ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৯ জুন ২০২৫ ||  আষাঢ় ৫ ১৪৩২

নোবিপ্রবির একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হলেন ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’

নোবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ১৫ মে ২০২৫  
নোবিপ্রবির একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হলেন ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’

নোবিপ্রবির অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ মিয়া

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ মিয়া। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে পরিচিত এই অধ্যাপককে কাউন্সিলের সদস্য করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১২ মে) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন বলেন জানা গেছে। ওই সভার আগে দেওয়া এক চিঠিতে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, নোবিপ্রবি উপাচার্যের অনুমোদনক্রমে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ২১(১)(চ) অনুসারে ২ বছরের জন্য অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ মিয়াকে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

সম্প্রতি নিষিদ্ধ সংগঠন নোবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান শুভ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ‘বিশ্ব মোড়লদের কথায় যুদ্ধের প্রক্সি দেশ হতে চলেছে বাংলাদেশ’ শিরোনামের ওই ভিডিওতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘আমেরিকান ডিপ স্টেটের পুতুল’ আখ্যা দিয়ে তাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়।

ভিডিওটির বক্তব্য রাজনৈতিকভাবে উসকানিমূলক, মিথ্যাচারপূর্ণ এবং সুস্পষ্ট অপপ্রচারের শামিল হলেও অধ্যাপক ড. ইউসুফ মিয়া ওই ভিডিও’র নিচে মন্তব্য করে বলেন, “এতো সুন্দর করে অল্প বুঝালে জাহিদ। অভাগা বাঙালিদের বুঝ দাও হে দয়াময় প্রভু।”

এ মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন শিক্ষিত, দায়িত্বশীল অধ্যাপক কিভাবে এমন একটি ভিডিওতে প্রকাশ্যে প্রশংসা করেন, যেখানে রাজনৈতিক বিদ্বেষ, আন্তর্জাতিক অপপ্রচার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভয়াবহ মিথ্যাচার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “একজন শিক্ষক যখন নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠনের উসকানিমূলক কন্টেন্টকে সমর্থন করেন, তখন তার অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ নয়, বরং পুরো শিক্ষাব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতার জন্যই হুমকি।”

অধ্যাপক ইউসুফ মিয়া অতীতেও আওয়ামী তথ্যপ্রযুক্তি লীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করে আসছেন। এতে করে তার মতো বিতর্কিত ব্যক্তিকে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ফ্যাসিস্টের সহযোগী এবং রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যকে যারা উৎসাহিত করে, তাদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা তুলে দেওয়া শুধু দায়িত্বহীনতা নয়, গণবিরোধী অবস্থানও। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন মুখে বললেও তাদের প্রশ্ন, এই বিতর্কিত অধ্যাপককে একাডেমিক কাউন্সিল থেকে বাদ দেওয়া হবে কি? নাকি রাজনৈতিক সুবিধার কারণে সবকিছু ধামাচাপা পড়বে?

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ তামজিদ হোসেইন চৌধুরী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী উপাচার্য মহোদয় সাতজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করতে পারেন। সেই অনুযায়ী অধ্যাপক ইউসুফ মিয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।”

নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তাকে মনোনীত করা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে, যেগুলো ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিতে জমা পড়েছে। অভিযোগগুলো সত্য প্রমাণিত হলে তাকে একাডেমিক কাউন্সিল থেকে বাদ দেওয়া হবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়