ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এখন শেয়ারবাজার বড় হতেই থাকবে: শিবলী রুবাইয়াত

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৭, ১৪ জুন ২০২১   আপডেট: ১৩:১০, ১৪ জুন ২০২১

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।  সাহসী, দেশপ্রেমিক ও দূরদর্শী মানুষ হিসেবে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।  এ কমিশনে তার পথচলা এক বছরের কিছু বেশি।  কাজে যোগদানের পর থেকে তার নেতৃত্বে গতি ফিরে পেয়েছে শেয়ারবাজার। শেয়ারবাজার পরিচালনায় গত এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। রাজধানীর আগারগাঁও সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নুরুজ্জামান তানিম।  সঙ্গে ছিলেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজমুল ইসলাম ফারুক।

রাইজিংবিডি: গত এক বছরে কতটুকু উন্নয়ন করতে পেরেছেন? এ সময়ের মধ্যে কী কী চ্যালেঞ্জ ছিল? সফলতা নিয়ে কাজের মধ্যে স্বস্তির কোনো বিষয় আছে বলে মনে করেন কী?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: স্বস্তির বিষয় নেই।  তেমন কোনো অ্যাচিভমেন্ট আসলে হয়নি। বাংলাদেশের এই ইনডেক্স, এই টার্নওভার আরও অনেক ভালো হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তেমন হয়নি।  সে হিসেবে আমরা আসলে কিছুই করতে পারিনি।  তবে বাজার আরও অনেক ভালো হবে বলে আশা করছি।  অর্থনীতি ও রেমিট্যান্সের যে গতি, যে পরিমাণ লিকুইড সারপ্লাস অ্যাসেট বাজারে আছে, আমাদের পাবলিকের মধ্যে যে উৎসাহ রয়েছে, তাতে সবকিছু মিলে আমাদের এখানে আরও অনেক বড় করে কিছু করার সময় এসেছে।

দেশের শেয়ারবাজারের বাজার মূলধন মোট জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ। অন্যান্য দেশের তুলনায় একেবারেই কম। পৃথিবীর উন্নত কোনো কোনো দেশের শেয়ারবাজার জিডিপির শতভাগ শতাংশে অবস্থান করে।  আমি মনে করি, গত এক বছরের অনেক কমই উন্নতি হয়েছে।  আরও অনেক বেশকিছু হওয়ার সুযোগ রয়েছে।  তবে এখন থেকে দেশের শেয়ারবাজার বড় হতেই থাকবে।

তবে গত এক বছরে কাজ করতে গিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে।  তার মধ্যে অন্যতম হলো- তথ্য প্রযুক্তির (আইটি) সক্ষমতার অভাব। এটা আর ম্যানুয়ালি  হ্যান্ডেল করতে পারব না।  কারণ আমরা যখন কাজে যোগদান করি, তখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ১ লাখ ৫০ শেয়ার লেনদেন হতো।  আজ সেই লেনদেন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় পৌনে ৪ লাখের মতো। সামনের দিনে এত বেশি পরিমাণ শেয়ার হ্যান্ডেল করার মতো লোকবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে না। এ কাজটি আইটির ওপর ছেড়ে দিতে হবে। তখন আইটিতে আবকাঠামোগত ব্যাপক বিনিয়োগ ও পরিবর্তন প্রয়োজন হবে।  সেগুলো নিয়ে এখন কাজ হচ্ছে।

এছাড়া করোনাভাইরাস বড় ধরনের একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।  এর কারণে অফিসে জনবলের অনেক ঘাটতি ছিল।  যে কারণে কাজের অনেক ব্যঘাত ঘটেছে।  আমি মনে করি, করোনাকে নিয়ে আমাদের জীবন জীবিকা এগোতে হবে।  এটা না করলে হয়তো আমরা করোনায় মারা যাব না, তবে অর্থনৈতিক দুরবস্থায় অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে সবকিছু ব্যালেন্স করে ভ্যাকসিন নিয়ে, মাস্ক ব্যবহার করে সুস্থ থাকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় আমাদের ফিরতে হবে।  নাহলে সামনের দিনে অর্থনৈতিক যে ধাক্কা আসবে তা সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। তবে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।  তিনি জীবন ও জীবিকা- এ দুটোকে এমনভাবে ব্যালেন্স করে এগিয়েছেন যে, এখন বাংলাদেশের অর্থনীতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে অন্যতম।  সুতরাং এখন আমাদের কাজ করতে হবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

গত এক বছরে কাজ করতে গিয়ে তেমন কোনো চাপের সম্মুখীন হইনি। আমরা সব জায়গা থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি।  আমার প্রধান শক্তি প্রধানমন্ত্রী।  এছাড়া অর্থমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সবাই আমাদের সহযোগিতা করছে।  আর আপনারা (রাইজিংবিডি ডটকম) আমাদের বড় শক্তি, যারা পজিটিভ নিউজ করে করে মানুষদের চাঙা ভাবের মধ্যে রেখেছেন।  তবে যেখানে লাখ বা কোটি টাকা লেনদেন হয়, সেখানে কাজের ক্ষেত্রে টুকটাক ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে থাকতে পারে। সেটাকে আপনাদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে।

আগামী দিনে শেয়ারবাজারে আইটিকে শক্তিশালী করা, যেসব আইন-কানুন আছে তা হালনাগাদ করা, আমাদের যেসব লু-ফলস ছিল, যাতে বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হচ্ছিলেন তা গ্রাজুয়েলি ঠিক করে নিয়ে এসেছি। আমরা বাইব্যাক আইনের জন্য অপেক্ষা না করে এক্সিট পলিসি করে দিয়েছি। অনেক কোম্পানি জনগণের টাকা দিয়ে এক্সিট পলিসি অনুসরণ করছে।

রাইজিংবিডি: প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারে কী প্রতিফলন হয়েছে বলে মনে করেন?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: সরকারের অনেকগুলো বিষয়ে ওপর কমিটমেন্ট থাকে।  আবার ওই কমিটমেন্ট রক্ষার যে সোর্স, সেটা আহরণে অনেক সমস্যা থাকে।  আমরা যদি সরকারের কাছে খালি চাইতেই থাকি, তাহলে তার (সরকার) দেওয়ার মতো তো উৎসও থাকা লাগবে।  বাজেটে আমরা শেয়ারবাজারের জন্য অনেক কিছু চাইতে পারি।  কিন্তু আমরা তো বুঝি যে, করোনার মধ্যে সরকার কিভাবে রাজস্ব আহরণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই এ করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সরকার বাজেটে আমাদের যতটুকু দিতে পেরেছে, তাতে আমরা খুশি। আমি ধারণা করছি, বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রাখতে পারে।  তবে ইথিক্যালি আমিও এটিকে পছন্দ করি না, তবে আমাদের উপায় নেই তো।

দেশে এখন ৩ থেকে ৪ মিলিয়ন (৩০ থেকে ৪০ লাখ) লোক ট্যাক্স দেয়।  দেশে মোট ১৭০ মিলিয়ন (১৭ কোটি) জনগণ। যদি এর অর্ধেক মানুষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হয়, তাহলে বাকিদের আয়তো এখনও অপ্রদর্শিত। এ পরিস্থিতিতে আমরা যদি এ টাকা গ্রহণ না করি, তাহলে তারা এটা টাকা রাখবে কোথায়? যেখানে রাখবে সেখানেই তো এই টাকাটা বেআইনি হবে। সেজন্য আমরা তাদের একটি রাস্তা করে দিতে চাই, যাতে তারা অপ্রদর্শিত অর্থকে বৈধ করে নিতে পারেন।  এভাবেই করতে হবে, তা না হলে বিদেশে টাকা চলে যাচ্ছে।  তাই সবার জন্য এ সুযোগটি রাখা উচিত।

এছাড়া বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর ২.৫০ শতাংশ কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।  বন্ড ও সুকুকে ওপর বিভিন্ন খরচ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।  এগুলো সবই ইতিবাচক।  এবার বাজেটে আমাদের বিপক্ষে কিছুই নেই। সবই পক্ষেই রাখতে চেষ্টা করেছে সরকার, তাহলে আমি কেন বলব না যে, এটা একটা ভালো বাজেট।

রাইজিংবিডি: বাজেটে ওটিসি মার্কেটের প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কথা বলা হয়েছে।  সেটা অবকাঠানো কি ধরনের হবে এবং কবে নাগাদ চালু হতে পারে?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: ওটিসি মার্কেট এমন এক ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা দুষ্ট লোকদের সাহায্য করা হয়েছে।  এখানে গভর্নেন্স কম হচ্ছিল, এখানে জমি-জমা বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছিল, ডিভিডেন্ট দিত না, কমপ্লায়েন্সের কোনো ইস্যু ছিল না।  তাই আমরা ওটিসিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছি।  তার মধ্যে- যাদের ক্যাপিটাল ছোট তাদের স্মল কাপে আসতে পারে। কেউ কেউ মার্কেট থেকে এক্সিট নিয়ে চলে যাবে।  যারা ভালো করছে তারা মূল মার্কেটে চলে আসবে।  আর একটি কোম্পানির সমস্যা রয়েছে, যার বিরুদ্ধে আমাদের মামলায় যেতে হবে। ওটিসির বাকি কোম্পানিগুলোর জন্য আমরা একটি রাস্তা করে দিব। আগামীতে ওটিসি মার্কেটে যেয়ে কোম্পানিগুলোর আর বসে থাকার সুযোগ থাকবে না।  আমরা পারতপক্ষে চেষ্টা করব ওটিসি মার্কেটে আর কোন কোম্পানিকে না রাখতে। এটা বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকর। বরং ওটিসি মার্কেট থাকলে কোম্পানি সুবিধা পায়।

রাইজিংবিডি: শেয়ারবাজারে এসএমই প্ল্যাটফর্ম প্রথম চালু হয়েছে।  এজন্য মূল মার্কেটে লেনদেনে প্রভাব পড়বে কি-না?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: কিছুটা পড়তে পারে।  মূল মার্কেটের কিছু টাকা ওখানে যাবে।  তবে ওই টাকা আমাদের অর্থনীতিতেই তো থাকবে।  আর ওই মার্কেটকেও বড় করার খুব দরকার।  বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে যখনই কেউ কথা বলেন, তখন ক্ষুদ্র ঋণ, এসএমইসহ আরও অনেক বিষয়ে সাফল্যে গাঁথা গল্প আসে। এসএমই থেকেই বাংলাদেশের এ অর্থনীতির বুনিয়াদ গড়ে উঠেছে। সেজন্য আমি মনে করি, এসএমই, ক্ষুদ্রঋণ, কটেজ ইন্ডাস্ট্রি-এগুলোকেই আমাদের প্রমোট করা উচিত। আমাদের শেয়ারবাজারে যদি তাদের জন্য কোনো অপরচুনিটি না থাকে, তাহলে তারা যাবে কোথায়।  ওদের তো পুঁজি দরকার।  তাই আশা করি, এসএমই বোর্ড তাদের জন্য একটি সলিউশন। এটার মাধ্যমে আমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পকে সহায়তা করব।  ইন্টারেস্টিং হলো যে, এখানে কোনো সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ আসবে না। এখানে শুধুমাত্র কোয়ালিফাইড ইনভেস্টরদের বিনিয়োগ আসবে। তাই যদি কোথাও দুই-একটি ধাক্কাও আসে, তাহলে সেটা আমাদের খুবই কষ্টে অর্জিত বা সঞ্চয়ের টাকা ওপর প্রভাব পড়বে না। সুতরাং আমি মনে করি, এটা দেশের উন্নয়নে ওয়ান মাইলস্টোন ফরওয়ার্ড।

রাইজিংবিডি: শেয়ারবাজারে উৎপাদন বন্ধ বা দুর্বল কোম্পানিগুলোকে সচল করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছি কি? যেসব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে তাদের অবস্থা এখন কেমন?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: রিং সাইন টেক্সটাইল উৎপাদনে চলে গেছে।  সেখানে ৩ শিফটে এক-দেড় হাজার শ্রমিক কাজ শুরু করেছে। এমারেল্ড অয়েলে এক বিদেশি বিনিয়োগকারী, তার বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।  শিগগিরই কাজ শুরু হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।  ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফাস ফাইন্যান্স ও ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।  আমি বলব, সেখানে অনেক অপকর্ম হয়েছে। সেগুলোকে ঠিক করার কাজ ধরা হয়েছে। ফৌজদারি কাজও ধরা হয়েছে।  টাকা উঠিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি তাদের নতুন ব্যবসায় সহযোগিতার জন্য কাজ করছি।

কিছু কিছু জায়গায় কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রি-ব্রান্ডিং করতে হবে, সেগুলোও শুরু হচ্ছে।  কারণ ওই নামগুলো এমন ভাবে নষ্ট হয়েছে যে, মানুষ আর সেখানে আসতে চায় না।  সেখানেও কিছু কৌশলগত পরিকল্পনা লাগবে।  সব মিলে সেসব দুর্বল কোম্পানিকে আমরা বিভিন্ন সাহায্য করা চেষ্টা করছি, যাতে বিনিয়োগকারীদের কোনো ক্ষতি না হয়। এর মধ্যে অনেক টেক্সটাইলস কোম্পানি রয়েছে।  তবে একটি কোম্পানি আমাদের বলেছে, আগামী ২ মাসের মধ্যে তারা উৎপাদনে যাবে। আর কয়েকটি গার্মেন্টস ও টেক্সটাইলস কোম্পানি রয়েছে, যারা একটু লুটতরাজ করে দেশের বাইরে চলে গেছে।  সামনের দিনে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

রাইজিংবিডি: শেয়ারহোল্ডারদের কাছে কোম্পানির যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেটা কতটুকু পরিপালন হচ্ছে? আর অভিযোগ আসছে এজিএমে ভোটিং রাইট থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা, এক্ষেত্রে কমিশনের পর্যবেক্ষণ কী?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: দুই দিকেই সমস্যা রয়েছে। আমরা দুই রকমই অভিযোগই পাই। যদি ফিজিক্যালি পদ্ধতিতে এজিএম করা হয়, তখন শুনি যে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের এজিএম পার্টি ঢুকে গিয়ে টাকা-পয়সা নিয়ে সবকিছু পাস করিয়ে দেয়। তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন। আবার যখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে এজিএম করা হয়, তখন শুনি যে, মালিকপক্ষ বিনিয়োগকারীদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করেন বা তাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। এ ধরনের সমস্যার পাশাপাশি রয়েছে করোনাভাইরাস। তাই আমরা হাইব্রিড পদ্ধতি এজিএম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফলে এজিএমে এখন ফিজিক্যালি ও ডিজিটাল-উভয়ভাবেই থাকা যাচ্ছে। তাতে আশা করি দুইদিকের কিছু সমস্যা সমাধান হবে। এখন এজিএম পরিচালনার ক্ষেত্রে স্ক্রটিনাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের কাজ আগের চেয়ে অনেকটা ইমপ্রুভমেন্ট হয়েছে। 

রাইজিংবিডি: ক্রেডিট রেটিং ভালো, তবে লভ্যাংশ দেয় না- এমন অনেক কোম্পানি রয়েছে। এ বিষয়ে কমিশনের পর্যবেক্ষণ কী?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমরা মাত্র এক বছর হলো কাজ করছি।  তবে আমাদের কাজের ধরনটা কি সেই মেসেজটা শেয়ারবাজারের কোম্পানিগুলোর কাছে পৌঁছে গেছে।  কিন্তু আমরা এখনো শতভাগ রেজাল্ট পাইনি। আমরা এখনো দেখতে পাই অনেক কোম্পানি এমনভাবে রিপোর্ট দিয়েছে, যা মিস লিডিং, মিস প্রেজেন্টেশন, রং ইনফর্মেশন এবং অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো আইনের পরিপন্থি। এগুলো দিয়ে আগে মানুষকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করে তাদের টাকা-পয়সা নেওয়া হতো।

আমি মনে করি, যেসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি তাতে সামনের দিনগুলোতে বড় ধরনের জালিয়াতি করার সাহস পাবে না অডিটররা।  মূলত এগুলো বেশি করা হত প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) কোম্পানিগুলোর জন্য। এই মুহূর্তে শক্তিশালী কোম্পানি ছাড়া শেয়ারবাজারে আসা সম্ভব হবে না। সুতরাং এখন ওভাবে মানুষের টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আর নেই।  আশা করি, আমার আগামী এক বছরের মধ্যে অনেক ভালো ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে দেখতে পাবেন। যাদের মূল উদ্দেশ্য হলো- ব্যবসা করা, যারা জনগণকে ভালো কিছু দিতে চায় এবং যাদের ডিভিডেন্ড দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।

আর ভালো রেটিং থাকার পরও যেসব কোম্পানি নামমাত্র লভ্যাংশ দিচ্ছে বা দিচ্ছে না, তাদের মন-মানসিকতা পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি।  তাদের আমারা বেঝাতে চেষ্টা করছি।  তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি।

রাইজিংবিডি: পাওয়ার সেক্টরের কিছু কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে পুঁজির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যেই বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার নামে একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কমিশন কী ভাবছেন?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: সরকার চিন্তা করছে কিভাবে তাদের (কোম্পানি ও বিনিয়োগকারী) সহায়তা করা যায়। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি।  রাকা পতেঙ্গা পাওয়াকে আইপিওর অনুমোদন দিয়েছি।  তবে তাদের শর্ত দিয়েছে, ১৫ শতাংশে নিচে নগদ লভ্যাংশ দিতে পারবে না।  সুতরাং কোম্পানিকে যেহেতু নগদ লভ্যাংশ বেশি দিতে হবে, সেহেতু তাদের ইক্যুইটি লোকসান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। 

রাইজিংবিডি: স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসি কতটুকু ডিজিটালাইজড হয়েছে? 

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: এখনো অনেক দরকার। ডিজিটালাইজেশনের ভিত্তির ধাপ নিয়ে আমরা কাজ করছি। ৬ থেকে ৮ মাস আগেও ভাবা যায়নি যে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পৌনে ৪ লাখ শেয়ারের লেনদেন পরিচালনা করতে পারবে।  কিন্তু সেটা আজ সম্ভব হয়েছে। তাদের ডিজাস্টার রিকোভারি ইউনিট নেই।  সেটার জন্য তারা কাজ করছে।  ইতিমধ্যে তারা টেন্ডার দিয়েছে।  আগে এগুলো বিষয়ে কেউ খেয়াল করেনি। ডিজাস্টর রিকোভারি ইউনিট এছাড়া শেয়ারবাজারের এমন প্রতিষ্ঠান পৃথিবীতে থাকতে পারে, এটা ভাবাও কল্পনাতীত। আর ডিএসইর মোবাইল অ্যাপে সম্পর্কে বিনিয়োগকারীরা আশা করেন যে, ব্যাপক উন্নয়ন দরকার।  যেগুলো কোনোটাই সঠিকভাবে করা হয়নি। তবে এজন্য যেসব ইক্যুইপন্ট কিনতে বা ইমপোর্ট হয়, তার জন্য আরও ৬ থেকে ৯ মাস সময় প্রয়োজন। তাই এই সময়টুকু আমাদের ধৈর্য ধরে থাকতে হবে।  সবমিলিয়ে আশা করা যায় আগামী বছর ভালো কিছু করা সম্ভব হবে।

রাইজিংবিডি: বহুজাতিক ও সরকারি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: কিছু কোম্পানি আসবে। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। আমরা তাদেরকে বোঝাচ্ছি। আগামী এক বছরে বেশকিছু ভালো ভালো ও শক্তিশালী কোম্পানি শেয়ারবাজারে দেখতে পারবেন। আর সরকারি কোম্পানি তো সবগুলো ভালো করছে না। আর সকরকারি কোম্পানিগুলোর এখনও ভ্যালেুয়েশনও শেষ হয়নি।  সুতরাং তারাও আসবে, তবে যেসব কোম্পানি অসলে জনগণের উপকৃত হবে, সেসব কোম্পানি আগে শেয়ারবাজারে আনা হবে।

রাইজিংবিডি: শেয়ার কারসাজি রোধে কমিশন কতটুকু ভূমিকা পালন করছে?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: সিরিয়াস টেডিং, সার্কুলার ট্রেডিং, ইনসাইডার ট্রেডিং- এগুলো সফটওয়্যার বা আমাদের লোক ধরতে পারেন। আমরা যেসব অভিযোগ পাই তা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন।  তবে তাদের ডেকে এনে কথা বলি।  কিন্তু আইনের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে, তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।  প্রায়ই আমরা শাস্তি দিচ্ছি।  এর মধ্যে কেউ শাস্তির টাকা জমা দেয়, আবার কেউ মামলাও করে। আমরা সবকিছুরই সম্মুখীন হচ্ছি। এগুলো ধারাবাহিকভাবে চলছে। তবে কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এমন খবর শুনলে সবাই আতঙ্কিত হয়ে যায়। তখন বিনিয়োগকারীরাও ভাবতে পারেন যে, সাধারণ কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়তে পারি। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভিত্তি দিচ্ছি না, তবে যারা কারসাজি করছে তাদের সাবধান করছি।

তানিম/সাইফ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ