ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাসিক তথ্য চায় বিএসইসি

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ২৭ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ২০:৪৮, ২৭ অক্টোবর ২০২১
ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাসিক তথ্য চায় বিএসইসি

শেয়ারবাজারের তারল্য সংকট দূর করতে প্রত্যেক তফসিলি ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকার ‘বিশেষ তহবিল’ গঠন এবং তা বিনিয়োগের তথ্য জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একইসঙ্গে স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি) ও বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল বা অনুরূপ তহবিলে আরও ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য ব্যাংকগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। বিনিয়োগের এসব তথ্য প্রতি মাসে প্রতিবেদন আকারে পাঠাতে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।

সম্প্রতি সকল তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে (সিইও) এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়াও বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই, সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছে।

দেশে বর্তমানে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ৩১টি ব্যাংক। আর অ-তালিকাভুক্ত রয়েছে ৩০টি ব্যাংক। সকল ব্যাংকের কাছে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

বিএসইসি’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শেয়ারবাজারের তারল্য সংকট দূর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিপূর্বে জারি করা সার্কুলার অনুযায়ী সকল তফসিলি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা করে একটি ‘বিশেষ তহবিল’ গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া নির্দেশনায় আরও ২০০ কোটি টাকা স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি), বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল, বা অনুরূপ তহবিলে বিনিয়োগ করার কথা উল্লেখ রয়েছে। বিশেষ তহবিলের আওতায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা অর্থ ব্যাংকের এক্সপোজার সীমা হিসেবে গণ্য করা হবে না।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিশেষ তহবিল গঠন করা বা গঠনের প্রক্রিয়াধীন থাকা বা বিনিয়োগ শুরু করার জন্য আপনার ব্যাংককে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তবে আপনাদের ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের তথ্য নিয়মিতভাবে না দেওয়ার কারণে বিএসইসি’র কাছে এ সংক্রান্ত কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। তাই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের অবস্থার এবং বিনিয়োগের তথ্য প্রতি মাসে প্রতিবেদন আকারে বিএসইসিতে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি), বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল, বা অনুরূপ তহবিলে প্রতি মাসের বিনিয়োগের তথ্য পরবর্তী মাসের সাত দিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হলো।

তথ্য মতে, ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশে বিশেষ তহবিল গঠন এবং বিনিয়োগের নীতিমালা বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত রেপোর মাধ্যমে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়। তবে চলতি বছরের গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রতিটি তফসিলি ব্যাংকে গঠিত ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মেয়াদ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে তহবিল গঠন এবং বিনিয়োগের নীতিমালা সম্পর্কে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জারি করা নির্দেশনায় আংশিক সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত নির্দেশনা অনুযায়ী, বেসরকারি উদ্যোক্তা কর্তৃক নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিএসইসি’র অনুমোদিত ও স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি) ইস্যুকৃত গ্রিন সুকুক বন্ডে বর্ণিত বিশেষ তহবিল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত পন্থায় তফসিলি ব্যাংকের বিনিয়োগের মেয়াদ ২০২৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

এ ছাড়া নির্দেশনায় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে প্রতিটি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকার ‘বিশেষ তহবিল’ গঠন করার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ তহবিলের আওতায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা অর্থ ব্যাংকের এক্সপোজার হিসেবে গণ্য করা হবে না। ব্যাংকগুলো নিজস্ব অর্থ ছাড়াও ট্রেজারি বিল বা ট্রেজারি বন্ড রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তহবিল গঠন করেছে। এই সুবিধার মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে তা বাড়িয়ে ২০২৮ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে।

এদিকে গত ১১ অক্টোবর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকে ধারাবাহিক পতন লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে গত ২১ অক্টোবর সাত কার্যদিবস পর সূচক উত্থানে ফিরে। তবে পরের কার্যদিবস ২৪ অক্টোবর আবারো সূচকে বড় পতন হয় দেশের উভয় শেয়ারবাজারে। আর সোমবার (২৫ অক্টোবর) আড়াই ঘণ্টার লেনদেন ১৬৪ পয়েন্টের পতন ঘটে। তবে লেনদেন শেষে ডিএসই’র সূচক ১২০ পয়েন্ট পতন হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে ক্যাপিটাল গেইনের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির বেশ চাপ লক্ষ্য করেছে কমিশন। তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের তথ্য জানার অংশ হিসেবে সকল তফসিলি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের তথ্য জানতে চেয়েছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসি’র একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সকল তফসিলি ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছে কি-না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যেসব ব্যাংক ইতিমধ্যে বিশেষ তহবিল থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছে তাদের বিস্তারিত তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।’

ঢাকা/এনটি/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়