে ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।”

এর আগে, রাবিতে কর্মরতদের সন্তানদের ভর্তির জন্য আগে থেকেই ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। এরপর থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দাবি করে একের পর এক আন্দোলন শুরু করেন।

সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে ১৮ তারিখের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে জরুরি অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় ১০ শর্তে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আবার টানা আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মাঈন উদ্দিনসহ প্রশাসনে থাকা তিনজন কর্মকর্তা জুবেরী ভবনে শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হন। পরে জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে সেখানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে থাকেন। রাতে জুবেরী ভবনের সামনে থেকে অবরোধ উঠিয়ে নিয়ে শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হন। পরে গভীর রাতে হল থেকে বের হয়ে এসে ছাত্রীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তারা মাঝরাত পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

পরে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব মধ্যরাতে বাসার প্রধান ফটকের সামনে এসে ঘোষণা দেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তি আপাতত স্থগিত। এ নিয়ে রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার রাতেই কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এদিন তারা ঘোষণা দেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় সন্তানদের ভর্তির সুযোগ না দিলে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে যাচ্ছেন তারা। তবে ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রাকসু নির্বাচন এ কর্মসূচির বাইরে থাকবে।

এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন এবং টানা ছুটির কারণে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি চলে যাচ্ছিলেন।

এ অবস্থায় ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর সোমবার দুপুরে বলেন, “আমি চাই, নির্বাচন হোক পূজার ছুটির পরে।”

সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ, রাকসু ফর র‍্যাডিকাল চেঞ্জ, সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ ও ইউনাইটেড ফর রাইটস প্যানেলের প্রার্থীরা দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মাকেটে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে তারা পোষ্য কোটা ইস্যুতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে না দাবি করে নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবি জানিয়েছেন। এ দাবিতে নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপিও দেয় তারা।

তবে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে জানান, তারা ২৫ সেপ্টেম্বরই নির্বাচন চান।

এই অবস্থায় বিকেলে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশন আলোচনায় বসলে সেখানে অবস্থান নেয় দুই পক্ষ। সন্ধ্যার পর থেকে সেখানে একপক্ষ রাকসু নির্বাচন ২৫ সেপ্টেম্বরেই চেয়ে স্লোগান দেয় এবং অন্যপক্ষ শ্লোগান দেয় ‘প্রহসনের নির্বাচন মানি না, মানব না’ বলে। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়।

আলোচনা শেষে নির্বাচন কমিশন জানায়, রাকসু নির্বাচন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে আগামী ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।
 

ঢাকা/ফাহিম/কেয়া/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়