ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেট

সংসদ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ৩ জুন ২০২১   আপডেট: ১২:৫৬, ৩ জুন ২০২১
আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেট

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করাসহ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পেশ হচ্ছে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য  ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আহ ম মুস্তফা কামাল তৃতীয়বারের মতো বাজেট উপস্থাপন করবেন।

এবারের বাজেটের স্লোগান ‘জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’।  

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়,  চলতি (২০২০-২০২১) অর্থ বছরের বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সব ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট তৈরি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মতো এবছরও  বাজেটে করপোরেট কর কমানো হচ্ছে। এবারের বাজেটে অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কর্মসংস্থান ও কৃষি সেক্টর। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগে আছে চমক। দরিদ্রদের সুবিধা দিতে বাড়ানো হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা।  

আগামী বাজেটের প্রায় ৬০ ভাগ ব্যয় হবে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে। এর পরিমাণ ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ১৩ হাজার ৩২০ কোটি টাকা এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৩৭ হাজার ৮১২ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে পরিচালনখাতে বরাদ্দ ছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। তবে ব্যয় সংকোচন নীতির অংশ হিসেবে সরকারি চাকরিজীবীদের গাড়ি কেনা নিষিদ্ধ করা, বিদেশ ভ্রমণে বরাদ্দ অর্ধেক কমানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এখাতে ব্যয় কিছুটা কমেছে। সংশোধিত বাজেটে পরিচালন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।

বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি বাজেটে প্রবৃদ্ধির এই হার ধরা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে করোনার কারণে মানুষের আয় কমে গেছে। ফলে মানুষের হাতে টাকার সরবরাহও কমেছে। যার ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয়ই থাকবে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।  

আগামী অর্থবছরের মোট জিডিপির আকার ধরা হচ্ছে ৩৪ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাজেটে সরকারের পরিচালন ব্যয় বা অনুন্নয়ন ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। সে তুলনায় আসছে বছরে পরিচালন ব্যয় বাড়বে  ১৪ হাজার কোটি টাকা। আর আবর্তক ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় ধরা হচ্ছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ধরা হচ্ছে ৬ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।  

আসছে বাজেটে মোট উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে, ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। যা এরইমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের বাজেটে এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপির বাস্তবায় হয়েছে ৩৫ শতাংশেরও কম।

এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।  তবে রাজস্ব আহরণের প্রধান উৎস এনবিআরের লক্ষমাত্রা চলতি অর্থবছরের তুলনায় বাড়ছে না।  এনবিআর বহির্ভূত কর ব্যবস্থা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব- বিভিন্ন সেবা ফি, জরিমানা, টোল, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনগুলোর মুনাফা থেকে বাড়তি অর্থ কোষাগারে নেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে অর্থবিভাগ।

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ১১ হাজার কোটি টাকা বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব লক্ষ‌্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধন করে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অনুদান পাওয়া গেলে ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার ধরা হচ্ছে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪০ কোটি টাকার। চলতি বাজেটে যা ছিল ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এটিকে কমিয়ে ধরা হয় ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

এবিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘দেশের মানুষ ও ব্যবসায়ীদের বাঁচানোর লক্ষ্য নিয়েই আসন্ন ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। আমাদের লক্ষ্যই থাকবে দেশের মানুষকে বাঁচানো, ব্যবসায়ীদের বাঁচানো। সুতরাং সবার স্বার্থ দেখেই আমরা বাজেটটি করছি। আমাদের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষকে সঙ্গে রেখেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বাজেটে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানো। ইনকাম ট্যাক্স, ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স দেওয়ার যোগ্যতা থাকলেও তারা করের আওতায় আসছে না। এসব ব্যক্তিদের করের আওতায় আনতে হবে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য বাড়ানোসহ সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করার কারণে এডিপি সম্পূর্ণ রুপে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কোন একটা প্রকল্প দেশে নেই যার যে খরচ ধরা হয়েছিলো প্রকল্প প্রণয়নের সময় সেটার মধ্যে এটা বাস্তবায়িত হয়েছে। এ সমস্যা দূর করা প্রয়োজন।’

ঢাকা/আসাদ/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়