ঢাকা     সোমবার   ২৪ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ১১ ১৪৩১

রাজস্ব বাড়াতে বড় পরিকল্পনা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫  
রাজস্ব বাড়াতে বড় পরিকল্পনা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবন

দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে কমতে পারে বৈদেশিক সহায়তা। বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হতে পারে। এরই আলোকে আগামী তিন অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ২০ লাখ ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের(এনবিআর) আওতায় আদায়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ১৮ লাখ ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। 

রাজস্ব আদায় বাড়াতে এই বড় পরিকল্পনার তথ্য জানা গেছে অর্থ বিভাগ ও এনবিআর সূত্রে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি এক প্রাক্কলনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে রাজস্ব খাত থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর থেকে আসবে ৫ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে এনবিআর থেকে আসবে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর থেকে আদায়ের পরিকল্পনা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

এদিকে, বাজেট পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিবছর বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে মূল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সেটি অর্জন করা তো দূরের কথা, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্জন করা সম্ভব হয় না। গত আট অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি। আর এই ধরনের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে একধরনের ‘সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ( আইআরডি)’।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সম্পাদিত বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে আইআরডি।

কাক্ষিতমাত্রায় কর আদায়ে মোটা দাগে চারটি সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে আইআরডি। এগুলো হচ্ছে—কর পরিসর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জরিপ কার্যক্রমে পদ্ধতিগত সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতা; আন্তঃকর ব্যবস্থাপনায় তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা; দক্ষ জনবলের স্বল্পতা ও ভৌত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদির অভাব।
অন্যদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর মতে, সংস্থাটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জনবল স্বল্পতা ও প্রশিক্ষিত জনবলের অপ্রতুলতা।
আইআরডি’র তথ্যমতে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৩৫০ কোটি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

এনবিআরের সাময়িক তথ্য মতে, গত অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসাবে মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব কম আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।

একইভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়, ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু বছর শেষে তাও আদায় করা সম্ভব হয়নি। সে বছর রাজস্ব আদায় হয়েছিল মাত্র ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। একইভাবে ২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও পরে তা সংশোধন করে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বছর শেষে সেটিও  আদায় করা সম্ভব হয়নি।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেওয়া ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময় এসে দেখা যায় কোনোভাবেই এই টার্গেট অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে না। ফলে টার্গেট থেকে ১৬ হাজার ২১০ কোটি টাকা কাটছাঁট করে সংশোধিত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারে কাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এনবিআর খাতে রাজস্ব আদায়ের প্রকৃত পরিসংখ্যান হচ্ছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা; যা কিনা সংশোধিত রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা কম।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়